২০১৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর। রাতে ঘাটাল শহরের আলামগঞ্জে দুষ্কৃতীদের ছোঁড়া গুলিতে প্রণব সরেন(২৬) নামে ঘাটাল থানার এক হোমগার্ডের মৃত্যু হয়েছিল। প্রণববাবুর বাড়ি ঝাড়গ্রামের জামবনি থানার হাতিকাদুয়া গ্রামে। ওই রাতে আরও তিন জন পুলিশ কর্মী দুষ্কৃতীদের হাতে মার খেয়ে আহতও হয়েছিলেন।
সেই ঘটনার পর প্রায় দেড় বছর হতে চলল। এখনও দুষ্কৃতীদের গুলিতে মৃত পুলিশ কর্মীর কিনারা করতে পারল না পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ! প্রাক্তন জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ দাবি করেছিলেন, ‘‘ওই ঘটনায় বহু দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” কিন্তু জেলা পুলিশেরই একটি সূত্রের খবর, ওই ঘটনায় এখনও কোনও দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার দূরের কথা একজন আটকও হয়নি। ফলে ক্ষোভ আরও বাড়ছে পুলিশের অন্দরেই।
ক্ষোভ মৃত প্রণব সরেনের পারিবেরও। প্রণববাবুর বাবা লাসাই সরেন বলেন, “আমি এখনও নিয়মিত যোগাযোগ রাখি জেলা পুলিশের সঙ্গে। ছেলেকে যারা মেরে ফেলল তাদের কেউ গ্রেফতার হল কি না- জানার জন্য। আমি চাই দ্রুত ছেলের খুনিরা ধরা পড়ুক।” একই বক্তব্য মৃতের মা পানমণী সরেনেরও। তাঁর আক্ষেপ, “ছেলের টাকায় সংসার চলত। ছেলেটাও অকালে চলে গেল। কাজের সময় ছেলের মৃত্যু হলেও চাকরি দুরের কথা, এখনও প্রাপ্য টাকাও পায়নি!” প্রণব বাবুর এক আত্মীয় সুনীল মাহাতো বলেন, “প্রণবের একটি বোন আছে। কলেজে পড়ছে। যদি তার চাকরিটাও হয় তা হলে সংসারটা অন্তত বাঁচবে।”
ঠিক কী হয়েছিল ওই রাতে? পুলিশ সূত্রের খবর, ওই রাতে তিনটি বাইকে করে ঘাটাল থানার তৎকালীন ওসি সুদীপ ঘোষালের নেতৃত্বে ছয় পুলিশ কর্মী শহরে টহলদারিতে বেরিয়েছিলেন। থানা থেকে বেরিয়ে শহরেরই আলমগঞ্জের কাছে আসতেই ঘটনাটি ঘটে। থানা থেকে আধ কিলোমিটারেরও কম দুরত্বে আলামগঞ্জ এলাকায় সিপিএমের লোকাল কমিটির অফিসের ঠিক উল্টোদিকে দুষ্কৃতীদের দেখে তাদের জেরা শুরু করে পুলিশ। দুষ্কৃতীদের হাতে ছিল মোটা বাঁশ। ছিল কাঁধে একটি করে ব্যাগও। সবাই লুঙ্গি পরেছিল। ধূসর এবং কালো রঙের কাপড় মাথায় বাঁধা ছিল। জেরা করতেই শুরু হয় বেধড়ক মার। তার পরই চলে গুলি। পুলিশের কাছে বন্দুক ছিল দাবিও করা হয়েছিল। কিন্তু দুষ্কৃতীরা গুলি চালালেও পুলিশ ওই সময় গুলি চালায়নি।
কিন্তু সেদিনের ঘটনা নিয়ে পুলিশের মধ্যেই রয়ে গিয়েছে বেশ কিছু ধন্দ। সূত্রের খবর, দুষ্কৃতীদের কাছে বাঁশ এবং পিস্তল থাকায় দুইই ছিল। পুলিশের একাংশের প্রশ্ন,কী উদ্দেশ ছিল দুষ্কৃতীদের।যদি ডাকাতির ছকই ছিল-তাহলে পিস্তল থাকা সত্ত্বেও কেন বাঁশ ছিল।কারন,যাদের হাতে পিস্তল রয়েছে-তাদের নিশ্চই তালা খোলার বা ভাঙার আধুনিক যন্ত্রও ছিল।এছাড়াও যে রাস্তা ধরে দুষ্কৃতীরা এসেছিল-সেই রাস্তায় গভীর রাত পযর্ন্ত লোকের যাতায়াত থাকে। এলাকাটি জনবহুল বটে।গোটা রাস্তাতেই আলো জ্বলে।এই সব নানান প্রশ্ন পুলিশের মধ্যে এখনও ঘুরপাক খাচ্ছে। যদিও এখনও সরকারি ভাবে পুলিশ ডাকাতির উদ্দেশে ই দুষ্কৃতীদের ছিল বলে পুলিশের দাবি।মামলাও শুরু হয়েছে ওই ভাবেই।কিন্তু ওই মামলা এখনও চলছে। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে,ততই ঘটনাটি পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তাদের কাছে ফিকে হয়ে যাচ্ছে বলে পুলিশের একাংশের অভিযোগ।
পুলিশের একটি সূত্রের খবর, ঘটনার পর পরই গোটা ঘাটাল মহকুমায় পুলিশের নাকা চলছিল। শতাধিক পুলিশ বাহিনী ক’দিন জুড়ে ঘাটাল শহরে টহলও দিয়েছিল। তারপরই যে কে সেই। ়
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ আধিকারিকের সাফ বক্তব্য, “ ঘটনার পর মাস খানেক ধরে এই ঘটনাটি নিয়ে বেশ কিছু এলাকায় তল্লাশি ছাড়া আর কিছুই হয়নি। এখন তো বড় বাবুরা বিষয়টা ভুলেই গিয়েছেন।’’
দীর্ঘশ্বাস প্রণবের পরিবারেরও!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy