এ বছরই পিকনিকের জায়গা হিসেবে বিশেষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বনবিষ্ণুপুরের ‘সানসেট ভিউ পয়েন্ট’। তার সাক্ষী থাকল বছরের শেষ দিনটাও— উপচে পড়ল ভিড়। সে জন্যেই এ বার সেখানে তাঁবুর ব্যবস্থা করল হলদিয়া পুরসভা।
বড়দিন প্রায় ৩০ হাজার মানুষ গিয়েছিলেন ভিউ পয়েন্টে। বালুঘাটা বনবিভাগের অধীনে ১৭০ হেক্টর জমিতে কয়েক লক্ষ ঝাউ গাছ রয়েছে এখানে। আর রয়েছে কাঁকড়া আর বাইনের ম্যানগ্রোভ জঙ্গল। ঝাউ আর আর ম্যানগ্রোভের মাঝেই হলদি নদীর তীরে পশ্চিম দিকে মুখ করে রয়েছে একটি গ্যালারি। একসঙ্গে বসে সূর্যাস্ত দেখতে পারেন পাঁচশো মানুষ। সে সময়ে পাখিরা দল বেঁধে হলদি নদীর জল ছুঁয়ে ফেরে জঙ্গলে। সূর্যাস্ত এবং পাখিই এখানকার মূল আকর্ষণ। হলদিয়া বালুঘাটা বনবিভাগের বিট অফিসার প্রকাশকুমার মাইতি জানান, “আকর্ষণের তালিকায় রয়েছে কাঁকড়া ও পাইন গাছ।” আরও পর্যটক টানতে ভিউ পয়েন্টে পাতা হয়েছে রাত্রিবাসের সুসজ্জিত তাঁবু।
জানা গিয়েছে, জানুয়ারি মাস জুড়েই থাকবে এই তাঁবুগুলি। তাঁবু সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে বায়ো টয়লেট। তাঁবুতে এক রাতের ভাড়া ৩ হাজার টাকা। শুধু দিনের বেলায় থাকলে ভাড়া ২ হাজার টাকা। এ দিন এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, তাঁবুর পাশেই রান্নার বন্দোবস্ত হয়েছে। পরিবারের সঙ্গে পিকনিক করতে আসা তানিয়া বিশ্বাস, সুতনু জানা-রা জানান, নদী, ঝাউ, ম্যানগ্রোভ মিলিয়ে পরিবেশ খুবই মনোরম। হলদিয়ার পুরপ্রধান শ্যামল আদক বলেন, “ভিউ পয়েন্টকে আকর্ষণীয় করে সাজানো হচ্ছে। মানুষ এখানে এসে যাতে সব পরিষেবা পান, তার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। বনবিষ্ণুপুর এলাকাটি ২০ নম্বর ওয়ার্ডের অধীন। স্থানীয় কাউন্সিলর গোপালচন্দ্র দাস আবার জানান, “একটি চিত্রনির্মাতা সংস্থা জায়গাটি দেখে গিয়েছে। চুনামারা খালা বরাবর এলাকা সাজানোর কাজেও আগ্রহী তারা।” ভিউ পয়েন্টের দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন পুর আধিকারিক বাঁকি বিল্লাহ। তাঁর কথায়, “পর্যটকেরা যাতে নদীর আরও কাছে পৌঁছতে পারেন, সে জন্য আমরা দু’টি কাঠের সেতু নির্মাণ করছি। এর ফলে ভবিষ্যতে আরও কাছ থেকে নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন সকলে।” পর্যটকদের রাত্রিবাসের কথা ভেবে পরিবেশবান্ধব কাঠের ঘর বানানোরও পরিকল্পনা নিয়েছে পুরসভা।
বনবিষ্ণুপুরে পৌঁছনোও সহজ। ৪১ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে এলে ব্রজলালচকে নেমে টোটো বা বাস ধরে পৌঁছনো যায় এখানে। হলদিয়া সিটি সেন্টার থেকে বাসে করে ১০ মিনিটে পৌঁছে যাওয়া যায়। পুরসভার এগজিকিউটিভ অফিসার জগদ্বন্ধু দাসের দাবি, ঝকঝকে রাস্তার পাশাপাশি পর্যটকদের জন্য সর্বক্ষণের বিশেষ নিরাপত্তারক্ষীরা রয়েছেন পুরসভার তরফে।
যদিও বনভোজন করতে এসে অনেকেই প্লাস্টিক-সহ অন্যান্য জঞ্জাল ফেলে দূষণ ছড়াচ্ছেন। গাছ কাটার অভিযোগও উঠছে। কাউন্সিলর গোপালবাবু অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, কমিটি গড়ে গাছ রক্ষা করা হবে।