Advertisement
E-Paper

শব্দের তাণ্ডবে অতিষ্ঠ তমলুক

কিন্তু রাজ্যের সর্বত্র যে তাঁদের নিদের্শ পৌঁছয়নি, তার প্রমাণ পাওয়া গেল পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকে। শহর লাগোয়া ভুবনেশ্বরপুর গ্রামে বুধবার একটি পুজো উপলক্ষে চলছিল মাইক–ডিজে বাজানো।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৭ ০১:৩৪
শব্দদৈত্য: এই ডিজে বাজানো নিয়েই বিতর্ক। নিজস্ব চিত্র

শব্দদৈত্য: এই ডিজে বাজানো নিয়েই বিতর্ক। নিজস্ব চিত্র

দিন কয়েক আগে উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুরে প্রশাসনিক মিটিংয়ে শব্দতাণ্ডব নিয়ে সকলকে সতর্ক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। যথেচ্ছ মাইক, ডিজে বাজানো নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘কেউ আনন্দ করতে চাইলে ঘর বন্ধ করে যত খুশি মাইক বাজান। কিন্তু রাস্তায় নয়। একজনের আনন্দ যেন অন্যের দুঃখের কারণ হয়ে না দাঁড়ায়।’’ পুলিশকেও এ বিষয়ে কড়া পদক্ষেপও করতে বলেছেন তিনি। শব্দতাণ্ডবের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর এমন মন্তব্যকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেকে।

কিন্তু রাজ্যের সর্বত্র যে তাঁদের নিদের্শ পৌঁছয়নি, তার প্রমাণ পাওয়া গেল পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকে। শহর লাগোয়া ভুবনেশ্বরপুর গ্রামে বুধবার একটি পুজো উপলক্ষে চলছিল মাইক–ডিজে বাজানো। এতটাই তারস্বরে যে ডিজের আওয়াজ পৌঁছে গিয়েছিল দু’কিলোমিটার দূরে হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কের পাশ দিয়ে যাওয়া পথচারীর কানেও। শুধু এই ঘটনা নয়, কোনও কিছু উপলক্ষে উচ্চস্বরে যথেচ্ছ মাইক বাজানো এখন দস্তুর শহরে। অভিযোগ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর জন্য কোনও অনুমতির বালাই দেখা যায় না।

স্থানীয় একটি ক্লাবের উদ্যোগে ভুবনেশ্বরপুর গ্রামের এই পুজো শেষ হয় শুক্রবার। ফলে তিনদিন ধরেই মাইক-ডিজের তাণ্ডবে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। মাইক বাজানো নিয়ে পুলিশ-প্রশাসনের অনুমতি নেওয়ার প্রশ্নে ক্লাবের এক সদস্য শৌভিক দাস বলেন, ‘‘৩৩ বছরের এই পুজোয় প্রতি বছরই এ ভাবে মাইক বাজে, অনুষ্ঠান হয়। কোনওদিন পুলিশ বা প্রশাসনের কেউ কিছু বলেনি।’’

আর এখানেই পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাসিন্দাদের। তাঁদের অভিযোগ, অনুমতি ছাড়া যে ভাবে তারস্বরে মাইক বাজানো হয় তাতে পুলিশ কোনও পদক্ষেপ তো করেই না। উল্টে তারা এমন মন্তব্যও করে, ‘অভিযোগ করুন, দেখছি’। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিভিন্ন ক্লাব, সংগঠন, বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠান তো রয়েইছে, তারস্বরে মাইক বাজানোয় পি‌ছিয়ে নেই রাজনৈতিক দলগুলিও। তাঁদের অভিযোগ, শাসকদলের অনেক জনসভায় দেখা যায়, সন্ধ্যায় সভা হলেও সকাল থেকে মাইক বাজতে শুরু করে। কারও বাড়িতে অসুস্থ কেউ আছেন কিনা, কারও পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে কি না সে সবের তোয়াক্কা করা হয় না। যদিও স্থানীয় থানার দাবি, জোরে মাইক বাজানো নিয়ে কেউ কখনও অভিযোগ করেন না। তবে বিভিন্ন এলাকায় এ বিষয়ে নজরদারি চলে।

জেলার পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়ার অবশ্য দাবি, ‘‘শব্দদূষণ আটকাতে ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ করা হয়েছে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে নিয়ে এ বিষয়ে বৈঠক করা হয়েছে। জোরে মাইক-সাউন্ড বক্স, ডিজে বাজানোর ঘটনা নজরে এলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ তিনি জানান, গত দু’সপ্তাহে তমলুক ও নন্দকুমার এলাকায় তিনটি ক্ষেত্রে মাইক–সাউন্ড বক্স বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

তবে পুলিশি পদক্ষেপের পাশাপাশি শব্দ-তাণ্ডব নিয়ে সচেতনতায় ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর বেটার লিভিং’ নামে সংগঠন তৈরি হয়েছে তমলুক শহরে। সংগঠনের তরফে শিল্পী গৌরাঙ্গ কুইল্যা বলেন, ‘‘গান-বাজনার নামে বিশাল বিশাল সাউন্ড বক্স ও মাইক বাজানোর জেরে মানুষ অতিষ্ঠ। জেলা প্রশাসন ও পুলিশকে জানিয়েও সুরাহা হয়নি। সে জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছি।’’

প্রসঙ্গত, হলদিয়ায় ইতিমধ্যেই মাইক-ডিজে বাজানো নিয়ে মহকুমা প্রশাসনের তরফে নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তমলুক শহরবাসী শব্দতাণ্ডব থেকে বাঁচতে এখন মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের দিকেই তাকিয়ে।

Sound Pollution DJ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy