Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Maoist

Maoist: স্বার্থ পূরণেই মাওবাদী রটনা! সতর্ক হচ্ছে পুলিশ

পুলিশের দাবি, মাওবাদীদের নামে গত কয়েক বছরে ঝাড়গ্রামে যে সব পোস্টার মিলেছে, সেগুলি কার্যত ভুয়ো। তাহলে কারা দিচ্ছে পোস্টার?

গুজবের বন্‌ধে বেলপাহাড়ির শিলদার রাস্তা ফাঁকা।

গুজবের বন্‌ধে বেলপাহাড়ির শিলদার রাস্তা ফাঁকা। ফাইল চিত্র।

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২২ ০৭:৩২
Share: Save:

ভুয়ো মাওবাদীর তত্ত্ব সামনে এনে ফের কি শান্ত জঙ্গলমহলকে অশান্ত করার চেষ্টা হচ্ছে! ‘ভুয়ো পোস্টার’ বন্‌ধ ডাকা, মাওবাদী স্কোয়াডের ঘুরে বেড়ানোর ‘ভুয়ো খবরে’ আশঙ্কা এমনই। এতে বিভ্রান্ত হচ্ছেন আমজনতার একাংশ।

অথচ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের তথ্য বলছে, এই মুহূর্তে ঝাড়গ্রাম জেলায় মাওবাদীদের গতিবিধির কোনও খবরই নেই। সীমানাবর্তী ঝাড়খণ্ডে মাওবাদীদের গতিবিধির খবর মাঝে মাঝে মেলে। অথচ সিআরপি ও রাজ্য পুলিশের কাউন্টার ইনসার্জেন্সি ফোর্সের (সিআইসি) নিরন্তর তল্লাশিতেও সেখানে মাওবাদীদের উপস্থিতির প্রমাণ মেলেনি।

পুলিশের দাবি, মাওবাদীদের নামে গত কয়েক বছরে ঝাড়গ্রামে যে সব পোস্টার মিলেছে, সেগুলি কার্যত ভুয়ো। তাহলে কারা দিচ্ছে পোস্টার? পুলিশের ব্যাখ্যা, কিছু প্রাক্তন মাওবাদী, যাঁরা সরকারি পুনর্বাসন প্যাকেজ পাওয়ার ন্যূনতম যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছেন, তাঁরাই ক্ষোভে এলাকায় ভয়ের বাতাবরণ তৈরির চেষ্টা করছেন। আবার কিছু ক্ষেত্রে নেতা-নেত্রীদের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে এলাকাবাসীর একাংশ সর্বসমক্ষে তা তুলে ধরতে মাওবাদীদের নামকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। ব্যক্তিগত স্বার্থেও কাউকে ভয় দেখাতে ভুয়ো পোস্টার দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন সূত্রে পুলিশের কাছে মাওবাদী স্কোয়াডের গতিবিধির তথ্য আসে। অথচ অনুসন্ধানের পরে দেখা যায়, সে সব ভুয়ো তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। যেমন, গত মার্চের গোড়ায় খবর মেলে বেলপাহাড়িতে মদন মাহাতো, জবা মাহাতোর নেতৃত্বে ৮-১০ জনের মাওবাদী স্কোয়াড জঙ্গলে রয়েছে। ১১ মার্চ সিআরপি ও পুলিশের যৌথ বাহিনী রাতভর অভিযান চা‌লিয়েও এলাকায় স্কোয়াডের উপস্থিতির প্রমাণ পায়নি। ফের খবর আসে বেলপাহাড়ির সীমানাবর্তী ঝাড়খণ্ডের গোটাশিলা ও ঘাঘরার জঙ্গলে জবা মাহাতোর নেতৃত্বে মাওবাদী স্কোয়াড ঘুরছে। ১৫ ও ১৬ মার্চ জামাইমারি ও শাঁখাভাঙায় নাকাবন্দি করে জঙ্গল এলাকায় তল্লাশি-অভিযান চলে। তবে কোনও সূত্রই মেলেনি। একই ভাবে ১৯ মার্চ কার্তিক সরেন, রাম মুড়া, গুরুবারি পাহাড়ির মতো মাওবাদী নেতা-নেত্রীদের নেতৃত্বে ১১-১২ জ‌নের দল বেলপাহাড়ির আমলাশোল, আমঝর্না লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের জঙ্গল এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে খবর আসে। ঘাটশিলার ভালুবাসা গ্রামের বাসিন্দাদের থেকে মাওবাদীরা খাবারও সংগ্রহ করেছে বলেও শোনা যায়। অথচ আগের রাতেই সিআরপি রুটিন তল্লাশিতে কিছুই পায়নি। ফের ২৩ মার্চ সিআরপি ও সিআইএফ পৃথক ভাবে সীমানাবর্তী এলাকাগুলিতে তল্লাশি চালায়। কিন্তু জঙ্গলে মাওবাদীদের শিবির করে থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে বেলপাহাড়িতে শিশুদের পড়াশোনার কার্যক্রম ‘সাথী’, বাসিন্দাদের সমস্যা জানতে ‘দুয়ারে পুলিশ’, বেকার যুবকদের গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণের মতো নিবিড় জনসংযোগ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে জেলা পুলিশ।

বন্‌ধের গুজবের জেরে মঙ্গলবার বেলপাহাড়িতে বেশিরভাগ বেসরকারি বাস চলনি। আংশিক দোকানপাটও বন্ধ ছিল। অথচ পুলিশের দাবি, এ দিন কোনও বন্‌ধের প্রচার বা খবর ছিল না। ঝাড়গ্রাম ডিস্ট্রিক্ট বাস ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ পাল বলেন, ‘‘বেলপাহাড়ি বাদে জেলার সর্বত্র বাস চলেছে। বন্‌ধের গুজবে চালক-কনডাক্টররা বাস নিয়ে বেলপাহাড়ির দিকে যেতে চাননি।’’

ঝাড়গ্রামের জেলা পুলিশ সুপার বিশ্বজিৎ ঘোষ বলছেন, ‘‘ব্যক্তিগত স্বার্থে কেউ কেউ ভুয়ো পোস্টার ছড়িয়ে, গুজব রটিয়ে মানুষজনকে বিভ্রান্ত করছেন। তাঁদের চিহ্নিত করে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Maoist Jhargrm police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE