ঘটনাস্থলে পড়ে রয়েছে সরাফতের পোশাকের পোড়া অংশ।
ঠিকাকর্মীকে পুড়িয়ে মারায় অভিযোগ দায়ের করার একদিন পরও কোনও অভিযুক্তকেই গ্রেফতার করতে পারল না পুলিশ। ঘটনার মূল অভিযুক্ত ঠিকাদার শেখ আসরফ ঘটনার পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছে। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এই ঘটনায় আর এক অভিযুক্ত স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলরের ছেলে সৈয়দ পিন্টুকে শনিবারও এলাকায় ঘোরাফেরা করতে দেখা গিয়েছে। ফলে এমন নৃশংস ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেফতারে পুলিশি নিস্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছে নিহত সেরাফতের পরিবার। জেলার পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘ওই ঘটনা নিয়ে আরও কয়েকজনের বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে। বিস্তারিত তদন্ত চলছে। শীঘ্রই অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হবে।’’
শুক্রবার দুপুরে পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া থানার সুরানানকার এলাকায় এক নির্মীয়মাণ বাড়ির পিছনে অগ্নিদ্বগ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায় ঠিকাকর্মী শেখ সেরাফতের দেহ। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ এসে তাঁকে উদ্ধার করে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস দু’য়েক আগে দেশের বাড়িতে পাঠানোর জন্য ঠিকাদার আসরফের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলেন ঠিকাকর্মী সেরাফত। কথা দিয়েছিলেন, কাজ করে সেই টাকা শোধ করে দেবেন। ইতিমধ্যে সেরাফত, আসরফে অধীনে কাজ করাও বন্ধ করে দেয়। সবেবরাত উপলক্ষে দেশের বাড়ি ফিরেছিল দু’জনই। অভিযোগ, ধার দেওয়া পাঁছ হাজার টাকা ফেরতি চেয়েই শুক্রবার সেরাফতকে স্থানীয় একটি ক্লাবে আটকে রেখেছিল আসরফ। এমনকী সেরাফতের স্ত্রীকে টাকা নিয়ে এসে স্বামীকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার হুমকিও দিয়েছিল। কিন্তু, টাকা নিয়ে ঘটনাস্থলে যেতে পারেনি সেরাফতের পরিবার। দুপুর একটা নাগাদ সেরাফতের বাড়িতে একজন পড়শি এসে দুঃসংবাদ দেন।
ক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে অভিযুক্ত সৈয়দ পিন্টু।
নিহতের স্ত্রী আলেমারা বিবির অভিযোগ ছিল, টাকা ফেরত না দেওয়ার জন্যই সেরাফতকে পুড়িয়ে দেয় আসরফ। ঘটনার পর সেরাফতকে খুনের অভিযোগে ঠিকাদার আসরফ আলি, সৈয়দ পিন্টু, শেখ সাজাহান, শেখ আলতাফ আলি, শেখ সাবির আলি নামে পাঁচজনের নামে পাঁশকুড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। পুলিশ জানিয়েছে, ওই পাঁচজনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
কিন্তু শনিবার সকালে রানীহাটি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, আসরফ বাড়ি ছেড়ে পালালেও ওই একই ঘটনায় অভিযুক্ত স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর সৈয়দ আমজেদ আলির ছেলে সৈয়দ পিন্টু বাবার সাথে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে বসে রয়েছেন। অভিযুক্ত পিন্টুর দাবি, ‘‘ঘটনার সময় এলাকাতেই ছিলাম না। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহির অভিযোগ, ‘‘এমন নৃশংস ঘটনার পরও অভিযুক্তদের ধরার ক্ষেত্রে পুলিশ নিষ্ক্রিয়। এর ফলে শাসকদলের দুষ্কৃতীরা মদত পাবে।’’ পাঁশকুড়ার তৃণমূল নেতা জাইদুল খান বলেন, ‘‘আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি এ দিন ঘটনার সময় পিন্টু ওখানে ছিল না। ওকে ফাঁসানো হচ্ছে। আমরা চাই, পুলিশ প্রকৃত দোষীদের ধরে আইনানুগ ব্যবস্থা নিক।’’
পার্থপ্রতিম দাসের তোলা ছবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy