বংশীবদন মাহাতো। নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূলের দখলে থাকা বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বংশীবদন মাহাতোর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনলেন দলেরই সদস্যরা। সোমবার ঝাড়গ্রাম মহকুমাশাসকের দফতরে অনাস্থার চিঠি জমা দিয়েছেন পঞ্চায়েত সমিতির ১৭ জন তৃণমূল সদস্য।
বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির মোট সদস্য ২৯ জন। বিরোধী তিন সদস্যের মধ্যে ২ জন সিপিএম এবং এক জন কংগ্রেসের। বাদবাকি তৃণমূলের ২৬ জন সদস্যের মধ্যে ১৭ জন অনাস্থার চিঠিতে সই করেছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সহকারি সভানেত্রী রাহালা হাঁসদা। রয়েছেন ছয় কর্মাধ্যক্ষও। সভাপতি বংশীবদন মাহাতোর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপোষণ ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনেছেন তাঁরা। এ দিন অবশ্য মহকুমাশাসক নকুলচন্দ্র মাহাতো প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিতে মেদিনীপুরে গিয়েছিলেন। মহকুমাশাসক না থাকায় তাঁর দফতরের প্রাপ্তিস্বীকার বিভাগে চিঠিটি জমা দেওয়া হয়।
২০১৩-র পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হিসেবে বংশীবাবুর নাম অনুমোদন করেছিল দল। কিন্তু ওই সময় দলের একাংশ বংশীবদনবাবুকে সভাপতি হিসেবে মেনে নিতে রাজি হননি। তৃণমূল সূত্রের খবর, ওই সময় শীর্ষ নেতৃত্বের চাপে তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী শেষ পর্যন্ত চুপ করে গিয়েছিল। মুকুল রায়ের অনুগামী হিসেবে পরিচিত বংশীবদনবাবুকে বছর দু’য়েক আগে বেলপাহাড়ি ব্লক তৃণমূলের সভাপতির দায়িত্বও দেওয়া হয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বংশীবদনবাবু মাওবাদীদের নিশানায় থাকায় তাঁকে আটজন সশস্ত্র নিরাপত্তা রক্ষী দেওয়া হয়েছে। গত কয়েক বছরে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ভাবে বংশীবদনবাবুর ক্ষমতা যথেষ্ট বেড়ে গিয়েছে। শাসকদলের বংশী-বিরোধী গোষ্ঠীর বক্তব্য, দলের কাজে ও উন্নয়নের কাজে স্থানীয় কারও সঙ্গে আলোচনা না করেই বংশীবাবু একতরফা কাজকর্ম করছেন। এ ব্যাপারে দলের অন্দরে শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে একাধিকবার অভিযোগও করেছেন স্থানীয় তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর নেতা-কর্মীরা। কিন্তু তাতেও বিশেষ কাজ হয়নি। বিনপুর বিধানসভা আসনে পছন্দের প্রার্থী খগেন্দ্রনাথ হেমব্রমকে বিপুল ভোটে জেতানোর পরে দলে বংশীবাবুর গুরুত্ব আরও বেড়ে গিয়েছে। উন্নয়নের ভাগাভাগি নিয়ে বংশীবাবুর সঙ্গে দলের স্থানীয় একাংশের মধ্যে বিরোধ ছিল। সম্প্রতি সেই বিরোধ চরমে পৌঁছেছে।
বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সহকারি সভানেত্রী রাহালা হাঁসদা-সহ বিক্ষুব্ধ সদস্যরা একযোগে সরাসরি বংশীবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, “উনি উন্নয়নের নামে ঠিকাদার-রাজ চালাচ্ছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। স্বেচ্ছাচার, স্বজপোষণ ও চরম দুর্নীতি করছেন। জনমানসে সরকারের ভাবমূতি নষ্ট করছেন। অন্য সদস্যদের মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে উনি একতরফা ভাবে পঞ্চায়েত সমিতি চালাচ্ছেন।”
পঞ্চায়েত সমিতির অর্ধেকের বেশি দলীয় সদস্য অনাস্থা প্রস্তাব আনায় অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছেন খোদ বংশীবাবু। এ প্রসঙ্গে একাধিক বার ফোনে প্রশ্ন করা হলে, বংশীবাবুর জবাব, “আমি বৈঠকে ব্যস্ত রয়েছি। পরে আপনাকে ফোন করে সব বলছি।” যদিও পরে আর ফোন করেননি বংশীবাবু। ফোনও ধরেননি।
পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা আনতে হলে সরাসরি মহকুমাশাসককে চিঠি দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে বংশীবাবুর উদ্দেশ্যে লেখা চিঠির প্রতিলিপি মহকুমাশাসকের দফতরে জমা দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ সদস্যরা। মহকুমাশাসক নকুলচন্দ্র মাহাতো বলেন, “আমি ওই চিঠির প্রতিলিপি পেয়েছি।” অভিজ্ঞ প্রশাসনিক কর্তারা বলছেন, অনাস্থা-জ্ঞাপনকারীরা যেহেতু সভাপতিকে লেখা চিঠির প্রতিলিপি জমা দিয়েছেন, সেক্ষেত্রে মহকুমাশাসকে পঞ্চয়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের আইন মেনে পদক্ষেপ করতে হবে। অনাস্থা সংক্রান্ত পঞ্চায়েতের নিয়ম অনুযায়ী, প্রশাসন তলবিসভা ডাকলে সেখানে অনাস্থার পক্ষে ও বিপক্ষে মতামত নেওয়া হয়। অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে স্বাক্ষরকারী সদস্যরা সবাই সহমত হলে সভাপতির পদ থেকে বংশীবাবুকে সরতে হবে।
এ দিনের ঘটনা প্রসঙ্গে ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণমন্ত্রী চূড়ামণি মাহাতো বলেন, “আমি কলকাতায় আছি। খোঁজ নিচ্ছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy