অশান্তি ঠেকাতে গোলবাজারে বিশাল পুলিশ বাহিনী। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
নিজের জন্মদিনের অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি থেকে হাসিমুখেই বেরিয়েছিল বছর আঠারোর ছেলেটা। গিয়েছিল বোনের বান্ধবীকে বাড়ি পৌঁছে দিতে। তারপর আর বাড়ি ফেরা হল না খড়্গপুরের গোলবাজারের টাট্টর পাড়ার রোহিত তাঁতির। দুষ্কৃতীদের বেধড়ক মারে জন্মদিনটাই মৃত্যুদিন হয়ে গেল তরতাজা এই তরুণের।
রোহিতের জন্মদিন উপলক্ষে রবিবার সন্ধেয় বাড়িতেই অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছিল। আত্মীয় থেকে বন্ধুবান্ধব এসেছিল সকলেই। রাতে অনুষ্ঠান শেষে বোনের বান্ধবীকে খরিদায় বাড়ি পৌঁছে দিতে বাইক নিয়ে বেরোয় রোহিত। সঙ্গে ছিল সম্পর্কে রোহিতের মামা বছর দশেকের শ্রবণ সোনকার। অভিযোগ, খরিদা থেকে ফেরার পথে গোলবাজার সমবায়ের সামনে রোহিতের বাইকের সঙ্গে অন্য এক যুবকের বাইকের ধাক্কা লেগে যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ধাক্কা কেন লাগল, তা নিয়ে রোহিতের সঙ্গে ওই যুবকের বচসা বাধে। বচসা ক্রমে হাতাহাতিতে গড়ায়। গোলমালের খবর পেয়ে এলাকায় জড়়ো হয় ওই যুবকের পরিচিত আরও কয়েকজন। তারা সকলে মিলে রোহিতকে বেধড়ক মারধর করে বলে অভিযোগ।
রোহিতের মামা শ্রবণের অভিযোগ, ‘‘ওরা আমাকে মারধর করলে আমি কোনওমতে পালিয়ে আসি। বাড়ি থেকে সবাইকে ডেকে নিয়ে যাই।’’ শ্রবণরা পৌঁছনোর আগে হামলাকারী যুবকেরাই রিকশায় চাপিয়ে রোহিতকে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যায়। তবে ততক্ষণে মৃত্যু হয়েছে রোহিতের। পরে চারজনের নামে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন রোহিতের বাবা রমেশ তাঁতি।
ঘটনার খবর ছড়াতেই রবিবার রাতে দোষীদের শাস্তির দাবিতে গোলবাজারের একাধিক দোকানে ভাঙচুর চালানো হয়। কয়েকটি দোকানে আগুনও লাগিয়ে দেওয়া হয়। বিশাল পুলিশ বাহিনী এলাকায় গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ছেলের এ ভাবে চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না রমেশবাবু। তিনি বলেন, ‘‘জন্মদিনে এ ভাবে ছেলেকে হারাতে হবে ভাবতে পারিনি। ছেলেকে কয়েকজন পিটিয়ে মেরে ফেলল। যারা আমার সর্বনাশ করল তাদের উপযুক্ত শাস্তি চাই।’’ রোহিতের মা রীতাদেবীও বলছেন, ‘‘ছেলেকে যারা আমার কোল থেকে কেড়ে নিল আমি তাদের শাস্তি চাই।”
ঘটনায় ৩জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আরও কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। তবে মূল অভিযুক্ত এখনও অধরা। তাকে ধরতে তল্লাশি চলছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক গুপ্ত বলেন, “মোটরসাইকেলে ঠোকাঠুকি লেগে যাওয়ায় বচসা বাধে। মারপিটও হয়। তাতেই কোনওভাবে আহত হয়ে ওই তরুণের মৃত্যু হয়েছে।’’ তাঁর আশ্বাস, ‘‘এমন ঘটনায় জড়িতরা কেউ রেহাই পাবে না। আমরা ইতিমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেফতার ও আটক করেছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy