E-Paper

শুধু রক্ষণাবেক্ষণেই কি দেরি! কাটছে না ধোঁয়াশা

প্রকাশ্যে স্বীকার না করলেও রেলের একাংশ আধিকারিক আড়ালে এই দেরির পিছনে সুরক্ষিত গতিতে ট্রেন চালানোর অলিখিত বার্তা রয়েছে বলে দাবি করছেন।

দেবমাল্য বাগচী

শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:৩৮
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

দেরি আগেও ছিল। তবে ওড়িশার বাহানাগায় ভয়ঙ্কর রেল দুর্ঘটনার পর ট্রেনের গতি আরও শ্লথ হয়েছে। দূরপাল্লা থেকে লোকাল- সময় পরিবর্তন, ট্রেন চলাচলে দেরি ঘিরে মাস চারেক ধরে যাত্রী দুর্ভোগ চলছেই। সরব হচ্ছেন নিত্যযাত্রীরা। অবরোধ, বিক্ষোভ, রাজ্যপালের কাছে চিঠি চলেছে সমানে। গতিহীনতা কাটেনি। প্রশ্ন উঠছে, রেল দুর্ঘটনার সঙ্গে কি আসলে ট্রেনের গতিহীনতার কোনও সম্পর্ক রয়েছে!

গত ২ জুন ওড়িশার বাহানাগায় করমণ্ডল ও যশবন্তপুরের রেল দুর্ঘটনার পর চার মাস কেটে গেলেও ট্রেন সময়ে চলা নিয়ে যাত্রী অসন্তোষ কাটছে না। যাত্রী সংগঠনগুলির নানা আন্দোলনের চাপে রেল কর্তৃপক্ষ সময়ে ট্রেন চালানোর কথা বললেও তা পালন করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। এর পিছনে কী কারণ রয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কখনও লাইন মেরামতি, সিগন্যাল মেরামতির কথা বলছে রেল কর্তৃপক্ষ। তবে রেলের একটি সূত্র বলছে, ট্রেনের এই দেরির পিছনে জুড়ে রয়েছে বাহানাগার দুর্ঘটনা। ওই দুর্ঘটনার পরেই রেল বোর্ড সুরক্ষায় নজর দেওয়ার কড়া নির্দেশিকা দিয়েছে। সেই মতো সুরক্ষার নানা পদ্ধতি অবলম্বন করছেন রেল আধিকারিকরা। তাতেই রয়েছে ধীর গতিতে ট্রেন চালানোর বার্তা। তবে সেই বার্তা কোনও লিখিত আকারে নয়, কার্যত অলিখিত এই নির্দেশিকাতে গতি কমিয়ে ছুটছে দূরপাল্লা থেকে লোকাল ট্রেন। যদিও এমন অলিখিত নির্দেশিকার কথা এড়িয়ে প্রকাশ্যে রক্ষণাবেক্ষণের কাজের দিকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন রেল আধিকারিকেরা। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক আদিত্য চৌধুরী বলেন, ‘‘আসলে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ায় হাওড়ায় প্ল্যাটফর্ম পেতে একটু সমস্যা হয়। তাছাড়া আমাদের জোন ছাড়াও বিভিন্ন জ়োনে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলায় ট্রেন দেরিতে আসছে। ডাউন রেক দেরিতে এলে আপে ট্রেন ছাড়তেও দেরি হচ্ছে।’’

প্রকাশ্যে স্বীকার না করলেও রেলের একাংশ আধিকারিক আড়ালে এই দেরির পিছনে সুরক্ষিত গতিতে ট্রেন চালানোর অলিখিত বার্তা রয়েছে বলে দাবি করছেন। খড়্গপুর রেল ডিভিশনের কমার্শিয়াল বিভাগের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ওড়িশার বাহানাগার দুর্ঘটনার পরে সুরক্ষায় কার্যত ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে চলছে রেল বোর্ড। সে ক্ষেত্রে ট্রেন ধীরে চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে সেটার লিখিত নির্দেশিকা নেই। যেখানে একের পর এক বন্দে ভারতের মতো ট্রেন নামানো হচ্ছে সেখানে এমন নির্দেশিকা তো দ্বিচারিতা। আসলে আমাদের রেললাইনের অবস্থা সর্বত্র সমান নয়। তাই ধীরে ট্রেন চালানো সুরক্ষিত পন্থা বলেই মনে করা হচ্ছে।’’ বিষয়টি যাত্রীদেরও ভাবিয়ে তুলেছে। বাহানাগার রেল দুর্ঘটনার পর থেকেই যে এই দেরির প্রবণতা বেড়েছে তা নজর কেড়েছে যাত্রীদের। খড়্গপুর শহরের কৌশল্যার বাসিন্দা কলকাতার একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী শ্রাবন্তী মজুমদার বলেন, ‘‘সত্যি বলতে বাহানাগার দুর্ঘটনার আগে ট্রেনের দেরি ছিল। কিন্তু এত ভয়ঙ্কর দেরি ছিল না। ট্রেন চলাচল ব্যবস্থা যেন সবটাই কেমন তালগোল পাকিয়ে গিয়েছে। মনে হচ্ছে বাহানাগার দুর্ঘটনার পরে সুরক্ষার সহজ পথ হিসাবে রেল ধীরে চলার নীতি নিয়েছে। কিন্তু এটা তো গতিশীলতার যুগের পরিপন্থী। বন্দে ভারতের মতো আধুনিক ট্রেন নামানোর আগে রেললাইন, সিগন্যাল ব্যবস্থায় আরও পরিকাঠামো উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণ প্রয়োজন।’’

রেল সূত্রে খবর, দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খড়্গপুর ডিভিশন জুড়েই যে রেলপথ রয়েছে তা সেমি হাইস্পিড ট্রেন চলারও উপযুক্ত নয়। নানা জায়গায় রেললাইন উপযুক্ত না হওয়ায় নির্ধারিত গতি বেঁধে দেওয়া হয়। সেটাই ওড়িশার দুর্ঘটনার পরে আরও বাড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি সতর্কভাবে পালনের কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে। চলছে রেললাইনের পরিকাঠামো উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ। গতি হারাচ্ছে ট্রেন। মেদিনীপুর-খড়্গপুর-হাওড়া ডেইলি প্যাসেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক জয় দত্ত বলছেন, ‘‘বাহানাগার রেল দুর্ঘটনার পরে রেলের গতি হ্রাসের কোনও অলিখিত নিয়ম এসেছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ তার পর থেকে ট্রেন যাত্রা দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। যদি সুরক্ষার জন্য গতি শ্লথ হয় সেটা দুর্ভাগ্যের। তাই হয়তো রেল আধিকারিকরা দেরির নির্দিষ্ট কারণ জানাতেও পারছেন না!’’ ট্রেনের গতি বাঁধার পিছনে কী তবে সত্যিই বাহানাগার দুর্ঘটনা জড়িয়ে রয়েছে? খড়্গপুর রেলের সিনিয়ার ডিভিশনাল কমার্শিয়াল ম্যানেজার ওমপ্রকাশ চরন বলেন, ‘‘ট্রেনের দেরির পিছনে নানা কারণ রয়েছে। তবে রেললাইনের উপরে নির্ভর করে ভিন্ন জায়গায় নির্দিষ্ট গতি বেঁধে দেওয়া থাকে। সেটা মেনেই ট্রেন চালাতে হয়।’’ (শেষ)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

midnapore

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy