Advertisement
E-Paper

টেট মঞ্চে ছেলে, পথ চেয়ে বাবা-মা

বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ আন্দোলনকারীদের তুলে দিয়েছে। তারপর থেকে সাময়িক খোঁজ মিলছিল না অচিন্ত্য-সহ তিন আন্দোলনকারীর।

দিগন্ত মান্না

শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২২ ০৮:১৩
অচিন্ত্যের বাবা-মা। নিজস্ব চিত্র।

অচিন্ত্যের বাবা-মা। নিজস্ব চিত্র।

‘‘লক্ষ্মীপুজোর পরের দিন বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল ছেলেটা। মাঝে মাত্র একদিন এসেছিল। গত সোমবার সেই যে বেরিয়ে গেল আর বাড়ি ফেরেনি। বৃহস্পতিবার তো ফোনও করেনি!’’

চায়ের দোকানে বসে এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে থামলেন ‘টেট’ আন্দোলনে নেতৃত্ব থাকা অচিন্ত্য ধাড়ার মা বীণাপাণি। বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ আন্দোলনকারীদের তুলে দিয়েছে। তারপর থেকে সাময়িক খোঁজ মিলছিল না অচিন্ত্য-সহ তিন আন্দোলনকারীর। পরে পুলিশ জানায়, ওই তিন জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে বিধাননগর (পূর্ব) থানায় রাখা হয়েছিল। কিন্তু একটা চাকরি যাথাযথ দাবি জানাতে গিয়ে বাড়ির ছেলেটার লকআপে ঠাঁই হবে, তা ভাবতে পারেননি বীমাপামি বা অচিন্ত্যের বাবা দুর্লভ ধাড়া।

অচিন্ত্যের বাড়ি পাঁশকুড়ার মাইশোরা এলাকার মাংলই গ্রামে। ইতিহাসে স্নাতকোত্তর অচিন্ত্য বিএড করেছেন। বাবা বছর বাহাত্তরের দুর্লভ ধাড়া এব মা বীণাপাণি বাড়ির অদূরে সিমলা বাজারে একটি চায়ের দোকান চালান। তা থেকেই ছেলেকে উচ্চ শিক্ষা দিয়েছেন। ২০১৪ সালে প্রাইমারি ‘টেট’ পাস করেন অচিন্ত্য। কিন্তু চাকরি জোটেনি। ২০১৪ এবং ২০১৭ সালের ‘টেট’ উত্তীর্ণদের এক সঙ্গে ইন্টারভিউ নেওয়ায় হবে বলে সরকারে ঘোষণার পরেই আন্দোলন শুরু করেন ২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণরা। সেই আন্দোলনের সম্মুখে ছিলেন অচিন্ত্য। চাকরীপ্রার্থী তাঁকে আন্দোলন মঞ্চের সভাপতি করেছিলেন। ওই আন্দোলন থেকে যে ছেলে যে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল, তা জানতেনও না বাবা-মা। আর্থিক কারণ বাড়ির টিভিতে তো চ্যানেল দেখার ‘প্যাকেজ’ই ভরা নেই। প্রতিবেশীরাই বাড়িতে এসে জানিয়েছিলেন অচিন্ত্যের নিখোঁজের খবর। অচিন্ত্যর খোঁজ না পেয়ে শুক্রবার কলকাতা রওনা দিয়েছিলেন তাঁর শিক্ষক মৃণালসুন্দর পাত্র। পরে অবশ্য পরিজন অচিন্ত্যের থানায় আটক হওয়ার খবর পান।

কী হয়েছিল বৃহস্পতিবার রাতে?

এ দিন অচিন্ত্য বলছেন, ‘‘আমাকে পুলিশ তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় চারবার রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দেয়। পাঁচবারের বেলায় আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। চোখ খুলে দেখি আমি একটি হাসাপাতালে। সেখান থেকে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয় বিধাননগর নর্থ থানায়। ফোন, ব্যাগ কেড়ে নেওয়ায় হয়। কোমরের বেল্ট পর্যন্ত খুলে নেওয়া হয়েছিল। বাড়িতে ফোন করতে দেওয়া হয়নি। সারারাত লকআপে রেখে পুলিশ চূড়ান্ত দুর্ব্যবহার করে।’’

বাড়িতে অচিন্ত্যের মায়ের নামে ১২ কাঠা জমি রয়েছে। সেটি বন্ধক দিয়ে একটি ছোট্ট পাকা বাড়ি করেছেন ধাড়া দম্পতি। ২০১৪ সালে প্রাথিমক ‘টেট’ পাস করার পর মনে মায়ের মনে আশা জেগেছিল যে, এবার বোধহয় ঈশ্বর মুখ তুলে তাকাবেন। কিন্তু চাকরির পথ চেয়ে কেটে গিয়েছে আট বছর। একমাত্র ছেলের ভবিষ্যৎ কার্যত অন্ধকারে। দুর্লভ বলছেন, ‘‘আমাদের এলাকায় অনেক চাকরির দালাল রয়েছে। চাকরির জন্য ১০ লক্ষ টাকা চেয়েছিল। ওই টাকা দেওয়া কোনও দিনই সম্ভব ছিল না। অথচ ছেলেটা যোগ্যতায় পাস করেও চাকরি পেল না।’’

মায়ের মন চায় চাকরি পেয়ে ছেলে সংসারী হোক। আন্দোলনকারী নয়। ভরা চোখে বীণাপাণিকে এ দিন বলতে শোনা গেল, ‘‘ছেলের বয়স ৩৪ হয়ে গেল। ভেবেছিলাম চাকরি হলে ওর বিয়ে দিয়ে ঘরে পুত্রবধূ আনব। কিন্তু কী হল দেখুন! লক আপে থাকতে হল ছেলেকে। এটাই কি সরকারের কাছে ওদের প্রাপ্য?’’

সে প্রশ্নের জবাব অন্য নেই কারও কাছেই।

TET midnapore
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy