Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

স্বেচ্ছায় সরে যেতে চান কুড়মি সমাজের নেতা

কুড়মি সমাজের কেন্দ্রীয় কমিটির একাংশ নেতৃ্ত্বের বিরুদ্ধে নাম না করে তোপ দেগেছেন রাজেশ।

রাজেশের ফেসবুক পোস্ট। নিজস্ব চিত্র

রাজেশের ফেসবুক পোস্ট। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৯ ০২:০৪
Share: Save:

আদিবাসী কুড়মি সমাজের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক পদ থেকে স্বেচ্ছাবসর নিচ্ছেন রাজেশ মাহাতো। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি তাঁকে শো-কজ করায় অভিমানে রাজেশ এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠমহলের দাবি। শো-কজের চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে রাজেশ রবিবার বলেন, ‘‘আর ভাল লাগছে না। শো-কজের চিঠি পেয়েছি। স্বেচ্ছাবসর নেব সিদ্ধান্ত নিয়েছি। রবিবার ডাক বন্ধ। তাই সোমবারই চিঠি পাঠাচ্ছি।’’

কুড়মি সমাজের কেন্দ্রীয় কমিটির একাংশ নেতৃ্ত্বের বিরুদ্ধে নাম না করে তোপ দেগেছেন রাজেশ। তাঁর কথায়, ‘‘পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলার সমাজের নেতারা ভোটের আগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন। তখন দোষ হল না। অথচ পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের সামাজিক নেতারা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনায় বসায় সেটা দোষের হয়ে গেল! কাদা ছোড়াছুড়ির মধ্যে থাকতে চাই না। তাই পদ থেকে সরে যাচ্ছি। তবে সমাজের কাজ করে যাব।’’ জঙ্গলমহলের ৪২ শতাংশ কুড়মি ভোটের দিকে নজর ছিল তৃণমূল ও বিজেপি দু’দলেরই। কুড়মিদের তিন দফা দাবিতে গত কয়েক দশক ধরে অরাজনৈতিক ভাবে আন্দোলন করে চলেছে কুড়মিদের সামাজিক সংগঠন। সেই আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন রাজেশ। ভোটের আগে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে চাপে রাখতে জঙ্গলমহলের বিভিন্ন জেলায় দাবি আদায়ের লক্ষ্যে একের পর এক জনসভা করে কুড়মিরা। ওই জনসভা গুলিতে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয় ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী বিরবাহা সরেনকে কখনই সমর্থন করবেন না কুড়মিরা। এরপরই তৃণমূলের মহাসচিব তথা ঝাড়গ্রামের দলীয় পর্যবেক্ষক পার্থ চট্টোপাধ্যায় যোগাযোগ করেন রাজেশের সঙ্গে। ভোটের ঠিক আগে ঝাড়গ্রামে কুড়মি সমাজের ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা নেতারা পার্থের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে পার্থের দাবি ছিল, কুড়মিরা বিরবাহাকে সমর্থন করতে সম্মত হয়েছেন। পার্থের বৈঠকের পরদিনই শিলদায় সাংবাদিক বৈঠক ডেকে কুড়মি সমাজের ‘মূলখুঁটি-মূলমানতা’ অজিতপ্রসাদ মাহাতো জানিয়ে দেন, বিরবাহাকে সমর্থন নয়। যাঁরা সমর্থন দেওয়ার কথা দিয়েছেন তাঁরা সংগঠনের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। এরপরই সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শশাঙ্কশেখর মাহাতো রাজেশকে শো-কজের চিঠি পাঠান।

শনিবার শো-কজের চিঠি হাতে পেয়ে রবিবারই সেটি ফেসবুকে পোস্ট করে দেন রাজেশ। এতে বেজায় চটেছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা। অজিতপ্রসাদ বলেন, ‘‘বিরবাহার কুড়মি-বিরোধী স্ট্যান্ডের জন্য আমরা তাঁকে সমর্থন করব না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। রাজেশ সেই সিদ্ধান্ত মানেননি। এখন আবার শো কজের চিঠি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছেন। স্বেচ্ছাবসর নিয়ে দায় এড়ালে চলবে না জবাব রাজেশকে দিতেই হবে। না হলে সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে।’’ সেই সঙ্গে অজিতপ্রসাদ জানান, কুড়মিরা বিরবাহাকে সমর্থন করবেন না বলে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু কোনও বিশেষ দলকে সমর্থন করার ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ডেকে আমাদের সঙ্গে সভা করে আমাদের দাবি নিয়ে সংসদে সওয়াল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আমরা কিন্তু বিনিময়ে সমর্থনের কোনও প্রতিশ্রুতি দিইনি।

খড়্গপুর গ্রামীণের বেনাপুর উচ্চ মাধ্যামিক বিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষক বছর ছেচল্লিশের রাজেশের বাড়ি ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়ায়। রাজেশ বলেন, ‘‘বার বার পার্থ চট্টোপাধ্যায় ফোন করেছিলেন। তাই জেলাস্তরের নেতাদের আলোচনা করতে পাঠিয়েছিলাম। সরাসরি তৃণমূলকে সমর্থন করার কথা আমি বলিনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kurmi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE