Advertisement
০১ মে ২০২৪
‘অস্বস্তি’ তৃণমূলে
Nandigram

বিজেপির মঞ্চে নন্দীগ্রামের শহিদ পরিবার

বৃহস্পতিবার নন্দীগ্রামে শহিদ দিবস পালনেও শুভেন্দু বনাম তৃণমূলের টক্কর!

বিজেপির সভায় শহিদদের পরিবার। শুক্রবার নন্দীগ্রামে। নিজস্ব চিত্র।

বিজেপির সভায় শহিদদের পরিবার। শুক্রবার নন্দীগ্রামে। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নন্দীগ্রাম শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২১ ০২:১৪
Share: Save:

২০০৭ সালে নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলন। তারপরে কেটে গিয়েছে এক দশক। অথচ এ বারও বিধানসভা ভোটের মুখে সেই নন্দীগ্রামই রাজ্য রাজনীতির ভরকেন্দ্র হয়ে উঠতে চলেছে।

জমি আন্দোলনের কৃতিত্ব কার তা নিয়ে দড়ি টানাটানি শুরু হয়েছে কিছুদিন ধরে। বৃহস্পতিবার নন্দীগ্রামে শহিদ দিবস পালনেও শুভেন্দু বনাম তৃণমূলের টক্কর! দেখলেন নন্দীগ্রামের মানুষ। তবে শুক্রবার জমি আন্দোলন পর্বে শহিদ এবং নিখোঁজদের পরিবারের একটা বড় অংশকে দেখা গেল বিজেপির কর্মসূচিতে। এদিন নন্দীগ্রামের স্টেট ব্য়াঙ্ক সংলগ্ন মাঠে সভার মূল উদ্যোক্তা ছিলেন প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক ও বর্তমান বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। এদিন বিজেপির যোগদান মেলা মঞ্চের সামনের সারিতে বসেছিলেন জমি আন্দোলনে গুলিতে মৃত ছোট্ট সানিয়ার বাবা। ২০১০ সালে দীপাবলির পরের দিন ভোরে গুলিতে মারা যায় সানিয়া (৭)। তার বাবার দাবি, ‘‘সিপিএমের গুলিতে মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। গুলিবিদ্ধ স্ত্রীর চিকিৎসার যাবতীয় খরচ বহন করেছিলেন শুভেন্দু। তারপর প্রতি মাসে আমাদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করেছেন। তাই শুভেন্দুর পাশে থাকতে চাই।’’ তাঁর পাশেই বসেছিলেন সিপিএমের ‘অপারেশন সূর্যোদয়’-এ নিখোঁজ প্রাক্তন সেনাকর্মী আদিত্য বেরার স্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘সেদিন বিপদের সময় দাদার সঙ্গে ছিলাম। আজও তাঁর পাশেই থাকতে চাই।’’ আর এক শহিদ পরিবারের সদস্য পলাশ গিরি বলেন, ‘‘জমি আন্দোলন পর্বে নিহতদের পরিবারকে সরকারি চাকরি দেবে বলে মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত কিছুই হয়নি। বরং শুভেন্দুবাবু যথাসাধ্য আমাদের পাশে থাকার চেষ্টা করেন।’’

এদিন বিজেপির সভা শুরুর বেশ কিছুক্ষণ আগে থেকেই মূলমঞ্চের পাশে পৃথক একটি মঞ্চে বসেছিলেন শহিদ এবং নিখোঁজদের পরিবারের লোকজন। সভা চলাকালীন বিজেপি নেতা শুভেন্দু দাবি করেন, ‘‘৪১ জন শহিদের মধ্যে ৩০ জনের পরিবারের লোকেরা এ দিন উপস্থিত হয়েছেন।’’ শহিদদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন রাজ্যে বিজেপির পর্যবেক্ষকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কৈলাস বিজয়বর্গীয়। শহিদ ও নিখোঁজদের পরিবারের লোকেদের এ দিন সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

২০০৭ সালের ১৪ মার্চ জমি রক্ষার আন্দোলন চলাকালীন পুলিশের গুলিতে ১৪ জন আন্দোলনকারী প্রাণ হারান। আহত বেশ কয়েকজন পরবর্তীকালে মারা গিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে নন্দীগ্রামে ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। জমি আন্দোলনের পর ২০০৮ সালে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদ দখল করে তৃণমূল। ২০১১ সালে বামেদের হটিয়ে রাজ্যে ক্ষমতায় আসে তারা। তারপর থেকে রাজ্য রাজনীতিতে নন্দীগ্রাম আন্দোলন যেমন গুরুত্ব বাড়িয়েছে, তেমনি নন্দীগ্রামের রাজনীতিরও কেন্দ্রবিন্দু এই সব শহিদ পরিবার। বরাবর তাঁরা তৃণমূলের পাশেই থেকেছেন। সে সময় কখনও লোকসভার সাংসদ, কখনও এলাকার বিধায়ক ছিলেন শুভেন্দু। তাল কাটতে শুরু করে ২০২০ সালের শেষ নাগাদ। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন শুভেন্দু। সেই শুভেন্দুর হাত ধরে জমি আন্দোলন পর্বে শহিদ পরিবারের বিজেপির মঞ্চে উপস্থিত থাকা নিয়ে শাসকদল যথেষ্ট অস্বস্তিতে পড়বে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

যদিও এ সব বিষয়কে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল। শহিদ পরিবারের লোকেদের বিজেপির যোগদান মেলায় হাজির থাকার প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতা ও জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি শেখ সুফিয়ান বলেন, ‘‘চণ্ডীপুর এবং হেঁড়িয়া থেকে লোকেদের ধরে এনে শহিদ পরিবারের সদস্য বলে সাজানো হয়েছে। শহিদ পরিবার সর্বদা নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রয়েছেন। শুভেন্দুর এদিনের সভা পুরোপুরি ফ্লপ। যোগদান মেলায় কেউ যোগদান করেনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nandigram BJP TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE