রোগ সারাতে নার্সিংহোমে যান মানুষ। আর সেই নার্সিংহোমেরই রোগের অন্ত নেই। সেই অনিয়মের রোগ সারাতে স্বাস্থ্য কর্তাদের পরিদর্শন জেলায় আগেই শুরু হয়েছিল। এ বার নার্সিংহোমের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করে কড়া বার্তা দিলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলাশাসক (পঞ্চায়েত) মধুসূদন চট্টোপাধ্যায়ের সাফ কথা, “হয় আইন মেনে নার্সিংহোম চালু রাখুন, না হয় ব্যবসা বন্ধ করুন। এর মাঝে কোনও রাস্তা নেই।’’ তাঁর বার্তা, ‘‘রোগী পণ্য নয়। দয়া করে একটু মানবিক হন।”
জেলার নার্সিংহোমগুলোর মালিকদের নিয়ে শনিবার মেদিনীপুরে জেলা স্বাস্থ্য ভবনে এই বৈঠক হয়। সেখানে নার্সিংহোম মালিকদের প্রতি অতিরিক্ত জেলাশাসক মধুসূদনবাবুক সতর্কবার্তা, “এটা করে দেবো, ওটা করে দেবো, এই সব আশ্বাস আর চলবে না। যে পরিকাঠামো দরকার তা রাখতেই হবে। কোনও ছেঁদো কথা চলবে না। এই বৈঠক কাউকে ভয় দেখানোর জন্য নয়। তবে সামনে কঠিন দিন আসছে।’’ মধুসূদনবাবু যখন এই সতর্কবার্তা দিচ্ছেন, তখন পাশেই ছিলেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা। তাঁকেও বলতে শোনা যায়, “কেন লাইসেন্সের মেয়াদ ফুরনোর পরেও নবীকরণ করেন না? বিনা লাইসেন্সে নার্সিং হোম চলতে পারে? নার্সিংহোমে নার্স থাকবে না, ডাক্তার থাকবে না, এটা হতে পারে? নিয়ম মানতে না পারলে ব্যবসা বন্ধ করুন।’’
পশ্চিম মেদিনীপুরে বেসরকারি হাসপাতাল-নার্সিংহোম রয়েছে ১৩২টি। এ দিন সব নার্সিংহোম মালিককে বৈঠকে ডাকা হয়। জেলা স্বাস্থ্য ভবনে দু’টি ধাপে বৈঠক হয়। প্রথমে ঝাড়গ্রাম এবং ঘাটাল মহকুমার এবং পরে মেদিনীপুর ও খড়্গপুর মহকুমার নার্সিংহোম মালিকদের ডাকা হয়। জেলার কিছু নার্সিংহোমে যে বেআইনি ভাবে জন্মের আগেই লিঙ্গ নির্ধারণ হচ্ছে তা-ও বৈঠকে জানান অতিরিক্ত জেলাশাসক। তাঁর কথায়, “কিছু নার্সিংহোমে ইউএসজি মেশিনে বেআইনি ভাবে লিঙ্গ নির্ধারণ হচ্ছে। আমরা ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছি। এ সব চলবে না।”মধুসূদনবাবুর দাবি, নোটিসের জবাব দেওয়ার ক্ষেত্রেও কিছু নার্সিংহোম গড়িমসি করে।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জানান, নার্সিংহোমে ওটি-র জন্য ন্যূনতম ১২০ বর্গফুট জায়গা প্রয়োজন। অথচ কিছু নার্সিংহোম ৬০-৬৪ বর্গফুটেই ওটি চালাচ্ছে। বিনা কারণে রোগীকে দিনের পর দিন আটকে রাখা, বিল বাড়ানোর মতো ঘটনাও ঘটছে। নানা অনিয়মের কারণে গত তিন মাসে জেলার ১২টি নার্সিংহোমকে বন্ধ করা হয়েছে। ৭২টি নার্সিং হোমকে শো- কজ করা হয়েছে। এখনও অভিযান চলছে।