এমনই ফ্লেক্সে ছয়লাপ হবে গ্রামাঞ্চল। নিজস্ব চিত্র
তালিকায় নাম ছিল। বাস্তবে হদিস নেই রাস্তার! পশ্চিম মেদিনীপুরে এমন রাস্তার সংখ্যা ২৮টি বলে প্রশাসনের এক সূত্রে খবর। বাস্তবে না থেকেও কী ভাবে রাস্তার নাম তালিকাভুক্ত হয়েছিল, তা নিয়ে একাধিক মহলে রহস্যও চরমে! জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি তথা তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুরের কো- অর্ডিনেটর অজিত মাইতি অবশ্য এ নিয়ে মন্তব্যে নারাজ। অজিতের কথায়, ‘‘বিষয়টি জানি না। না জেনে কিছু বলতে পারব না।’’ ‘রাস্তাশ্রী’র শিলান্যাস ঘিরে জেলায় যে প্রচারাভিযানের পরিকল্পনা রয়েছে, সে কথা অবশ্য মানছেন তিনি।
সব ঠিক থাকলে ২৮ মার্চ ‘রাস্তাশ্রী’ প্রকল্পের কাজের শিলান্যাস হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় ভাবে এই শিলান্যাস করতে পারেন। জেলা ভার্চুয়ালি থাকবে। কেন্দ্রীয় ভাবে হলেও শিলান্যাস নিয়ে পঞ্চায়েত থেকে ব্লক, মহকুমা, জেলা- সর্বত্র প্রচারের কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে এই প্রকল্পে চার শতাধিক রাস্তার কাজ হওয়ার কথা। জেলায় ২১১টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে। পঞ্চায়েত পিছু গড়ে দু’টি করে রাস্তা হওয়ার কথা। প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, রাস্তার ওই তালিকা রাজ্য থেকেই জেলায় পাঠানো হয়েছিল। এরপরই ‘রাস্তাশ্রী’ প্রকল্পের রাস্তা নিয়ে তৎপরতা শুরু হয় জেলায়। তড়িঘড়ি ওই তালিকা ধরে একে একে সমস্ত রাস্তা পরিদর্শন করা হয়। দেখা হয়, কোন রাস্তার কী অবস্থা, তৈরি করতে কিংবা সংস্কার করতে কত টাকা খরচ হতে পারে। পরিদর্শন শেষে রাজ্যে রিপোর্ট পাঠানো হয়। জানা যাচ্ছে, পরিদর্শনের সময় তালিকাভুক্ত কিছু রাস্তার হদিস মেলেনি।
‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচি চলছে। একাধিক মহলের অনুমান, ওই কর্মসূচিতে শামিল ‘দিদির দূত’- দের মাধ্যমে ওই সব রাস্তার নামধাম রাজ্যে গিয়ে থাকতে পারে। এ সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না যে, একাংশ ‘দিদির দূত’ এলাকায় না গিয়েই স্থানীয় কারও মাধ্যমে রাস্তার নামধাম সংগ্রহ করে থাকতে পারেন। জানা যাচ্ছে, প্রথম পর্যায়ে জেলায় ৪৩৯টি রাস্তার নামধাম এসেছিল। পরিদর্শনে ৪২৩টি রাস্তার হদিস মিলেছে। বাকি ১৬টি রাস্তার খোঁজ মেলেনি। ওই ৪৩৯টির মধ্যে জেলা পরিষদের করার কথা ছিল ৩০টির। ২টির খোঁজ মেলেনি। ব্লক প্রশাসনের করার কথা ছিল ৩৬২টির। ৯টির হদিস মেলেনি। ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট রুরাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির (ডব্লুবিএসআরডিএ) করার কথা ছিল ৪৭টির। ৫টির হদিস মেলেনি। দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ৫১টি রাস্তার নামধাম এসেছিল। ৩৯টির হদিস মিলেছে। বাকি ১২টি নিরুদ্দেশ। ওই ৩৯টির মধ্যে জেলা পরিষদের করার কথা ছিল ১৬টির। ১১টি হবে। ৫টির হদিস মেলেনি। ডব্লুবিএসআরডিএ- এর করার কথা ছিল ৩০টির। ৭টির হদিস মেলেনি। ‘রাস্তাশ্রী’র শিলান্যাস ঘিরে জেলার সব গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হোর্ডিং, ফ্লেক্স দেওয়া হবে। পঞ্চায়েতে দেওয়া ফ্লেক্সে রাস্তার নাম, গ্রামের নাম, রাস্তা সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্যের উল্লেখ থাকার কথা। জেলা থেকে কেন্দ্রীয় ভাবে ৬০টি অস্থায়ী হোর্ডিং, ১৫টি স্থায়ী হোর্ডিং লাগানোর কথা। প্রতিটি পঞ্চায়েতে দশটি করে ফ্লেক্স থাকার কথা। একাধিক মহলের অনুমান, পঞ্চায়েত ভোটের কথা মাথায় রেখেই শিলান্যাস ঘিরে এই প্রচারাভিযানের পরিকল্পনা। গ্রাম পঞ্চায়েতস্তরে শিলান্যাস অনুষ্ঠানে অন্তত ৫০০ লোকের সমাগম নিশ্চিত করার কথা জানানো হয়েছে। ৫০ শতাংশ মহিলা যাতে জমায়েতে থাকেন, তা-ও নিশ্চিত করার কথা জানানো হয়েছে।
বিজেপির রাজ্য নেতা তুষার মুখোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘‘এ তো মেগা প্রচার! জনগণের টাকা নয়ছয় হবে। আদতে রাস্তার কাজ কতটা হবে সংশয়!’’ তৃণমূলের জেলা কো- অর্ডিনেটর অজিতের পাল্টা, ‘‘আসলে বিজেপির লোকেরা ভাল কিছু দেখতে পায় না। জেলায় রাস্তাঘাটের কতটা উন্নয়ন হচ্ছে, মানুষ দেখছেন।’’ কী ভাবে প্রচার হবে, সে নিয়ে নির্দেশিকা এসেছে জেলায়। ২৮ মার্চ থেকে শুরু হবে ট্যাবলো প্রচারও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy