E-Paper

২০ বছর নিখোঁজ, প্রৌঢ়া চিনলেন বাবাকেই

কেন তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন? এ ভাবে বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল তাঁর? কারণ স্পষ্ট নয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:৪১
ছেলের সঙ্গে মানোয়ারা।

ছেলের সঙ্গে মানোয়ারা। নিজস্ব চিত্র।

মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর বাড়ি বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলায়। বাড়ির লোকজন বিস্তর খোঁজাখুঁজি করেও তাঁর সন্ধান পাচ্ছিলেন না। কুড়ি বছর পর বাড়ি ফিরে গেলেন সেই মানোয়ারা খাতুন। এই সময়ের মধ্যে তিনি থেকেছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের একাধিক হোমে।

পেট্রাপোল সীমান্তে ভারত- বাংলাদেশ, দুই দেশের কর্তাদের উপস্থিতিতে তাঁকে তাঁর পরিবারের লোকেদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। সীমান্তে তাঁকে নিতে এসেছিলেন তাঁর বাবা-সহ পরিজনেরা। বছর তেতাল্লিশের মানোয়ারা ফিরে গিয়েছেন তাঁর বাড়ি। বছর ছয়েক হল, খড়্গপুরের প্রবুদ্ধ ভারতীর হোমে ছিলেন ওই মহিলা। তার আগে মেদিনীপুরের এক হোমেও ছিলেন তিনি। খড়্গপুরের ওই হোমের সুপার অনু চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘উনি (মানোয়ারা) ঘরে ফিরেছেন। খুব ভাল লাগছে।’’

২০০৩ সালে নিখোঁজ হন মানোয়ারা। তখন তাঁর বয়স ছিল তেইশ। তাঁর দুই ছেলে, এক মেয়ে রয়েছে। তাঁর বাড়ি বাংলাদেশের নেত্রকোনার জেলার বিশমপুরে। তাঁর ওই নাম-ঠিকানা অবশ্য বছর খানেক আগে জানতে পারে এ জেলার প্রশাসন। এর আগে এ নিয়ে তারা ছিল অন্ধকারেই। হোমে ওই মহিলাকে বান বিবি বলেই ডাকা হত। শুরুতে ওই মহিলা জানিয়েছিলেন, তাঁর নাম বান। পরে জানা গিয়েছে, এটি তাঁর ডাকনাম। তাঁর বাড়ি কোথায়, তা-ও শুরুতে জানাতে পারেননি তিনি। শুধু জানিয়েছিলেন, তাঁর বাড়ি বাংলাদেশে। ওই মহিলা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। সেই সূত্রে ভবঘুরে হন। হোম সূত্রে খবর, পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা থেকে তাঁকে উদ্ধার করা হয়েছিল। এরপর তাঁর ঠাঁই হয়েছিল হোমে। তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়েছিল। ক’বছর আগে খানিক সুস্থ হন তিনি। খানিক সুস্থ হয়ে তিনিই জানিয়েছিলেন, তাঁর বাড়ি বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলায়।

কী ভাবে সন্ধান মিলল তাঁর বাড়ির ঠিকানার? হোম সুপার অনু জানান, তাঁর দুঃসম্পর্কের এক আত্মীয় বাংলাদেশে থাকেন। বছর খানেক আগে তিনি ওই মহিলার ছবি তাঁকে পাঠিয়েছিলেন। ওই আত্মীয় ছবিটি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। এরপরই ওই মহিলার পরিজনেরা তাঁর ওই আত্মীয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে হোমের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ভিডিয়ো কলে কথা বলানো হয়। হোম সূত্রে খবর, ভিডিয়ো কলে কথা বলার সময় পরিবারের অন্যদের চিনতেই পারেননি মানোয়ারা। বাবাকে চিনতে তিনি এতটুকুও সময় নেননি। এরপরই মানোয়ারাকে তাঁর বাড়ি ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। একে একে সবকিছু যাচাই করা শুরু হয়। প্রশাসনিক প্রক্রিয়া এগোয়।

কেন তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন? এ ভাবে বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল তাঁর? কারণ স্পষ্ট নয়। ওই মহিলার পরিবারের লোকেদের সঙ্গে কথা বলে হোম কর্তৃপক্ষ প্রাথমিকভাবে জেনেছেন, ওই মহিলার বাপের বাড়ি আর্থিক ভাবে অনেকটাই স্বচ্ছল। কিন্তু তাঁর শ্বশুরবাড়ির আর্থিক স্বচ্ছলতা তেমন ছিল না। পরিবারের লোকেরা হোম কর্তৃপক্ষের কাছে মেনেছেন, এক সময়ে তাঁরা মানোয়ারাকে খোঁজাও বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এই সময়ের মধ্যে অবশ্য চিকিৎসায় সাড়া দিয়েছেন ওই মহিলা। হোম সুপার বলছিলেন, ‘‘চিকিৎসা চলেছে। এখন অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছেন উনি।’’ জানা গিয়েছে, দু’দিন আগেই পেট্রাপোল সীমান্তে ভারত- বাংলাদেশ, দুই দেশের কর্তাদের উপস্থিতিতে তাঁকে তাঁর পরিবারের লোকেদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তাঁকে নিতে এসেছিলেন তাঁর বাবা, তাঁর এক ছেলেও। মানোয়ারার পরিজনেরা হোম কর্তৃপক্ষকে শুনিয়েছেন, ‘‘নিজেরা অনেক খুঁজেও ওঁকে পাইনি। আপনাদের মাধ্যমে খোঁজ মিলেছে। চিরকৃতজ্ঞ থাকলাম।’’ সীমান্তে পৌঁছে খানিক ভাবলেশহীন ছিলেন মানোয়ারা। হয়তো তাঁর মনে পড়ে যাচ্ছিল ফেলে যাওয়া দিনের কথা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

midnapore

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy