রাস্তার ধারেও লেগে রক্ত।
গ্রামের এক যুবকের বিরুদ্ধে স্ত্রীর উপর অত্যাচারের অভিযোগ শোনা যাচ্ছিল অনেক দিন ধরেই। সমস্যার কথা গ্রামের মোড়লদের জানিয়েছিলেন সেই মহিলাও। তার সালিশি বসিয়েছিলেন মোড়লরা।
কিন্তু যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই শেখ রমজান নামের যুবক হাজির ছিলেন না সভায়। তাঁকে ধরে আনতে গিয়ে কয়েকজন তাঁকে মারধর করে বলেও অভিযোগ। আর তার প্রতিশোধ নিতেই শেখ কওসার আলি (৫৮) নাম এক মোড়লকে খুনের অভিযোগ উঠল রমজানের বিরুদ্ধে। সোমবার সন্ধ্যায় পাঁশকুড়ার প্রতাপপুর এলাকার ঝিকুরিয়া গ্রামের ঘটনা। পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতারও করেছে।
জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, সালিশি সভায় অপমানিত হয়েই শেখ রমজান এমন কাণ্ড করে। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’
নিহত কওসার আলি (ইনসেটে) নিজস্ব চিত্র।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁশকুড়া পুরসভার লাগোয়া প্রতাপপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ঝিকুরিয়া গ্রামের যুবক শেখ রমজানের সঙ্গে পাড়ারই তরুণী আমেনা খাতুনের বিয়ে হয়েছিল ১৩ বছর আগে। তাঁদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। আমেনার পরিবারের অভিযোগ, বিয়ের কিছুদিন পর থেকে রমজান স্ত্রীর উপর অত্যাচার করতে শুরু করে। মেয়ের উপর অত্যাচারের সমাধানে গ্রামের মোড়ল শেখ কওসরকে নালিশ জানিয়েছিল আমেনার পরিবার। মীমাংসার জন্য আমেনার পরিবার ও রমজানকে রবিবার সন্ধ্যায় সালিসি সভা ডেকেছিলেন কওসর। তবে সেখানে রমজান হাজির হননি বলে অভিযোগ। তখন সালিশি সভায় হাজির ১০-১২ জন যুবক রানিহাটি এলাকায় থাকা রমজানকে জোর করে ধরে ধরে আনতে যায়। কিন্তু রমজান আসতে রাজি না হওয়ায় তাঁকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। রমজান না আসায় ওই সালিসি সভা ভেস্তে যায়।
তবে এই ঘটনায় কওসারের উপর রেগে ছিলেন রমজান। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার বিকেলে স্থানীয় প্রতাপপুর দরবার শরিফে গিয়েছিলেন কওসার। এরপর তিনি বাড়ি ফিরলে হঠাৎই তাঁর উপর রমজান অস্ত্র নিয়ে হামলা করেন বলে অভিযোগ। কওসরকে একাধিকবার কোপানো হয় বলে অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দারা ছুটে এলে রমজান পালিয়ে যায়। তমলুক জেলা হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করানো হলে চিকিৎসক মৃত বলে জানান। ঘটনার পর স্থানীয়রা রমজানের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর চালায়। পাঁশকুড়া থানার পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। কওসারের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার ভোরে পুলিশ রমজানকে গ্রেফতার করেছে। অস্ত্রটিও পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছে।
এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসেবে পরিচিত শেখ কওসার পেশায় ঠিকাদার। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই ওই গ্রামের মোড়ল হিসেবে পরিচিত এলাকার বাসিন্দাদের কাছে। সেদিনের সালিশি সভায় হাজির ছিলেন পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান মাসুদন বিবি। তাঁর অবশ্য দাবি, ‘‘রমজানের স্ত্রীর পরিবারই সমস্যা মেটানোর জন্য অভিযোগ জানিয়েছিলেন। রমজান আসতে রাজি না হওয়ায় আমরা বাড়ি ফিরে আসি। তারপর এই ঘটনা।’’
কিন্তু বধূর উপর অত্যাচারের অভিযোগ নিয়ে পুলিশের কাছে না গিয়ে সালিশি সভা বসল কেন? গ্রামপঞ্চায়েত প্রধানের উত্তর, ‘‘পারিবারিক বিষয় মীমাংসার জন্য গ্রামে এমন সভা হয়েই থাকে। কওসার গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে এমন মীমাংসা করতেন। কিন্তু এমন ঘটনা ঘটবে আমরা কেউ ভাবতে পারিনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy