Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

বাংলার ‘মা লক্ষ্মী’ মন জিতে নিল ত্রিপুরার

১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের আওতায় ‘মা লক্ষ্মী বৃক্ষ পাট্টা’ প্রকল্পের প্রশংসা করেন ত্রিপুরা সরকারের প্রতিনিধি দল। ত্রিপুরার আটটি জেলায় ওই প্রকল্প রূপায়িত করতে এ দিন তাঁরা আগ্রহ প্রকাশ করেন।

বুধবার পটাশপুরে-২ ব্লকে পরিদর্শনে ত্রিপুরার প্রতিনিধি দল। নিজস্ব চিত্র

বুধবার পটাশপুরে-২ ব্লকে পরিদর্শনে ত্রিপুরার প্রতিনিধি দল। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পটাশপুর শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৮ ০৭:১০
Share: Save:

তাঁরা এলেন। ঘুরে দেখলেন। ভূয়সী প্রশংসা করে নিজেদের রাজ্যেও প্রকল্পের রূপায়ণের কথা বললেন।

চার দিনের রাজ্য সফরে এসেছে ত্রিপুরা সরকারের প্রতিনিধি দল। ওই দলে রয়েছেন ত্রিপুরার গ্রাম উন্নয়ন দফতরের অতিরিক্ত সচিব প্রদীপকুমার চক্রবর্তী, রাজ্যের আট জেলার আট বিডিও এবং বিভাগীয় ইঞ্জিনিয়ারেরা। বুধবার পটাশপুর-২ ব্লকে সরকারি প্রকল্পের পরিদর্শন করেন প্রতিনিধিরা। ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের আওতায় ‘মা লক্ষ্মী বৃক্ষ পাট্টা’ প্রকল্পের প্রশংসা করেন তাঁরা। ত্রিপুরার আটটি জেলায় ওই প্রকল্প রূপায়িত করতে এ দিন তাঁরা আগ্রহ প্রকাশ করেন।

প্রতিনিধি দলের তরফে এ দিন জানানো হয়, এই রাজ্যের একাধিক প্রকল্পের সাফল্য এবং তার কারণ খতিয়ে দেখে ত্রিপুরায় তুলে ধরাই তাদের মূল লক্ষ্য। গত মঙ্গলবার ওই দল মহিষাদল ব্লকের ইটামগরা গ্রাম পঞ্চায়েতের জৈব গ্যাস প্রকল্প, খেজুরি-১ ব্লকের হেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের জৈব সার প্রকল্প এবং খেজুরি-২ ব্লকের নিচকসবা গ্রাম পঞ্চায়েতের নদীর পাশে বন দফতরের ম্যানগ্রোভ প্রকল্প পরিদর্শন করে।

এ দিন পটাশপুরে-২ ব্লকের খড়ূই গ্রামীণ হাট, কামধেনু ডেয়ারি প্রকল্প এবং বাগমারী রাস্তার ‘মা লক্ষ্মী’ প্রকল্পের ঘুরে দেখেন প্রতিনিধিরা। তিন ব্লকের ছয়টি প্রকল্পের মধ্যে ‘মা লক্ষ্মী’ প্রকল্পকে আর্থ সামাজিক এবং পরিবেশ বান্ধব বলে তকমা দিয়েছেন ত্রিপুরার গ্রাম উন্নয়ন দফতরের সচিব। উল্লেখ্য, ব্লক দফতরের পৃষ্ঠপোষকতায় ২০১৬ সালে ‘মা লক্ষ্মী’ প্রকল্প শুরু হয়েছে। ওই প্রকল্পে দুঃস্থ পরিবারকে ২৫০টি চারাগাছ দেওয়া হয়। পাঁচ বছর ধরে সেগুলির পরিচর্চা করা হবে এবং অন্তত ২০০টি গাছ বাঁচিয়ে রাখতে হবে। প্রতি গাছের পরিচর্চার জন্য মাসে ১০ টাকা দেওয়া হবে। আর পাঁচ বছর পরে এককালীন ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে।

বৃক্ষ পরিচর্যায় গরীব পরিবারের আর্থিক উপার্জনের সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের অভিনব ওই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান প্রদীপবাবু। তিনি বলেন, ‘‘বিভিন্ন প্রকল্পের মধ্যে মা লক্ষ্মী প্রকল্প আমাদের কাছে সেরা মনে হয়েছে। এতে এক দিকে যেমন আর্থিক দিকটি সুনিশ্চিত হচ্ছে। তেমনই মেয়েদের আঠারো বছর পর্যন্ত পড়ানোও সুনিশ্চিত হচ্ছে। এটি বাল্যবিবাহ রোধে গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রকল্পের সাফল্য দেখে আমরাও আগ্রহী হয়েছি।’’

দলের আর এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘ত্রিপুরায় বনসৃজন প্রকল্প রয়েছে। তবে সরকারি ভাবে বৃক্ষের পাট্টা ব্যক্তি হাতের তুলে দেওয়া হয় না। সেখানে কোনও ব্যক্তির নিজস্ব জায়গায় উপর সরকারি ভাবে সুপারি, রাবার ও মৌসুমীর মতো ফলের বাগান তৈরি করা তার ফসল তুলে বিক্রি করে স্বনির্ভর হয়। কিন্তু মা লক্ষ্মীর মতো এই ধরনের অভিনবত্ব প্রকল্পে সমাজের পক্ষে ভীষণ ভাবে উপযোগী হবে বলে মনে হচ্ছে।’’

রাজ্যের শাসক তৃণমূল এবং ত্রিপুরার সদ্য ক্ষমতায় আসা বিজেপি রাজনীতিতে যুযুধান। এই পরিস্থিতিতে সেখানের বিজেপি সরকারের প্রতিনিধিদের বাংলায় এসে প্রকল্পের প্রশংসা করার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েই দেখছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।

গোটা ব্যাপারে পটাশপুরের বিডিও শুভজিৎ কুণ্ডু বলেন, ‘‘মা লক্ষ্মী প্রকল্পে আর্থিক রোজগারের বিষয়টি সুনিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া, এতে নাবালিকা বিবাহ বন্ধ করা সহজ হচ্ছে। ত্রিপুরার প্রতিনিধি দল এই প্রকল্পের সাফল্য দেখে নিজের রাজ্যেও তা চালু করতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। আমাদের কাছে এটাও অনেক বেশি গর্বের বিষয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tripura West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE