Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
খড়্গপুরে সন্ত্রাসের অভিযোগ বিরোধীদের

দুষ্কৃতীদের কাজে লাগাচ্ছে শাসকদল

যার নামে তৃণমূল নেতা গৌতম চৌবে খুনের অভিযোগ উঠেছিল, যে অভিযোগে সাজাও হয়েছিল তাঁর, খড়্গপুরের এক সময়ের রেলের সেই মাফিয়া ‘ডন’ বাসব রামবাবু পুর নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থীর সমর্থনে প্রচার করলেন। রামবাবুর অবশ্য দাবি, তিনি তৃণমূলে যোগ দেননি। তৃণমূল প্রার্থী অঞ্জনা কুমারী তাঁর পরিচিত। তাই তাঁর হয়ে প্রচার করেছেন। অন্য কোথাও তিনি প্রচারে যাচ্ছেন না। তবে শুধু তৃণমূল নয়, অন্য দলগুলির বিরুদ্ধেও এর আগে মাফিয়াদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ উঠেছে।

সুমন ঘোষ
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৪৫
Share: Save:

যার নামে তৃণমূল নেতা গৌতম চৌবে খুনের অভিযোগ উঠেছিল, যে অভিযোগে সাজাও হয়েছিল তাঁর, খড়্গপুরের এক সময়ের রেলের সেই মাফিয়া ‘ডন’ বাসব রামবাবু পুর নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থীর সমর্থনে প্রচার করলেন। রামবাবুর অবশ্য দাবি, তিনি তৃণমূলে যোগ দেননি। তৃণমূল প্রার্থী অঞ্জনা কুমারী তাঁর পরিচিত। তাই তাঁর হয়ে প্রচার করেছেন। অন্য কোথাও তিনি প্রচারে যাচ্ছেন না। তবে শুধু তৃণমূল নয়, অন্য দলগুলির বিরুদ্ধেও এর আগে মাফিয়াদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ, সব দলই নানা সময়ে মাফিয়াদের কাজে লাগিয়েছে। এক সময় রামবাবু ফরওয়ার্ড ব্লকের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর যোগের বিষয়টিও আগে প্রকাশ্যে আসেনি। এ বার সরাসরি তৃণমূলের হয়ে প্রচারে করলেন তিনি। বিজেপির বিরুদ্ধেও শহরের আর এক রেল মাফিয়া শ্রীনু নাইডু-র সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ উঠেছিল। সম্প্রতি শ্রীনু-র স্ত্রী পূজা বিজেপিতে যোগ দেন। পুরভোটে তিনি বিজেপি-র প্রার্থীও হয়েছেন। শ্রীনুকে অবশ্য নির্বাচনের আগেই পুলিশ গ্রেফতার করেছে। বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, শ্রীনু জেলে থাকলেও শহরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তাঁর অনুগামীরা।

নব্বইয়ের দশক থেকেই রেলের নানা কাজে একাধিপত্য গড়ে ওঠে মাফিয়া বাসব রামবাবুর। তাঁর অঙ্গুলি হেলনেই রেলের নানা কাজের বরাত পেতেন ঠিকাদাররা। কোটি কোটি টাকার স্ক্র্যাপ নিলামের দায়িত্ব পেত রামবাবুর পছন্দের লোকেরা। গৌতম চৌবে খুনে রামবাবুর যাবজ্জীবন সাজা হয়। যদিও এখন তিনি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে শর্তাধীন জামিনে রয়েছেন। রামবাবু জেলে থাকার সময়ই উত্থান হয় রেল মাফিয়া শ্রীনু নাইডুর। প্রথম দিকে রামবাবুর সঙ্গে শ্রীনুর ঘনিষ্ঠতা থাকলেও পরে সম্পর্কে চিড় ধরে।

কেন শাসক দল তৃণমূলকে পুর নির্বাচনে রামবাবুর হাত ধরতে হল? গত পুর নির্বাচনে খড়্গপুর পুরসভার ৩৫ আসনের মধ্যে ১২টি পেয়েছিল কংগ্রেস। ৬টি আসন পায় বামফ্রন্ট। বিজেপি ও নির্দল পেয়েছিল ১টি করে। আর তৃণমূল পেয়েছিল ১৫টি। ফলে কেউই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। গত লোকসভায় খড়্গপুর বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রথম স্থানে ছিল। তাই পদ্ম-কাঁটা সামলাতে এ বার আরও তৎপর শাসক দলের জেলা নেতৃত্ব।

দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রামবাবু নিজে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ঘুরলেও তাঁর অনুগামীরা আরও ৩টি ওয়ার্ডে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাঁদের লক্ষ্য ১৭, ১৩ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে জয় এনে দেওয়া। এক সময়ের রামবাবুর ঘনিষ্ট বাগ্গা রাও আগেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। গত নির্বাচনে ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়ে হারেন তিনি। সেই ওয়ার্ড এ বার মহিলা সংরক্ষিত হওয়ায় নিজে না দাঁড়িয়ে ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থীকে জেতাতে ময়দানে নেমেছেন বাগ্গা। যদিও বাগ্গার কথায়, “নির্বাচনে সন্ত্রাস হবে কেন? শান্তিপূর্ণ ভোটই হবে। ”

ভোটের আগেই গত মঙ্গলবার সকাল থেকে নিখোঁজ হয়ে যান ‘পশ্চিম মেদিনীপুর ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অব কমার্স’-এর সভাপতি আলো সিংহ। আলোবাবুর স্ত্রী কেকা সিংহের কথায়, “খড়্গপুর টাউন থানার পুলিশ আমার স্বামীকে থানায় দেখা করতে বলেন। তিনি দেখা করতে বেরিয়ে যান। তারপর ওর খোঁজ মেলেনি।’’ তাঁর দাবি, পুলিশ নিখোঁজের অভিযোগও নিতে চায়নি। তাই তিনি ক্যুরিয়ারের মাধ্যমে অভিযোগ জানিয়ে দিয়েছেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, ভোটের আগে তৃণমূল বিরোধী হিসেবে পরিচিত আলোবাবুকে পুলিশ অন্যত্র সরিয়ে দিয়েছে। এর পিছনে শাসক দলেরও মদত রয়েছে।

প্রশ্ন উঠছে, আগে তো সিপিএমের বিরুদ্ধেও মাফিয়া যোগ, এক তরফা ভোট করানোর অভিযোগ বারেবারেই উঠেছিল? সিপিএমের ইন্দা লোকাল কমিটির সম্পাদক কামরুজ্জামান এই প্রসঙ্গে বলেছেন, “তাই যদি হত, তা হলে বামফ্রন্টের আমলেও খড়্গপুরে কংগ্রেসের বিধায়ক, খড়্গপুর পুরসভা কংগ্রেসের দখলে থাকত কী করে?”

মাফিয়া যোগের নালিশ মানতে রাজি নন তৃণমূলের খড়্গপুর শহর সভাপতি তথা দলের প্রার্থী দেবাশিস চৌধুরী। তাঁর অভিযোগ, “কংগ্রেস- আর সিপিএম হারের ভয়ে মাফিয়াদের হাত ধরার চেষ্টা করছে। মানুষই এর জবাব দেবে।” তাহলে রামবাবু কেন আপনাদের হয়ে প্রচার করলেন? তাঁর জবাব, “আমি পরিষ্কার জানিয়ে দিতে চাই, দল নির্বাচন জেতার জন্য দুষ্কৃতীদের সাহায্য নেবে না। কোনও অসামাজিক লোক কোথায় চা, পানের দোকানে কাকে ভোট দিতে বলল, তা নিয়ে আমাদের কী বলার আছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE