Advertisement
E-Paper

রাতে ভরসা কুপির আলো

সকাল সকাল ভোট দিলেও সন্ধে হলেই আঁধারে ডোবে খড়্গপুরের রেল এলাকার বস্তিগুলি!

দেবমাল্য বাগচী

শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৬ ০৬:৫৪
আলো জ্বলেনি। তাই প়ড়তে ভরসা হ্যারিকেনই। খড়্গপুরের আরপিএফ কলোনিতে। — নিজস্ব চিত্র।

আলো জ্বলেনি। তাই প়ড়তে ভরসা হ্যারিকেনই। খড়্গপুরের আরপিএফ কলোনিতে। — নিজস্ব চিত্র।

সকাল সকাল ভোট দিলেও সন্ধে হলেই আঁধারে ডোবে খড়্গপুরের রেল এলাকার বস্তিগুলি!

ভোট আসে, ভোট যায়। অভিযোগ, ভোটের সময় বস্তিতে আলোর ব্যবস্থা-সহ পুর পরিষেবার উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির ফোয়ারা ছোটে। কিন্তু রেল-পুরসভার টানাপড়েনে আজও আলো জ্বলেনি বস্তি এলাকায়। সম্প্রতি রেল কর্তৃপক্ষ বস্তি এলাকায় উন্নয়নের দায় নিতে অস্বীকার করায় হতাশা বেড়েছে বস্তির বাসিন্দাদের।

রেল কারখানা গড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই খড়্গপুর শহরের বেড়ে ওঠা। ক্রমে শহর বড় হয়েছে, আর পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বস্তির আয়তনও। খড়্গপুরের রেলকর্মীদের আবাসনের গা-ঘেঁষে গড়ে ওঠা ওই বস্তিগুলি ‘শেড’ নামে পরিচিত। নিমপুরা বাজার বস্তি, বোরিং বস্তি, সুপার মার্টেক বস্তি, চায়না টাউন, শান্তি নগর, পাঁচপীর, আয়মা ধোবিঘাট-সহ শহরের প্রায় ৩০টি বস্তি এলাকায় কয়েক হাজার মানুষ বাস করেন।

২০১০ সালে এলাকা পুনর্বিন্যাসের দরুন খড়্গপুরের রেল এলাকা পুরসভার অধীনে আসে। তারপরে ছ’বছর কেটে গিয়েছে। কিন্তু বস্তি এলাকায় আজও পুর পরিষেবা তলানিতে বলে দাবি স্থানীয়দের। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত ২০ বছর ধরে বিদ্যুতের জন্য তাদের লড়াই চলছে। প্রতিবার তারা শহরের অন্য বাসিন্দাদের মতোই ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। যদিও তাদের পরিষেবা প্রাপ্তির ঝুলি শূন্য।

রেল এলাকার বস্তিগুলিতে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে ২০১৩ সালে এগিয়ে আসে খড়্গপুর পুরসভার তৎকালীন কংগ্রেস পুরবোর্ড। ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কাজও শুরু করে দফতর। কাজ এগোয় প্রায় ১৩টি বস্তিতে। যদিও রেলের বাধায় বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ বন্ধ হয়ে যায় বলে অভিযোগ। তারপরে আর কাজ এগোয়নি।

প্রতিবারের মতো সম্প্রতি শেষ হওয়া বিধানসভা ভোটেও প্রচারে ওই বস্তি এলাকাগুলির উন্নয়ন নিয়ে নানা প্রতিশ্রুতি শোনা গিয়েছিল। ভোটের প্রচারে শহরে এসে কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভুও জানিয়ে দেন, রেলবস্তির উন্নয়ন করতে তাঁরা প্রস্তুত। যদিও দিন কয়েক আগেই সাংবাদিক বৈঠক করে রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, রেলের জমিতে অবৈধ ভাবে গড়ে ওঠা বস্তির উন্নয়নের দায় রেলের নয়। এ বার বিধানসভা ভোটে খড়্গপুর সদর কেন্দ্রে জয়ী হয়েছেন বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ। কেন্দ্রেও এনডিএ সরকার ক্ষমতায় থাকায় তৃণমূল পরিচালিত খড়্গপুর পুরসভাও বস্তি এলাকার উন্নয়নের দায় ঠেলছে বিজেপির দিকেই। সম্প্রতি পুরসভার বোর্ড মিটিংয়েও বিজেপির কাউন্সিলর সুখরাজ কৌর ও অনুশ্রী বেহেরাকে বিজেপি বিধায়কের সঙ্গে পুরসভার সমন্বয় বজায় রেখে রেল এলাকার উন্নয়নের ভার দেওয়া হয়েছে।

চায়না টাউনের বাসিন্দা পোলা রাও, মথুরাকাটি বস্তির বাসিন্দা কে গণেশ বলেন, “আমরা তো প্রতিবার ভোটের আগে শুনি বিদ্যুৎ পাব। কিন্তু এত দিনেও কিছু হয়নি। গত বার রেলমন্ত্রী শহরে এসে আমাদের বস্তির উন্নয়ন করবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু শহরে বিজেপি জয়ী হওয়ার পরেও এখনও তেমন কিছু চোখে পড়েনি।’’ তাঁদের দাবি, ‘‘প্রাথমিক ভাবে আমাদের বিদ্যুৎ প্রয়োজন। পুরপ্রধান ও বিধায়ক অন্তত এইটুকু ব্যবস্থা করুন।”

এ বিষয়ে খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার বলেন, “জেলা সফরে এসেও মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন কোনও এলাকা বিদ্যুৎহীন থাকবে না। এ ক্ষেত্রে রেল এলাকায় কী হবে তা নিয়ে আমরা প্রশ্ন করেছিলাম। উনি বিষয়টি নিয়ে রেলের সঙ্গে কথা বলতে বলেছেন।’’ প্রদীপবাবু আরও বলেন, ‘‘রেল কর্তৃপক্ষ বলেছেন, রেলবস্তির উন্নয়ন সম্ভব নয়। শহরের মানুষ যাকে বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত করেছেন তিনিও এ বিষয়ে নজর দিন।” খড়্গপুরের বিধায়ক তথা বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, “রেলবস্তি ও রেল এলাকায় থাকা বাজার আঁধারে ডুবে থাকতে পারে না। আমি এ বিষয়ে ইতিমধ্যেই উদ্যোগী হয়েছি।’’ তিনি বলেন, ‘‘রেলমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। আসলে রেলমন্ত্রক নয়, খড়্গপুরের কয়েকজন রেল আধিকারিক না জেনেই এক-এক সময় বিভিন্ন নিয়ম বের করছেন। আমার আশা, আগামী ছ’মাসের মধ্যেই রেলমন্ত্রী খড়্গপুরে এসে এ বিষয়ে পদক্ষেপ করবেন।”

electricity distress
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy