পার: ও পাড়ে উঠলেই চলবে সাইকেল। নিজস্ব চিত্র
বছর কয়েক আগে দুর্গাপুজোর কথা— ভরা নদী সাঁতরে পেরিয়ে পুজো মণ্ডপে যাচ্ছিলেন ভক্ত কুম্ভকার। স্রোতের টানে ভেসে গিয়ে আস্ত মানুষটা আটকে গিয়েছিলেন লকগেটের ভিতর। তাঁর পরিজনেরা আজও সে কথা মনে করে শিউরে ওঠেন। বলেন, ‘‘দুর্গার কৃপার সে যাত্রা বেঁচে গিয়েছিলেন মানুষটা।’’ দমকল ডেকে অনেক কষ্ট করে উদ্ধার করা হয়েছিল ভক্তবাবুকে।
গ্রামের নাম মুড়াকাটি— নদীর নাম পুতরুঙ্গি। আপাত শীর্ণ নদীটি পায়ে হেঁটেই পেরিয়ে যান জামবনির কেন্ডডাংরি পঞ্চায়েতের মুড়াকাটি ও সংলগ্ন ১০-১২টি গ্রামের বাসিন্দারা। কিন্তু এক নাগাড়ে বৃষ্টি হলেই চেহারা বদলে যায় নদীর। তখন ও পাড়ের ঝাড়গ্রাম ব্লকে ঢুকতে গেলে ৯-১০ কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে হয়।
সারা বছর তবু যেমন-তেমন! কিন্তু দুর্গাপুজোয় মুড়াকাটি, জোকা, শিরষি, কাপাসি, পড়াডিহা, বালিডিহা, চুটিয়াস ইটামোড়ো, কেন্দসার, কানিমহুলির মতো গ্রামগুলি একেবারেই অন্ধকার। জামবনি ব্লকের ভিতর ওই গ্রামগুলি বেশির ভাগই ঝাড়গ্রাম ঘেঁষা। একেবারে কাছে যে সর্বজনীন পুজোটি হয়, সেটি ঝাড়গ্রামের চন্দ্রিতে। মাঝখানে শুধু পুতরুঙ্গি। তাই নদীটুকু পেরিয়ে যাওয়ার আকুল প্রত্যাশা নিয়েই পুজো কাটিয়ে দেন স্থানীয়রা।
মুড়াকাটি বা সংলগ্ন এলাকা থেকে জামবনির ব্লক-সদর গিধনি এবং জেলা সদর ঝাড়গ্রাম শহরের দূরত্ব ১৬-১৭ কিলোমিটার। অথচ ঝাড়গ্রাম ব্লকের চন্দ্রি অনেক কাছে। মুড়াকাটির কাছে ছোট্ট শাখানদী পুতরুঙ্গি পেরলেই চন্দ্রি। সেখান দিয়ে বাজারহাট, স্কুল, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও বাসস্ট্যান্ডের রাস্তায় পৌঁছনো যায় সহজে।
পুতরুঙ্গির সর্বত্র গভীরতা সমান নয়। তাই ডিঙি-নৌকার দাঁড় বাওয়াও যায় না। সাধারণত জল কমই থাকে। তবে জল বাড়লেও বেশির ভাগ মানুষ প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কাঁধে সাইকেল তুলে বুক জল ভেঙে নিত্য যাতায়াত করেন। কিন্তু হড়পা বান এলেই বিপদ। স্থানীয় বাসিন্দা রবি পাল, তারিণী পাল, গুরুচরণ পালরা জানালেন, বর্ষায় অবস্থা খুবই খারাপ হয়। রাত বিরেতে কেউ অসুস্থ হলেও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া বিড়ম্বনা। স্কুল পড়ুয়া মোহিত পাল, গৌরাঙ্গ পাল, পূজারানি পালরা বলে, ‘‘নদীতে জল কম থাকলে আধভেজা হয়ে ও পাড়ে উঠে স্কুলে যাই।’’ কিন্তু জল বাড়লে ৯ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে ঘুরপথে স্কুলে যেতে হয়।
দিন কয়েক আগেই মুড়াকাটিতে গিয়ে দেখা মিলেছিল রঘুনাথ পাল, রবি সরেনের। সাইকেল ঘাড়ে করে বুক জল ঠেলে নদী পেরোচ্ছিলেন তাঁরা— যাবেন চন্দ্রি বাজারে, কেনাকাটা করতে। তাঁরাই জানালেন, দশটি গ্রামের কয়েক হাজার বাসিন্দার জন্য পুতরুঙ্গির উপর সেতুর দাবিতে বহুবার প্রশাসনের কাছে দরবার করেছেন তাঁরা। গত বছর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও চিঠি লিখেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে জামবনি ব্লক প্রশাসনকে বিষয়টি দেখতে বলা হয়েছিল গত সেপ্টেম্বরে।
তারপর পুজো গিয়েছে। এ বারও পুজো চলে যাবে। সেতুর জন্য দেখাশোনাও করেনি প্রশাসন। জামবনি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সমীর ধল বলেন, “সেতু তৈরির জন্য বড় অঙ্কের অর্থ দরকার। এ জন্য জেলা পরিষদের মাধ্যমে রাজ্য সরকারের কাছে বরাদ্দ চেয়ে আবেদন জানানো হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy