Advertisement
E-Paper

আমার নেই, বাবার লাইসেন্স আছে

মোহিত নায়েক, সন্দীপ ভেঙ্কটেশ, নলিন কাশ্যপ— ঝাপেটাপুরের রাস্তায় ঝড় তোলা গতি তিনবন্ধুর। পরনে স্কুলের ইউনিফর্ম, বয়স ছোঁয়নি আঠারোর কোঠা। হেলমেটের বালাই নেই। বাহন মোটর বাইকটি চালানোর লাইসেন্স নেই মোহিতের।

দেবমাল্য বাগচী

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:৪২
ছুটির পর স্কুলের বাইরে  রাখা মোটর বাইকে চেপে শুরু হয় শহর পরিক্রমা। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

ছুটির পর স্কুলের বাইরে রাখা মোটর বাইকে চেপে শুরু হয় শহর পরিক্রমা। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

মোহিত নায়েক, সন্দীপ ভেঙ্কটেশ, নলিন কাশ্যপ— ঝাপেটাপুরের রাস্তায় ঝড় তোলা গতি তিনবন্ধুর। পরনে স্কুলের ইউনিফর্ম, বয়স ছোঁয়নি আঠারোর কোঠা। হেলমেটের বালাই নেই। বাহন মোটর বাইকটি চালানোর লাইসেন্স নেই মোহিতের। কিন্তু নাবালকের মুখে যুক্তি তৈরি, ‘‘বাবার লাইসেন্স আছে তো!’’

ওরা সকলেই কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। সহপাঠীরা জানিয়েছে, ওই তিন ছাত্র নিয়মিত স্কুলে আসে একটি মোটর বাইকে চড়ে। সেটি মোহিতের। রাস্তার ধারে বাইক রেখে স্কুলে ঢোকে তিন জন। ছুটির পর সঙ্গীদের নিয়ে মোটর বাইকে চড়েই বাড়ি ফেরে। তবে ঝড়ের গতিতে শহরটা তিনপাক ঘুরে নেয়। গত বৃহস্পতিবারও তাঁদের ঠিক একইভাবে দেখা গিয়েছে স্কুল চত্বরে। হেলমেট নেই, অপ্রাপ্তবয়স্ক তিন বন্ধুকে প্রশ্ন করতেই একজন বলেছে, “রোজ মোটর বাইক নিয়ে স্কুলে আসি না। আজকেই তিনজন মিলে এসেছিলাম, তাই। হেলমেট আছে। পরে নেব?”

কিন্তু এই তিন জন তো শুধু উদাহরণ। শহরের উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলির বেশিরভাগ পড়ুয়াই মোটর বাইকে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। অথচ বাইক নিয়ে স্কুলে আসার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি স্কুলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ঝাপেটাপুর কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ কিশোর কুমার বলেন, “আমাদের স্কুলেও মোটর বাইকে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আমরা প্রতিদিন প্রার্থনার আগে এ বিষয়ে ছাত্রদের সাবধানও করি। কিন্তু অভিভাবকেরা সচেতন নয়।’’

কিন্তু সেই নিষেধ মানে না পড়ুয়ারা। স্কুল চত্বরে মোটর বাইক নিষিদ্ধ। তাই পাঁচিলের বাইরে রাস্তায় মোটর বাইক দাঁড় করিয়ে রেখে ক্লাস করে তারা। গতির বিধি, হেলমেট, লাইসেন্স— কোনও কিছুর পরোয়া নেই। শুধু ছেলেরা নয়। মেয়েরাও স্কুলটি চালিয়ে স্কুলে আসে। হেলমেট পরে না। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, মূলত ইংরেজি ও হিন্দি মাধ্যম স্কুলের বাঙালি, অবাঙালি উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে মেয়েদের মধ্যেই মোটর বাইকের ব্যবহার বেশি। শহরের ইন্দা বালক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পার্থ ঘোষ অবশ্য বলেন, “আমাদের স্কুলে এখন কেউ বাইক নিয়ে আসে না। সকলকে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু বাড়ি ফিরেই তারা বাবা, কাকার মোটর বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। অনেক সময় স্কুলের পোশাকও থাকছে।’’ তাঁর দাবি, পরিবারে সচেতনতা না থাকলে পুলিশ কিছু করতে পারে না।

বাসিন্দাদের অভিযোগ সেপ্টেম্বর থেকেই কমতে শুরু করেছে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ কর্মসূচির ধার। ঢিলেমি এসেছে ‘নো হেলমেট নো ফুয়েল’-এও। শহুরে ছাত্রদের একাংশ পুরনো ছন্দে মোটর বাইক নিয়ে স্কুলে যাতায়াত করতে শুরু করেছে। শহরের গোলবাজারে রেলের মিক্সড সিনিয়ার সেকেন্ডারি স্কুলে এসে বাইরে মোটর বাইক রেখে ঢুকতে দেখা যায় অনেক পড়ুয়াকে। বৃহস্পতিবার ওই স্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্র খরিদার বাসিন্দা বিজয় ভর্মা স্কুলের বাইরে বাইক রেখে ভিতরে ঢুকেছিল। তার দাবি, “আমি স্কুলে বাইক চালিয়ে আসি না। ভাইয়ের পরীক্ষা চলছে। তাই ওকে নিয়ে যেতে বাড়ি থেকে বাইক নিয়ে এলাম।’’ কিন্তু মোটর বাইক চালাতে যে আদৌ লাইসেন্সের প্রয়োজন তা জানেই না বিজয়। আর হেলমেট প্রসঙ্গে তার উদাসীন মন্তব্য, ‘‘পরে নেব। আছে তো।’’

পরিবহণ দফতরের নিয়ম অনুযায়ী, ১৮ বছরের কম বয়সী কোনও নাগরিকের হাতে গিয়ার যুক্ত মোটর বাইকের লাইসেন্স দেওয়া যায় না। তবে ১৬বছরের ঊর্ধ্বে গিয়ার ছাড়া মোটর বাইকের লাইসেন্স দেওয়া যায়। কিন্তু হেলমেট পরা এবং অন্য সব ট্রাফিক আইনের নিয়ম মেনেই চলতে হয়। তবে শহরের বেশির ভাগ স্কুল পড়ুয়াই ব্যবহার করে গিয়ার যুক্ত বাইকই। প্রায় সব ক্ষেত্রেই সেগুলি পরিবারের বড়দের কারও নামে কেনা।

ফলে নিয়ম উড়িয়ে বাইক-দৌরাত্ম্য বাড়ছে স্কুল পড়ুয়াদের মধ্যে। ছোটরা যেমন জখম হচ্ছে। তেমনই তাদের অপটু হাতে চালানো বাইকের ধাক্কায় জখম হচ্ছেন পথচারীরাও। এ বিষয়ে কড়া পুলিশি পদক্ষেপের দাবি তুলেছেন স্থানীয়রা। খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক গুপ্ত বলেন, “ট্রাফিক আইন না মেনে বাইক বা গাড়ি চালালে আমরা নিয়মিত ধরপাকড় করছি। মামলা হচ্ছে। স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের যাতে বাইক না দেওয়া হয় সেই বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। আমরা বহু স্কুলে গিয়ে প্রচারও করেছি।”

(পড়ুয়াদের নাম পরবর্তিত)

School students bikeride no helmet no license
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy