ঝাড়গ্রাম নতুন জেলা হলে পশ্চিম মেদিনীপুর একটি নতুন মহকুমা পেতে পারে, সেটি বেলদা। কাল, সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জেলা সফরের আগে এমনই কথা চলছে প্রশাসনিক মহলে। জেলা প্রশাসনের এক সূত্রের দাবি, নারায়ণগড়ের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী এ ব্যাপারে কিছু ঘোষণাও করতে পারেন।
পশ্চিম মেদিনীপুরের সবথেকে বড় মহকুমা খড়্গপুর। ১০টি ব্লক রয়েছে এখানে। সাধারণত, একটি মহকুমায় এত সংখ্যক ব্লক থাকে না। ফলে, খড়্গপুর মহকুমা ভেঙে পৃথক বেলদা মহকুমা হতে পারে। নতুন মহকুমায় ৫-৬টি ব্লক থাকতে পারে। জেলার সব থেকে বড় ব্লক নারায়ণগড়। এখানে ১৬টি অঞ্চল রয়েছে। সেই ক্ষেত্রে নারায়ণগড় ব্লক ভেঙে পৃথক বেলদা ব্লকও হতে পারে। অবশ্য প্রশাসনিক কর্তারা এ প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে নারাজ। জেলার এক প্রশাসনিক কর্তার কথায়, “নতুন কিছু হতে পারে। কী হবে সেই ব্যাপারে এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়। মুখ্যমন্ত্রী সঠিক সময়ই সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন।”
সে ভাবে মুখ খুলছেন না শাসক দলের নেতারাও। জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি তথা নারায়ণগড়ের বিধায়ক প্রদ্যোত ঘোষ বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে কিছু জানি না!’’
তবে বেলদাকে মহকুমা হিসেবে ঘোষণা করার দাবি যে রয়েছে তা মানছেন তৃণমূলের নারায়ণগড় ব্লক সভাপতি মিহির চন্দ। দলের এক সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বেশ কিছু আর্জি জানাতে পারেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তারমধ্যে এই আর্জিও থাকার কথা। এ ব্যাপারে দলের মধ্যে আলোচনাও হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী কি বেলদাকে মহকুমা হিসেবে ঘোষণা করতে পারেন? মিহিরবাবুর জবাব, ‘‘নেত্রী সব ব্লকের খোঁজখবর রাখেন। ফলে, ওঁকে কিছু বলতে হয় না।” বেলদাকে মহকুমা করার দাবি তো বিভিন্ন মহল থেকে উঠেছে? এ বার মিহিরবাবুর জবাব, ‘‘এটা ভাবনাচিন্তার জায়গায় রয়েছে। সময় মতো সঠিক সিদ্ধান্ত নিশ্চয়ই হবে।”
এই প্রস্তাবে সায় রয়েছে বিরোধীদেরও। সিপিএমের বেলদা জোনাল কমিটির সম্পাদক তথা নারায়ণগড় পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি মদন বসু বলেন, ‘‘বেলদা মহকুমা হলে তো ভালই হবে।’’ এরপর তাঁর সংযোজন, ‘‘বেলদাকে মহকুমা করা নিয়ে আগে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছিল। তবে সুপারিশ যায়নি। বেলদাকে পুরসভা করার ব্যাপারে সুপারিশ গিয়েছিল। পরে সেই প্রক্রিয়া শুরুও হয়।’’
বেলদাকে পুরসভা করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল বাম আমলে। তা অনেকটাই এগিয়েছে। প্রশাসনিকস্তরে পুরসভা চালু করার প্রক্রিয়া চলছে। মহকুমা হলে এলাকার উন্নয়নের গতি আরও ত্বরান্বিত হবে বলেই মনে করছে বিভিন্ন মহল।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর দ্বিতীয় ইনিংস পশ্চিম মেদিনীপুর দিয়েই শুরু করতে চলেছেন। এ বার ভোটপ্রচারে নারায়ণগড়ে এসে দলের প্রার্থী প্রদ্যোত ঘোষকে জেতানোর আর্জি জানিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘যদি সূর্যবাবুকে হারাতে পারেন তবে প্রথম সভা করব নারায়ণগড়ে।’ কথা রাখছেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, কাল, সোমবার মকরামপুরে প্রশাসনিক সভা হবে। সেখানে বেশ কিছু প্রকল্পের কথা ঘোষণা করতে পারেন তিনি। পরদিন ঝাড়গ্রামে প্রশাসনিক বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী। এই সফরেই বেলদা মহকুমার স্বীকৃতি পেতে পারে বলে জল্পনা শুরু হয়েছে।
খড়্গপুর মহকুমার অধীন ১০টি ব্লক হল— খড়্গপুর-১, খড়্গপুর-২, পিংলা, সবং, ডেবরা, দাঁতন-১, দাঁতন-২, মোহনপুর, কেশিয়াড়ি এবং নারায়ণগড়। অনেকের ধারণা, দাঁতন ১ ও ২, মোহনপুর, এবং নারায়ণগড় ব্লক নতুন মহকুমায় থাকতে পারে।
এখন খড়্গপুর মহকুমায় রয়েছে মোহনপুর ব্লক। সেখান থেকে খড়্গপুরের দূরত্ব ৮৫ কিলোমিটার। মেদিনীপুরের দূরত্ব ১০২ কিলোমিটার। পৃথক মহকুমা হলে বেলদাতেই বিভিন্ন অফিস হবে। মোহনপুর, দাঁতন প্রভৃতি এলাকার মানুষকে আর কাজের জন্য দীর্ঘ সময় ব্যয় করে খড়্গপুরে পৌঁছতে হবে না। মহকুমা হলে এলাকার প্রভূত উন্নতিও ঘটবে। নারায়ণগড় ব্লকে ১৬টি অঞ্চল রয়েছে। বসবাস প্রায় ৩ লক্ষ মানুষের। থানা অবশ্য দু’টি। বেলদা এবং নারায়ণগড়। এই সূত্রেই বেলদা পৃথক মহকুমা হলে নারায়ণগড় ব্লক ভেঙে পৃথক বেলদা ব্লকও হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy