Advertisement
E-Paper

উজ্জ্বল জোট, রক্তাক্ত সিপিএমের পাশে মানসও

একেই বলে সময়ের দাবি! ক’দিন আগেও যে সিপিএমের সঙ্গে জোটের বিরোধিতা করছিলেন কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া, এ বার তিনিই তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত সিপিএম নেতা-কর্মীদের দেখতে সটান হাসপাতালে হাজির। দোষীদের শাস্তি চেয়ে পুলিশের সঙ্গে কথাও বলেছেন প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি মানসবাবু।

বরুণ দে ও দেবমাল্য বাগচী

শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০০:২৭
মেদিনীপুর মেডিক্যালে জখম সিপিএম নেতা অমলেশ বসু। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

মেদিনীপুর মেডিক্যালে জখম সিপিএম নেতা অমলেশ বসু। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

একেই বলে সময়ের দাবি!

ক’দিন আগেও যে সিপিএমের সঙ্গে জোটের বিরোধিতা করছিলেন কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া, এ বার তিনিই তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত সিপিএম নেতা-কর্মীদের দেখতে সটান হাসপাতালে হাজির। দোষীদের শাস্তি চেয়ে পুলিশের সঙ্গে কথাও বলেছেন প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি মানসবাবু। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এ দিনই বাম কংগ্রেস জোট-সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সবংয়ের বিষ্ণুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের লহরিচকে সিপিএমের কর্মিসভায় তৃণমূলের লোকজন হামলা চালায় বলে অভিযোগ। সব মিলিয়ে জখম হন ৬ জন। লাঠির ঘায়ে মাথায় চোট পান সিপিএম জেলা কমিটির সদস্য অমলেশ বসু, হাতে আঘাত লাগে সিপিএমের সবং জোনাল সম্পাদক চন্দন গুছাইতের। প্রথমে তাঁদের সবং গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে প্রবীণ নেতা অমলেশবাবুকে মেদিনীপুর মেডিক্যালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।

সবং থেকে কলকাতায় যাওয়ার পথেই সিপিএমের উপর হামলার খবর পান মানসবাবু। পাঁশকুড়া থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে তিনি সোজা চলে আসেন সবং হাসপাতালে। দেখা করেন জখম সিপিএম নেতা-কর্মীদের সঙ্গে। পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলকে ঠেকাতে বাম-কংগ্রেসে জোটের দাবি উঠেছে দুই শিবিরের অন্দরেই। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী-সহ রাজ্য কংগ্রেসের বেশিরভাগ নেতা জোটের পক্ষপাতী হলেও গোড়া থেকে সিপিএমের হাত ধরতে নিমরাজি ছিলেন মানসবাবু। উল্টে ভোটে একা লড়াইয়ের পক্ষে সওয়াল করছিলেন। দিল্লিতে গিয়েও নিজের মত জানিয়েছেন সবংয়ের বিধায়ক। সেই মানসবাবুই আক্রান্ত সিপিএম নেতা-কর্মীদের পাশে দাঁড়ানোয় জল্পনা শুরু হয়েছে, তবে কি প্রবীণ এই কংগ্রেস নেতা সময়ের চাহিদাটা শেষমেশ বুঝলেন?

মানসবাবু অবশ্য বলছেন, ‘‘এর সঙ্গে জোটের কোনও সম্পর্ক নেই। পথে শুনলাম বিষ্ণুপুরে সিপিএমের কর্মিসভায় না কি তৃণমূল হামলা চালিয়েছে। আমি এলাকার বিধায়ক। তা ছাড়া, সিপিএমের বর্ষীয়ান নেতা অমলেশ বসু আমার দূর সম্পর্কের আত্মীয়। তাই ওঁদের সঙ্গে দেখা করলাম।” পরক্ষণেই মানসবাবুর সংযোজন, ‘‘সিপিএম এক সময় অত্যাচার চালিয়েছে। এখন তৃণমূল রাজনৈতিক ভাবে অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে। সবং জুড়ে কংগ্রেস কর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন। এ বার সিপিএমও আক্রান্ত হল।” সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক তরুণ রায়েরও বক্তব্য, ‘‘এর সঙ্গে জোটের সম্পর্ক নেই।’’ তবে মানসবাবু সবং হাসপাতালে আসায় তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তরুণবাবু। তাঁর মতে, ‘‘যাঁরা গণতন্ত্রে আস্থাশীল, তাঁরা এমন কাজ করবেন স্বাভাবিক।’’ সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য তথা দলের সবং জোনাল কমিটির
প্রাক্তন সম্পাদক অমলেশবাবুও হাসপাতালে আসার জন্য মানসবাবুকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

বস্তুত, এ দিন সিপিএমের তরফে জোটের বার্তা এক রকম স্পষ্ট। গণতান্ত্রিক সব শক্তিকে এক জোট হওয়ার আহ্বান জানাতে চলেছে দল। জোট প্রসঙ্গে সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণ রায় বলেন, “দলের অবস্থানের কথা শুনেছি। দেখা যাক কী হয়।” দলের এক জেলা নেতা অবশ্য মানছেন, “আমরা তো শুরু থেকেই চাইছি, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি একজোট হয়ে নির্বাচনে লড়ুক। মানুষ তৃণমূলকে আর চাইছে না। বল এখন কংগ্রেসের কোর্টে।” কংগ্রেসের জেলা সভাপতি বিকাশ ভুঁইয়া বলেন, “আমরা আগেও যা বলেছি। এখনও তাই বলছি। হাইকমান্ড যা সিদ্ধান্ত নেবে, জেলা কংগ্রেস তাকেই মান্যতা দেবে।” দলের এক জেলা নেতার কথায়, “তৃণমূলের বিরুদ্ধে মানুষের জোট হয়েই গিয়েছে!”

গত কয়েক বছরে পশ্চিম মেদিনীপুরে বামেদের জনসমর্থন ব্যাপক হারে কমেছে। দলের একটা বড় অংশই মনে করে, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হলে জনসমর্থন বাড়বে। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জেলায় বামেদের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৪৪ শতাংশ। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েতে কমে হয় ৩৪ শতাংশ। আর ২০১৪ সালের লোকসভায় তা আরও কমে হয় ২৯ শতাংশ। জনসমর্থনে যে এ ভাবে ধস নামতে পারে, তা বুঝে উঠতে পারেননি সিপিএমের জেলা শীর্ষ নেতৃত্বও। পশ্চিম মেদিনীপুরে ১৯টি বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে। দলেরই এক সূত্রে খবর, গত লোকসভা নিরিখে সবক’টি কেন্দ্রেই বামেদের ভোট কমেছে। গত লোকসভার নিরিখে জেলায় বামেদের প্রাপ্ত ভোট ২৯ শতাংশ। তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট ৫১ শতাংশ। বিজেপির ১০ শতাংশ। কংগ্রেসের ৭ শতাংশ।

সিপিএমের এক সূত্রের অবশ্য দাবি, ২০১৪ সালের পরিস্থিতি এখন জেলায় নেই। ২০১৬ সালের নির্বাচনে খুব সহজেই বামেরা ৩৫-৩৬ শতাংশ ভোট পেতে পারে। সংগঠনকে আগের অবস্থায় ফেরাতে এই সময়ের মধ্যে নানা পদক্ষেপও করা হয়েছে। ওই সূত্রের বক্তব্য, এই ৩৫-৩৬ শতাংশ ভোটের সঙ্গে কংগ্রেসের ভোট যোগ হলে তৃণমূল হাতেগোনা কয়েকটি আসন পেতে পারে! তাছাড়া, লোকসভার মতো বিজেপি হাওয়াও এখন আর নেই।

জোট হলে কি বিজেপির চিন্তা বাড়বে? বিজেপির জেলা সভাপতি ধীমান কোলের জবাব, ‘‘আমরা ওদের নিয়ে এতটুকু চিন্তিত নই! সিপিএম- কংগ্রেসের বন্ধুত্ব মানুষ মানবে না! এ সব সুবিধাবাদী জোট!” তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়েরও কটাক্ষ, “জোটঘোঁট করে তৃণমূলকে কিছু করা যাবে না! মানুষ তৃণমূলের সঙ্গে ছিল। তৃণমূলের সঙ্গেই রয়েছে।” শাসক দলের এক নেতা অবশ্য আড়ালে মানছেন, “বিরোধী শক্তি শক্তিশালী হলে ভাবনা থেকেই যায়!”

এ দিন সবংয়ের বিষ্ণুপুর পঞ্চায়েতের লহরিচক গ্রামে সিপিএমের অঞ্চল কর্মিসভা চলছিল। বেলা ১২টা নাগাদ তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান গুরুপদ মান্নার নেতৃত্বে জনা পনেরো দলীয় কর্মী সেখানে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। সিপিএম নেতা-কর্মীদের লাঠি দিয়ে মারধর করা হয়। কর্মিসভা বন্ধ করতে বলা হয়। সিপিএমের সবং জোনাল সম্পাদক চন্দনবাবুর কথায়, “তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান গুরুপদ মান্নার লোকজন আমাদের বেধড়ক মেরেছে। ভয় পেয়েই এ সব করছে তৃণমূল।” এ দিন জখমদের মধ্যে অমলেশবাবু, চন্দনবাবু ছাড়াও আছেন সিপিএমের লোকাল কমিটির সম্পাদক মুকুন্দ দাস অধিকারী, জোনাল সদস্য গয়া বর্মন, হিমাংশু মাইতি।

তৃণমূল হামলার কথা মানছে না। অভিযুক্ত পঞ্চায়েত প্রধান গুরুপদবাবুর দাবি, “আমি তখন পঞ্চায়েতের কাজ করছিলাম। এ সব কিছু জানি না।” ব্লকের তৃণমূল নেতা অমূল্য মাইতির আবার পাল্টা অভিযোগ, “সিপিএমের লোকেরা বিষ্ণুপুর পূর্ব বাঁধে আমাদের কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছে। সেখানে আমাদের চার জন জখমও হন। অথচ সিপিএম কর্মিসভার কিছু চেয়ার উল্টে নাটক করছে।” পুলিশ জানিয়েছে, দু’পক্ষের অভিযোগই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ManasBhunia CPM hospital
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy