Advertisement
E-Paper

টিফিনের পরই অর্ধেক ক্লাস ফাঁকা

এক মাস, দু’মাস নয়। আড়াই বছরেরও বেশি। স্কুলে পড়তে এসে মিল ডে মিল পাচ্ছে না ৫৫০জন পড়ুয়া। পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুর-১ ব্লকের তফসিল এলাকা ভুক্ত আবাসবেড়িয়া স্কুলের পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়াদের অবস্থা এমনই।

সুব্রত গুহ

শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৪৩
প্রথম পিরিয়ডে ক্লাসে রয়েছে সব পড়ুয়ারা। সোহম গুহর তোলা ছবি।

প্রথম পিরিয়ডে ক্লাসে রয়েছে সব পড়ুয়ারা। সোহম গুহর তোলা ছবি।

এক মাস, দু’মাস নয়। আড়াই বছরেরও বেশি। স্কুলে পড়তে এসে মিল ডে মিল পাচ্ছে না ৫৫০জন পড়ুয়া। পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুর-১ ব্লকের তফসিল এলাকা ভুক্ত আবাসবেড়িয়া স্কুলের পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়াদের অবস্থা এমনই। স্কুলের শিক্ষকদের অভিযোগ, স্কুলে টিফিনের ঘণ্টা পড়লে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া সংখ্যা হয়ে যায় অর্ধেক। কারণ, অধিকাংশ পড়ুয়া বাড়িতে খেতে গিয়ে আর স্কুলমুখো হয় না। ওই পড়ুয়ারা আদৌ বাড়ি পৌছল কি না তার হদিস কী করে রাখেন শিক্ষকরা? উত্তর মেলেনি।

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আবাসবেড়িয়ার এই স্কুল। ১৯৯৫ সালে সারা ভারতে পড়ুয়াদের স্কুলমুখো করতে ও তাদের পুষ্টির মান বজায় রাখতে চালু হয়েছিল মিড ডে মিল প্রকল্প। বাদ যায়নি এই স্কুলও। রান্না করত চারটে স্বনির্ভর গোষ্ঠী। পড়ুয়ারা ঠিক মতো খাবার পেত। কোনও অভিযোগ ছিল না বললেই চলে। গোলমালের সূত্রপাত ২০১৩ সালে। স্কুলের তৎকালীন পরিচালন সমিতি আরও দুটি নতুন গোষ্ঠীকে রান্নার কাজে বহাল করে। তখনই ওই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে শুরু হয় সংঘাত শুরু বলে অভিযোগ। বিবাদের জেরে ২০১৪ সালের মে মাস থেকে স্কুলের মিড ডে মিল পুরোপুরি বন্ধ। স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির সুপর্ণা দেবনাথ, শেখ লোকমান মণ্ডলের কথায়, ‘‘পাশের সব স্কুলের সকলে রান্না করা খাবার পায়। আমরা পাব না কেন?’’

টিফিনের পর ওই ক্লাসেই নেই অধিকাংশ পড়ুয়া। সোহম গুহর তোলা ছবি।

এমন একটা সরকারি প্রকল্প আড়াই বছর ধরে বন্ধের বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেয় নি কেন? স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক শুভেন্দু বাটুলের কথায়, ‘‘দুই গোষ্ঠীর হাতাহাতির জেরে ফৌজদারি মামলা হয়েছিল। বারবার প্রশাসনের কাছে জানিয়েও বিরোধের কোন মীমাংসা না হওয়ায় স্কুলে মিড ডে মিল প্রকল্প বন্ধ পড়ে রয়েছে।’’ সঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘‘টিফিনের পর পঞ্চাশ শতাংশের কম পড়ুয়াকে নিয়েই ক্লাস করতে হয়।’’

আর সেই কথার সূত্র ধরেই জানা যায়, পঞ্চম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ৫৫০ পড়ুয়া রয়েছে। আর স্কুলের টিফিনের পরই তার অর্ধেক বাড়ি চলে যায়। স্কুলের শিক্ষকরা জানালেন, নিম্নবিত্ত ওই পড়ুয়ারা খাবারের জন্য স্কুলে পড়তে আসে। আর সেটা না পেলে অনেকে বাড়িতে খেতে যায় টিফিনের সময়ে। তারপর আর স্কুলে ফেরে না। কিন্তু ওই পড়ুয়ারা বাড়ি পৌঁছল কি না, খোঁজ কী করে রাখেন শিক্ষকরা? শিক্ষক বিশ্বনাথ মণ্ডলের কথায়, ‘‘আমরা ওদের ছাড়তে চাই না। কিন্তু ওরা সকালে কিছু খেয়ে আসতে পারে না। দিনভর চলবে কী করে? তাই সুযোগ পেলেই ওরা চলে যায়। আমরাও আতঙ্কে থাকি।’’ আরও জানান তিনি, ‘‘স্কুলে পাঁচিল নেই। পড়ুয়ারা অনেক সময় চোখ এড়িয়েও যায়।’’ পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীর কথায়, ‘‘বাড়ি তো দূরে। খাওয়ার পর স্কুলে আসতে ইচ্ছে করে না।’’

পড়ুয়াদের অভিভাবকদের অভিযোগ, টানা আড়াই বছর মিড ডে মিল বন্ধ থাকলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। ওই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কোন্দলের জেরে কেন পড়ুয়াদের খাবার বন্ধ হবে তা নিয়েও উঠেছ অভিযোগ। নতুন গোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে পরিচালন সমিতির প্রাক্তন সম্পাদক তন্ময় মাইতি বলেন, ‘‘স্কুলের পড়ুয়া সংখ্যার ভিত্তিতে ৮টি গোষ্ঠীর মহিলা রান্না করতে পারেন। সেখানে ছ’টা গোষ্ঠীতে এত সমস্যা হবে কেন? প্রত্যেকেরই তো কাজ প্রয়োজন।’’ স্কুলের বর্তমান প্রশাসক ও ভগবানপুর-১ চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক কবিতা ভক্ত জানান, “স্কুলের সমস্যা নিয়ে অগস্ট মাসে ব্লক ও পঞ্চায়েত সমিতিকে জানানো হলেও সমাধান হয়নি।’’

জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) সুজিত মাইতির কথায়, ‘‘বিষয়টি জেলা মিড ডে মিল প্রকল্প দফতর ও স্থানীয় ব্লক দেখাশোনা করে। তারাই ব্যবস্থা নিতে পারে।” পূর্ব মেদিনীপুর জেলা মিড ডে মিল প্রকল্প আধিকারিক সৌমেন মাইতি অবশ্য গোটা ঘটনার জন্য স্কুলের পূর্বতন পরিচালন সমিতি ও সম্পাদককে দায়ী করেছেন। সৌমেনবাবুর কথায়, “আগে যেখানে চারটি গোষ্ঠীকে দিয়ে সুন্দরভাবে প্রকল্প চলছিল সেখানে কেন হঠাৎ আরও দু’টো গোষ্ঠীকে দায়িত্ব দেওয়া হল?

ফলে আপাতত এই দায় ঠেলাঠেলির দাম কতদিন ধরে মেটাতে হয় পড়ুয়াদের, সেটাই দেখার।

School Mid Day Meal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy