Advertisement
০৬ মে ২০২৪
বহু এলাকায় হয়নি শিবির

সহায়ক মূল্যে আলু কেনা শুরু, তবু উদ্বেগ

অনুকূল আবহাওয়ায় এ বার আলুর ব্যাপক ফলন হয়েছে। আর তাতেই চাষিদের অবস্থা প্রতিকূল। একে তো পশ্চিম মেদিনীপুরে এ বার আলুর রেকর্ড ফলন হয়েছে। কিন্তু তা রাখার জন্য পর্যাপ্ত হিমঘর নেই। তার উপর সহায়ক মূল্যে আলু কেনা শুরু হতেও দেরি হয়েছে। শেষমেশ সোমবার থেকে আলু কেনা শুরু করেছে প্রশাসন। তাতে আলুর দাম কিছুটা বাড়ার কথা। কিন্তু প্রথম দিন থেকেই সর্বত্র আলু কেনা শুরু না হওয়ায় কত দিনে দাম বাড়বে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

শালবনিতে চলছে আলুকেনা।—নিজস্ব চিত্র।

শালবনিতে চলছে আলুকেনা।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৫ ০০:১৯
Share: Save:

অনুকূল আবহাওয়ায় এ বার আলুর ব্যাপক ফলন হয়েছে। আর তাতেই চাষিদের অবস্থা প্রতিকূল। একে তো পশ্চিম মেদিনীপুরে এ বার আলুর রেকর্ড ফলন হয়েছে। কিন্তু তা রাখার জন্য পর্যাপ্ত হিমঘর নেই। তার উপর সহায়ক মূল্যে আলু কেনা শুরু হতেও দেরি হয়েছে। শেষমেশ সোমবার থেকে আলু কেনা শুরু করেছে প্রশাসন। তাতে আলুর দাম কিছুটা বাড়ার কথা। কিন্তু প্রথম দিন থেকেই সর্বত্র আলু কেনা শুরু না হওয়ায় কত দিনে দাম বাড়বে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, “সোমবার থেকে সহায়ক মূল্যে আলু কেনা শুরু হয়েছে। এ জন্য ব্লকগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।’’ প্রশাসন দাবি করলেও এ দিন অবশ্য জেলার সব ব্লকে সহায়ক মূল্যে আলু কেনা শুরু হয়নি। শালবনি-সহ নামমাত্র কয়েকটি ব্লকে শুরু হয়েছে। জানা গিয়েছে, সহায়ক মূল্যে আলু কেনা নিয়ে গত শুক্রবার জেলায় এক বৈঠক হয়। ব্লকস্তরে আলু কেনার প্রক্রিয়াটি দেখভালের জন্য ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। যে কমিটিতে রয়েছেন বিডিও, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, ব্লক কৃষি আধিকারিক প্রমুখ। এমনিতেই দেরি করে আলু কেনা শুরু হল। তা-ও কেন এ দিন সব ব্লকে তা হল না? সদুত্তর দেননি জেলার কৃষি কর্মাধ্যক্ষ নির্মলবাবু। তাঁর কথায়, “জেলা থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। সব ব্লকেই সহায়ক মূল্যে আলু কেনা হবে।” একই মত কৃষি দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর তথা জেলা কৃষি আধিকারিক নিমাইচন্দ্র রায়ের।

সহায়ক মূল্যে আলু কেনার জন্য ব্লক পিছু ২ লক্ষ টাকা করে বরাদ্দ হয়েছে। আলু কেনা হবে মিড ডে মিল, আইসিডিএসের জন্য। কিন্তু এই বরাদ্দ সামান্য বলেই মত চাষিদের। তাঁদের বক্তব্য, হেক্টরের পর হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। সেখানে এক-একটি অঞ্চল থেকে ১৫-২০ বস্তা আলু কেনা হলে কার সুবিধে হবে! জেলা কৃষি দফতরের এক আধিকারিকের অবশ্য যুক্তি, “জেলায় যে পরিমান আলু উত্‌পাদন হয়, তার সবটাই সহায়ক মূল্যে সরকার কিনে নেবে, এমনটা হতে পারে না। সহায়ক মূল্যে আলু কেনা শুরু হলে বাজারে আলুর দাম একটু বাড়ে। চাষিরা তুলনায় একটু বেশি দাম পান।” নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ওই আধিকারিকের কথায়, “সহায়ক মূল্যে সাড়ে পাঁচ টাকা কেজি দরে আলু কেনা হচ্ছে। এখন বাজারে আলুর দাম কেজি প্রতি আড়াই থেকে তিন টাকা। চাষিরা এই দামেই আলু বিক্রি করছেন বলে শুনেছি। সর্বত্র সহায়ক মূল্যে আলু কেনা শুরু হলে বাজারে আলুর দাম কেজি প্রতি সাড়ে তিন থেকে চার টাকা হতে পারে।” শালবনির বাসিন্দা সনাতন মাহাতোর কথায়, “প্রায় পাঁচ বিঘা জমিতে এ বার আলু চাষ করেছি। এখন বাজারে যা দাম তাতে চাষের খরচ উঠবে না।” কেশপুরের বাসিন্দা মলয় দাসও বলেন, “এ বার বেশি দামেই আলু বীজ কিনে চাষ করতে হয়েছে। সারের দাম, কীটনাশকের দামও বেড়েছে। বাজারে আলুর দাম যে ভাবে কমে যাচ্ছে, তাতে চাষের খরচ উঠে আসা মুশকিল।” চাষিদের দাবি, বিঘা প্রতি তাঁদের অন্তত ৫-৬ হাজার টাকা ক্ষতি হচ্ছে। কারও কারও আরও বেশি।

চলতি মাসের শেষে পুরোমাত্রায় আলু তোলার কাজ শুরু হবে। তখন আলুর দাম আরও নামতে পারে। কারণ, জেলায় গড়ে ৭৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়। এর আগে আলুর ভাল চাষ হয়েছিল ২০১০ সালে, সাড়ে ৮২ হেক্টর জমিতে। এ বার সেখানে ৮৩ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। কৃষি দফতর সূত্রে খবর, এই পরিমাণ জমি থেকে আলু উত্‌পাদন হতে পারে ৩০ লক্ষ মেট্রিক টন। সেখানে জেলার ৭৫টি হিমঘরে আলু মজুত থাকতে পারে ১৩ লক্ষ মেট্রিক টন। অর্থাত্‌, উত্‌পাদিত আলুর অর্ধেকেরও কম! এক দিকে অত্যাধিক ফলন, অন্য দিকে সহায়ক মূল্যে আলু কেনার ব্যাপারে সরকারের গড়িমসি এই দুইয়ের জেরে এ বার গোড়াতেই বাজারে আলুর দাম কম বলে চাষিদের মত। পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে একাংশ আলু ব্যবসায়ীও চাষিদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছেন। বাধ্য হয়ে চাষিরা কম দামেই আলু বিক্রি করছেন। জেলার আলু চাষি সন্তোষ মাহাতো, অনিল দাসেদের কথায়, “আমরা এখন যে আলু কেজি প্রতি আড়াই টাকায় বিক্রি করছি, কয়েক মাস পর সেই আলু খোলাবাজারে ৭-৮ টাকায় বিক্রি হবে! বছর দুই আগে চাষিদের থেকে যে আলু কেনা হয়েছে চার-সাড়ে চার টাকায়, তা খোলাবাজারে বিক্রি হয়েছে ১২-১৪ টাকায়!” অভিযোগ, একাংশ ব্যবসায়ী প্রচুর আলু হিমঘরে মজুত করে রাখেন বেশি মুনাফার সআশায়। সুযোগ বুঝে সেই আলু হিমঘর থেকে বের করে বাজারে বিক্রি করেন।

সমস্যার কথা মানছেন জেলার কৃষি কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ। তাঁর কথায়, “জেলায় যে পরিমাণ আলু হয়, তা মজুত রাখার জন্য যথেষ্ট সংখ্যক হিমঘর নেই, এটা ঠিক। তবে হিমঘরের সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।” নির্মলবাবু বলেন, “এ বার আবহাওয়া অনুকূল ছিল। তাই ফলন ভাল হয়েছে। সোমবার থেকে সহায়ক মূল্যে আলু কেনা শুরু হয়েছে। এর ফলে, আলুর দাম বাড়বে।”

আগে জেলায় ৮২টি হিমঘর ছিল। পরে নানা কারনে ৭টি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পরবর্তী সময় নতুন করে হিমঘর হয়নি। চাষিদের অনেকেই চান, আলু তোলার পর তা হিমঘরে রাখতে। তাতে পরবর্তী সময় একটু বেশি দাম পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পর্যাপ্ত হিমঘর না থাকার সমস্যার কথা মানছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা। তাঁর আশ্বাস, “জেলায় হিমঘরের সংখ্যা বাড়াতে হবে। বিষয়টি দেখছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

potato subsidised price medinipur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE