বিধায়ক তহবিলে বরাদ্দ অর্থ পড়ে থাকার অভিযোগ প্রায়ই ওঠে। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, এ বার বিধায়ক তহবিলে ইতিমধ্যে ৩০ লক্ষ করে টাকা এসেও গিয়েছে। দ্রুত নবনির্বাচিত বিধায়কদের প্রকল্পের প্রস্তাব জমা দিতেও বলা হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন তহবিলের অর্থ এসে গিয়েছে। বিধায়কদের বলা হয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব প্রকল্পের প্রস্তাব জমা দিতে।”
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ১৯ জন বিধায়ক রয়েছেন। বিধায়ককদের তহবিলে প্রতিবছর ৬০ লক্ষ করে টাকা বরাদ্দ হয়। এই টাকায় বিধায়কদের দেওয়া প্রস্তাব মোতাবেক উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়। পুরো বিষয়টি তত্ত্বাবধান করে জেলা পরিকল্পনা দফতর। এই দফতরই বিধায়ক তহবিলের টাকা খরচের বিষয়টি দেখভাল করে। ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষের প্রথম পর্যায়ে প্রত্যেক বিধায়কের তহবিলে ইতিমধ্যে ৩০ লক্ষ করে টাকা এসে গিয়েছে।
নিজের এলাকার বিভিন্ন প্রকল্পের প্রস্তাব অনুমোদন, ব্যয় বরাদ্দ অনুমোদন করার মতো কাজে বিধায়কদেরই উদ্যোগী হওয়ার কথা। যদিও অনেক বিধায়ক তা ঠিকমতো করেন না বলে অভিযোগ। ফলে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ করা যায় না। কিছু ক্ষেত্রে বিধায়ক তহবিলের টাকার একাংশ পড়েও থাকে। ইতিমধ্যে নবর্নির্বাচিত বিধায়কদের নিয়ে জেলায় বৈঠক হয়েছে। সেই বৈঠকে সময়ের মধ্যে প্রকল্পের প্রস্তাব জমা দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “এই তহবিলের ক্ষেত্রে জেলার পারফরম্যান্স ভাল। প্রায় ৯৫ শতাংশ টাকাই খরচ হয়। তাও কিছু কিছু ঘাটতি থেকে যায়।”
ওই কর্তার কথায়, “আগে একাধিক বিধায়ককে বারবার জানানো হয়েছে, প্রস্তাবগুলো আইনগত পদ্ধতি মেনে জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু কয়েকজন তা করেননি। ফলে, কিছু সমস্যা হয়। কয়েকজনের তহবিলের কিছু টাকা খরচ করাও সম্ভব হয়নি। আশা করি, এ বার তা হবে না। সকলে সময়ের মধ্যেই প্রকল্পের প্রস্তাব জমা দেবেন।” দ্রুত প্রকল্পের প্রস্তাব জমা দেওয়ার আশ্বাস দিচ্ছেন বিধায়কেরাও। নারায়ণগড়ের বিধায়ক প্রদ্যোৎ ঘোষ বলেন, “শীঘ্রই প্রকল্পের প্রস্তাব জমা দেব।” একই আশ্বাস গড়বেতার বিধায়ক আশিস চক্রবর্তীরও।
বছর কয়েক আগে এলাকা উন্নয়ন তহবিলের কাজকর্ম নিয়ে কিছু প্রশ্ন ওঠে অডিট রিপোর্টে। সেই রিপোর্ট পাওয়ার পরে নড়েচড়ে বসে রাজ্য সরকার। অডিট রিপোর্টে উল্লেখ ছিল, প্রাপ্য অর্থ খরচ না হওয়ায় স্থানীয়স্তরে উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে রাজ্য থেকে রিপোর্টের প্রতিলিপি পাঠিয়ে প্রতিটি জেলাকে সতর্ক করা হয়। এই নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ করার নির্দেশও দেওয়া হয়। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে বিধায়ক এলাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের পর্যালোচনা করতে প্রতি মাসে মহকুমা এবং ব্লকস্তরে বৈঠক করার নির্দেশও দেয় রাজ্য সরকার। অবশ্য তাতে প্রকল্পের কাজে গতি আসে নামমাত্রই! এই তহবিলের অর্থ খরচে অনেক সময়ই ব্যর্থতার অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ, নিয়ম মেনে খরচের ‘ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট’ (ইউসি) জমা দেওয়া তো দূরের কথা, প্রাপ্য টাকা সময় মতো খরচই করতে পারেন না একাংশ বিধায়ক।
এলাকা উন্নয়ন তহবিলে বিধায়কদের জন্য বছরে যে ৬০ লক্ষ টাকা করে বরাদ্দ হয়, তার ৩০ শতাংশ টাকা খরচ হলেই পরের ধাপের টাকা পেতে পারেন একজন বিধায়ক। জেলা প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, “৩০ শতাংশ টাকা খরচ করতে না পারায় অন্য জেলায় সব বিধায়ক প্রাপ্য টাকাই পাননি। এই জেলায় তা হয়নি। সব বিধায়কই গত পাঁচ বছরে ৩ কোটি টাকা করে পেয়েছেন।” পাশাপাশি, ওই কর্তার কথায়, “সময়ের মধ্যে যাতে প্রকল্পের প্রস্তাব জমা পড়ে, সেদিকে সব বিধায়ককেই নজর রাখতে হবে। কোথাও দুর্বলতা থাকলে তা খুঁজে বের করতে হবে! শুধু দায় এড়ালেই চলবে না!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy