Advertisement
E-Paper

জেল-বন্দিদের পুজোয় শাপমোচনের আর্তি

জেলের আবাসিকেরা পুজোর সপ্তাহ খানেক আগে থেকেই দম ফেলার সময়টুকু পাননি। সকলেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন পুজোর জোগাড়ে। পুজো আয়োজনে বিভিন্ন কমিটি গড়া হয়েছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৭ ০১:১৯

ওদের কেউ খুনের দায়ে যাবজ্জীবন জেল খাটছে, কেউ ধর্ষণের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। সমাজের চোখে দোষী এই মানুষগুলোই চোখের জলে দুর্গাপুজো করল জেল চত্বরেই। পুজোর অঞ্জলিতে ধরা পড়ল আর্তি— ‘মাগো, ভুল করেছি। ক্ষমা করে দাও। শুধরে যাওয়ায় শক্তি দাও।’

প্রতি বছরের মতো এ বারও মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে দুর্গাপুজো হয়েছে। উদ্যোক্তা জেলের রিক্রিয়েশন ক্লাব। বাহারই মুর্মু, গৌর পাইন, ফিরোজ আলি খান, সিরাজ মণ্ডল, দেবু হাইতদের মতো বিভিন্ন দুষ্কর্মে জেলবন্দিরাই নিজে হাতে পুজোর আয়োজন করেছেন। জেলের এক আধিকারিক বলছিলেন, ‘‘এই পুজো একদিকে যেমন ওদের কাছে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার, তেমনই পাপমুক্তিরও বটে। মায়ের কাছে নিজেদের দোষ স্বীকার করে ওদের অনেকেই কিছুটা হালকা হয়।’’

জেলের আবাসিকেরা পুজোর সপ্তাহ খানেক আগে থেকেই দম ফেলার সময়টুকু পাননি। সকলেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন পুজোর জোগাড়ে। পুজো আয়োজনে বিভিন্ন কমিটি গড়া হয়েছিল। আবাসিকেরা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে মণ্ডপসজ্জা, আলোকসজ্জা এবং খাওয়াদাওয়ার জন্য পৃথক কমিটি গড়েছিল। পুজোর ক’দিন ছিল নানা স্বাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হয়েছে। ছৌনাচ, ঝুমুর গান, আদিবাসী নৃত্য করেছেন আবাসিকেরাই।

এ বার পুজো কমিটির সম্পাদক ছিলেন গৌর পাইন। গৌর যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আবাসিক। অন্য দিনের খরচ বাঁচিয়ে পুজোর চারটে দিন ভুরিভোজের আয়োজন করেন আবাসিকেরা। আলোচনার মাধ্যমেই মেনু ঠিক হয়েছিল। মেনুতে ছিল ভাত, ডাল, তরকারি, কাতলা মাছের কালিয়া, পাবদা মাছ, মাংস, মুড়িঘন্ট প্রভৃতি। এক-একদিন এক- এক রকম মেনু। সপ্তমীতে কাতলা মাছ, নবমীতে পাবদা, দশমীতে মাংস আর মুড়িঘন্ট। আবাসিকদের এই পুজোয় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন কর্মী- আধিকারিকেরাও। জেলের মধ্যে থাকা রিক্রিয়েশন ক্লাব চত্বরেই তৈরি হয়েছিল মণ্ডপ।

জেলে দুর্গাপুজোর খরচ জোগাড় হয় কী করে?

জেলের এক সূত্রে খবর, পুজোর জন্য আবাসিকেরা তাঁদের একদিনের পারিশ্রমিক দিয়েছিলেন। আর ভুরিভোজের খরচ অন্য খাত থেকে বাঁচিয়ে জোগাড় করা হয়েছিল। যেমন, কোনও সপ্তাহের মাছ পুজোর দিনের জন্য তুলে রাখা হয়েছিল। ওই সপ্তাহে আবাসিকেরা মাছ খাননি। ওই মাছ এসেছে পুজোর দিনে। সেই সঙ্গে জেলের কর্মী-আধিকারিকেরা সাধ্যমতো চাঁদা দিয়েছেন, নানা ভাবে সহযোগিতাও করেছেন।

বছরের পর বছর চার দেওয়ালের মধ্যেই দিন কাটে সিরাজ, দেবু, গৌরদের। পুজো এলেই ফেলে আসা পরিজনেদের জন্য মন কেমন করে। সেই দুঃখের মেঘ দূরে সরিয়ে ওঁরা সবাই উত্সবে মাতেন। মেদিনীপুর জেলের এক কর্তা বলছিলেন, “পুজোর ক’টা দিন ওঁরা একটু অন্য রকম ভাবে কাটান। অঞ্জলি, পাতপেড়ে খাওয়া, নাচ-গানের অনুষ্ঠান— সব মিলিয়ে এই সময়টায় জেলেও এসে পৌঁছয় খোলা হাওয়া।’’

Prisoners Durga puja
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy