Advertisement
১৯ মে ২০২৪

নৌকা কই, বন্যাদুর্গত ঘাটালে প্রশ্ন

নৌকার অভাবে বহু দুর্গত এলাকায় পৌঁছতেই পারেনি প্রশাসনের লোকজন। সমস্যা হচ্ছে ত্রাণ বিলিতেও। এমনকী নৌকা না পাওয়ায় রামকৃষ্ণ মিশন-সহ বহু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ত্রাণ নিয়ে প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে ঢুকতে পারছে না।

জলযান: ঘাটাল শহরে নামানো হচ্ছে নৌকা। ছবি: কৌশিক সাঁতরা

জলযান: ঘাটাল শহরে নামানো হচ্ছে নৌকা। ছবি: কৌশিক সাঁতরা

অভিজিৎ চক্রবর্তী
ঘাটাল শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৭ ০০:৪৪
Share: Save:

প্লাবিত ঘাটালে এখন নৌকার হাহাকার। কী দুর্গতদের উদ্ধারে, কী ত্রাণ বিলি—প্রতিটি ক্ষেত্রেই পর্যাপ্ত নৌকার অভাবে পদে পদে ভুগছে মহকুমা প্রশাসন থেকে বন্যা কবলিতরা।

অথচ বন্যাপ্রবণ এলাকা বলে পরিচিত ঘাটালে নৌকার এমন অসুবিধায় আগে কখনও পড়তে হয়নি বলে জানালেন এলাকার মানুষ। এই অবস্থায় পাশের জেলা হাওড়া, হুগলি থেকে নৌকা আনার চেষ্টা হলেও তাতেও সমস্যা। কারণ ওই দুই জেলারও বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জলবন্দি মানু‌ষের অভিযোগ, এমনিতেই সমস্যার শেষ নেই। তার উপর নৌকার আকাল সেই সমস্যা আরও বাড়িয়েছে। মহকুমা প্রশাসন সূত্রে খবর, লক্ষাধিক মানুষ বন্যা কবলিত। উদ্ধার ও ত্রাণের রয়েছে সাকুল্যে ৬৯টি নৌকা। তাতে করেই পানীয় জল থেকে অন্য ত্রাণসামগ্রী নিয়ে যেতে হচ্ছে পুলিশ-প্রশাসনকে। এমনকী দুর্গত এলাকায় উদ্ধার কাজ চালাতেও ভরসা ওই নৌকাই। তারই মধ্যে রবিবার বন্যা কবলিত এলাকায় দু’টি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ভাঙাদহ এলাকায় সাপের কামড়ে মারা যান কমলা পাল (৭৮)। সুলতানপুরে জমি থেকে জল নেমেছে কিনা দেখতে গিয়েছিলেন মনোরঞ্জন পণ্ডিত। সেই সময় বজ্রাঘাতে তাঁর মৃত্যু হয়।

নৌকার অভাবে বহু দুর্গত এলাকায় পৌঁছতেই পারেনি প্রশাসনের লোকজন। সমস্যা হচ্ছে ত্রাণ বিলিতেও। এমনকী নৌকা না পাওয়ায় রামকৃষ্ণ মিশন-সহ বহু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ত্রাণ নিয়ে প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে ঢুকতে পারছে না। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “নৌকা না থাকায় বহু জলবন্দি মানুষকে উদ্ধার করে শিবিরে নিয়ে যেতেও সমস্যা হচ্ছে। ত্রাণ বিলি নিয়েও অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে।”

ডাঙার-খোঁজে। নিজস্ব চিত্র

এই প্রেক্ষিতে নৌকার অভাব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

স্থানীয় সূত্রে খবর, আগে ঘাটাল জলমগ্ন হলে ঘাটাল-চন্দ্রকোনা রোড জলের তলায় চলে যেত। বন্ধ হয়ে যেত যোগাযোগ ব্যবস্থা। তখন নৌকাই হতো যাতায়াতের একমাত্র উপায়। সেই সুযোগে ভাল ব্যবসা করতেন নৌকার মালিকরা। বর্তমানে ওই সড়কে উড়ালপুল হওয়ায় সে সমস্যা আর নেই। বছর দু’য়েক আগেই ঘাটালের দু’নম্বর চাতালে উড়ালপুল দিয়ে বাস-সহ অন্যান্য যান চলাচল শুরু হয়েছে। ফলে নৌকার ব্যবহার কমায় অনেকেই সেই ব্যবসা থেকে সরে এসেছেন। নৌকা ব্যবসায়ী বলরাম হাইতের কথায়, ‘‘নৌকা সারাতে বহু টাকা খরচ। আগে ঘাটালের দু’টি চাতালেই নৌকা চলত। প্রায় শ’খানেক নৌকা ব্যবহার হতো। উড়ালপুল তৈরি হওয়ায় ব্যবসা মার খেয়েছে। নতুন নৌকা নেই। পুরনো যা ছিল তারই কিছু সারাই করে কাজ চলছে।”

যদিও মহকুমা শাসক পিনাকীরঞ্জন প্রধান বলেন, “নৌকার সমস্যা রয়েছে ঠিকই। কিন্তু তাতে ত্রাণবিলির ক্ষেত্রে প্রভাব পড়েনি।” নৌকার অভাবে রামকৃষ্ণ মিশনের ত্রাণ বিলি আটকে যাওয়ার প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘মিশন কর্তৃপক্ষ আমাকে নৌকা দেওয়ার কথা বলেছিলেন। ওঁরা দাসপুর-২ ব্লকে যাবেন বলায় বিডিওকে ব্যবস্থা করতে বলেছি।”

রবিবার ঘাটালের বন্যা পরিস্থিতি দেখতে এসেছিলেন স্থানীয় সাংসদ দেব। এদিন ঘাটালে পৌঁছে মহকুমা শাসকের দফতরে বৈঠক করেন। পরে সড়ক পথে বন্যা কবলিত এলাকা ঘুরে দেখেন। তিনি বলেন, ‘‘এখন একটাই কাজ, বাঁধ সংস্কার এবং পরিস্থিতির মোকাবিলা করা। ত্রাণ বিলি-সহ সমস্ত বিষয়েই জেলা প্রশাসন সচেষ্ট। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও কড়া নজরদারি চালাচ্ছেন। জল কমলেই বাঁধ সংস্কার যাতে শুরু হয় সে জন্য উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে দিদিও সরব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Flood Boat Ghatal নৌকা ঘাটাল
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE