Advertisement
০৮ মে ২০২৪
cooking gas

cooking gas: চড়ছে গ্যাসের দাম, বাড়ছে কালোবাজারিও

শুধু গাড়িতেই নয়, নজরদারির ফাঁক গলে বিভিন্ন হোটেল-রেঁস্তোরাতেও কমার্শিয়াল সিলিন্ডারের বদলে ডোমেস্টিক সিলিন্ডার ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে।

সিলিন্ডারের অভাব না থাকলেও উঠছে কালোবাজারির অভিযোগ।

সিলিন্ডারের অভাব না থাকলেও উঠছে কালোবাজারির অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০২১ ০৭:০৪
Share: Save:

চড়া দাম রান্নার গ্যাসের। বাড়ির গিন্নিদের কপালে ভাঁজ। ডিস্ট্রিবিউটরের দোকানের সামনে গ্যাসের জন্য লম্বা লাইনের চেনা ছবি উধাও গত কয়েক মাস ধরে। কিন্তু সকাল হলেই চোখে পড়বে গাড়ি ভর্তি গ্যাস সিলিন্ডার যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন, এত সিলিন্ডার কোথায় যাচ্ছে?

গ্যাসের দাম আগুন হলেও গ্যাসের ডিস্ট্রিবিউটরদের পকেট ভরায় কোনও খামতি নেই বলে অভিযোগ গ্রাহকদের। খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে, এর পিছনে রয়ে‌ছে রান্নার গ্যাসের বেআইনি ব্যবহার। ঘুরপথে রান্নার গ্যাস কখনও অটোয়, কখনও হোটেল বা মেলার খাবারের দোকানের হেঁশেলে খরচ হচ্ছে। কাঁথি, দিঘা, ভগবানপুর, হলদিয়া সহ জেলার বিভিন্ন জায়গাতেই চোখে পড়েছে রান্নার গ্যাসের এমন বেআইনি ব্যবহারের ছবি। এমনও দেখা গিয়েছে, বহু জায়গায় বাড়ির ভিতরেই বিপজ্জনকভাবে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার থেকে গাড়িতে গ্যাস ভরার বন্দোবস্ত রয়েছে। অভিযোগ যে মিথ্যে নয় তার প্রমাণ মিলেছে পুলিশি হানায় এই ধরনের ঘটনা সামনে আসায়। জুলাই মাসে ভগবানপুরে একটি বাড়িতে হানা দিয়ে রান্নার কাজে ব্যবহৃত গ্যাসভর্তি ৪৫টি সিলিন্ডার উদ্ধার করে এনফোর্সমেন্ট শাখা। গ্রেফতার হয় একজন। সেখানে যন্ত্রের সাহায্যে সিলিন্ডার থেকে গ্যাস বের করে তা গাড়িতে ভরা হত বলে অভিযোগ। কিছুদিন আগে পাঁশকুড়াতেও এমন অসাধু কারবারের হদিশ পায় পুলিশ। সেখানে ৩০টি সিলিন্ডার বাজেয়াপ্ত করে এনফোর্সমেন্ট শাখা।

যদিও পুলিশি অভিযানের পরেও পরিস্থতির খুব একটা হেরফের হয়নি। গ্যাসের কালোবাজারি নিয়ে অটোচালকেরা তেল সংস্থাগুলির পরিকাঠামোর অভাবকেই দুষছেন। পরিবেশ দূষণের কারণে কয়েক বছর আগে গ্যাসচালিত অটো চলাচল শুরু হয়। বিভিন্ন রুটের অটো-চালকদের অভিযোগ, গ্যাসের অটো রাস্তায় নামানো হলেও পর্যাপ্ত গ্যাস-স্টেশন করা হয়নি। যেমন কাঁথি মহকুমায় একটি পেট্রল পাম্পেও অটোয় গ্যাস ভরার ব্যবস্থা নেই। এর সুযোগ নিয়েই বিভিন্ন জায়গায় রমরমা বেড়েছে অসাধু গ্যাস চক্রের।

কী ভাবে কাজ করে এই অসাধু চক্র? কাঁথি শহরের আঠিলাগড়ি এলাকার কয়েকজন মহিলা জানান, ক্যানাল পাড়, কুমারপুর এলাকার কয়েকজন ফড়ে তাঁদের গ্যাসের বই সংগ্রহ করে রেখেছে। তারাই সারা বছর ধরে ওই গ্যাসের বই থেকে গ্যাস সিলিন্ডার কিনে নেয়। গ্রাহকদের প্রয়োজন হলে ওই ফড়েরাই বাড়িতে সিলিন্ডার পৌঁছে দেয়। সাধারণভাবে একজন গ্রাহক বছরে ভর্তুকিযুক্ত ১২টি সিলিন্ডার পাওয়ার যোগ্য। দেখা গিয়েছে, এমন অনেক গ্রাহক আছেন যাঁর বছরে ৯ থেকে ১০টি সিলিন্ডার লাগে। সে ক্ষেত্রে তাঁর প্রাপ্য বাকি সিলিন্ডার নিয়ে কালোবাজারি হচ্ছে। কাঁথির এক গ্যাস ডিস্ট্রিবিউটরই জানান, রান্নার ১৪ কেজি ওজনের গ্যাস সিলিন্ডারের দাম এখন ৮৪০ টাকা। আর পাঁচ কেজি ওজনের গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম তিনশো টাকা। দুটো সিলিন্ডার মিশিয়ে ১৯ কেজি বড় সিলিন্ডারে ঢোকানো হচ্ছে। এবং তারপর কমার্শিয়াল গ্যাস সিলিন্ডারের দাম হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে।

শুধু গাড়িতেই নয়, নজরদারির ফাঁক গলে বিভিন্ন হোটেল-রেঁস্তোরাতেও কমার্শিয়াল সিলিন্ডারের বদলে ডোমেস্টিক সিলিন্ডার ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে। কাঁথি শহরের বহু হোটেলেই যা চোখে পড়বে। কাঁথি শহরের এক রেঁস্তোরা মালিকের কথায়, ‘‘নিয়ম মেনে কমার্শিয়াল সিলিন্ডার কেনার জন্য অনেক টাকা লাগে। পয়সা বাঁচাতে অনেকেই তাই ঘুরপথে রান্নার গ্যাস ব্যবহার করে।’’

গ্যাস সংস্থাগুলির বক্তব্য, এই অনিয়ম রোখার দায়িত্ব মূলত জেলা এনফোর্সমেন্টের(ডিইবি)। কিন্তু তাদের যা পরিকাঠামো

তাতে বড় ধরনের অভিযান দূরঅস্ত, বহু ক্ষেত্রে চোখ মেলে অনিয়ম দেখা ছাড়া অন্য উপায় থাকে না। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এনফোর্সমেন্ট শাখার ডিএসপি সুপ্রিয় বসু বলেন, ‘‘সম্প্রতি জেলায় দু’জায়গায় অভিযান হয়ে‌ছে। আগে অক্সিজেনের কালোবাজারি আটকাতে চেষ্টা হয়েছিল। এবার রান্নার গ্যাসের কালোবাজারি নিয়েও পদক্ষেপ শুরু হয়েছে। নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

cooking gas
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE