নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর
কাউন্সিলরের মৃত্যুর পর পুনর্নির্বাচন হয়নি। মেদিনীপুর শহরের একাধিক ওয়ার্ডে কাউন্সিলরের পদ ফাঁকা থাকায় কাজে সমস্যা। ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে মেদিনীপুর পুরসভার নির্বাচন হয়। ওই বছরের ডিসেম্বর মাসে পুরবোর্ড গঠন হয়। পরের বছর ২০১৪ সালের ২৫ এপ্রিল মৃত্যু হয় শহরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রবীণ কাউন্সিলর নাজিম আহমেদের। বাম-বিকাশ পরিষদের কাউন্সিলর নাজিম আহমেদের মৃত্যুর পর থেকেই ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদটি শূন্য।
২০১৫ সালে হাতির হামলায় মৃত্যু হয় ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর কৌস্তভ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ঘটনার পর প্রায় এক বছর হতে চললেও পুনর্নিবাচন হয়নি। সম্প্রতি কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে আসা ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মণিলাল দাসের মৃত্যু হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, কোনও ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের মৃত্যুর পর সংশ্লিষ্ট পুরবোর্ড কমিশনে ওই ওয়ার্ডে পুনর্নির্বাচনের বিষয়ে জানায়। বিরোধীদের অভিযোগ, গত পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই চার জন কাউন্সিলরের মৃত্যু হয়। সেই সময়ও পরবর্তী পুর নির্বাচনেই ওই ওয়ার্ডগুলির কাউন্সিলর নির্বাচন হয়। তার আগে পর্যন্ত উপ-নির্বাচন হয়নি। অভিযোগ, জোট গড়লেও পুরবোর্ড দখলের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা বিরোধীদের নেই। কাউন্সিলরের মৃত্যু হলে সেই ওয়ার্ডের কাজ সামলানোর দায়িত্ব বর্তায় পুরপ্রধান ও উপ-পুরপ্রধানের উপর। সেই অতিরিক্ত ক্ষমতা ধরে রাখার জন্যই বর্তমান পুরবোর্ড পুনর্নির্বাচনের পথে হাঁটছে না বলে অভিযোগ।
ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদ ফাঁকা থাকায় সমস্যায় পড়ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিভিন্ন প্রয়োজনীয় শংসাপত্র, শরিকি শংসাপত্র, ট্রেড লাইসেন্স নবীকরণ সংক্রান্ত কাজ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এলাকায় রাস্তার পথবাতি খারাপ হলে বা নিকাশি সমস্যা নিয়ে কাকে বলবেন তা নিয়েও ধন্দে স্থানীয়রা।
১৭ নম্বর ওয়ার্ডের পাথরঘাটার বাসিন্দা পার্থ মণ্ডলের কথায়, “কাউন্সিলর স্থানীয় বাসিন্দা ছিলেন। তাঁর সঙ্গে ভাল পরিচিতিও ছিল। ফোন করে বাড়িতে গেলেই উনি প্রয়োজনীয় শংসাপত্র দিয়ে দিতেন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এখন নানা প্রয়োজনীয় কাজে পুরসভায় যেতে হয়। পুরপ্রধান, উপ-পুরপ্রধান ব্যস্ত মানুষ। সব সয় পুরসভায় তাঁদের পাওয়া যায় না। তাঁরা থাকলেও দেখি গুরুত্বপূর্ণ কাজে রয়েছেন। তাই বারবার ঘুরতে হয়।’’ একইভাবে, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের নিমতলার মুকসেদ আলির কথায়, “রাস্তায় আলো রয়েছে। কিন্তু জ্বলে না। কাউন্সিলর থাকলে বলতে পারতাম।” অভিযোগ, নির্বাচন না করানোর প্রধান কারণ হল, ক্ষমতা কুক্ষীগত করা। কাউন্সিলরের মৃত্যু হলে সেই ওয়ার্ডের দায়িত্ব সামলানোর দায়িত্ব বর্তায় পুরপ্রধান ও উপপুরপ্রধানের উপর। সেই অতিরিক্ত ক্ষমতা উপভোগ করার লক্ষ্যেই নির্বাচনের পথে হাঁটছে না পুরবোর্ড। বাম কাউন্সিলর অসিত মাহাপাত্রের মতে, ‘‘কাউন্সিলর না থাকলে ওয়ার্ডবাসীকে নানা ঝক্কি পোয়াতে হয়। তা-ও পুরসভা কেন উদাসীন বুঝতে পারছি না।’’ কংগ্রেস কাউন্সিলর শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায়েরও বক্তব্য, “ছ’মাসের বেশি কোনও জনপ্রতিনিধির পদ খালি থাকা উচিত নয়। পুরসভাকে নির্বাচন করার কথা জানিয়েও সুফল পাইনি।’’ পুরপ্রধান প্রণব বসু অবশ্য বলছেন, “কাউন্সিলরদের মৃত্যুর কথা রাজ্যকে জানিয়েছি। রাজ্য নির্বাচন কমিশন আমাদের এ ব্যাপারে জানালেই পদক্ষেপ করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy