উচ্চ মাধ্যমিকের ফলপ্রকাশের পরে কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু জেলায় যত ছাত্রছাত্রী উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে, কলেজে কলেজে আসন সংখ্যা তার অর্ধেক। ফলে, সঙ্কট পশ্চিম মেদিনীপুরে।
জঙ্গলমহলের এই জেলায় উচ্চ মাধ্যমিকে পাশের হার এ বার বেশি। পাশাপাশি, ভাল নম্বরও উঠেছে। জেলায় এ বার উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে প্রায় ৬০ হাজার পড়ুয়া। সেখানে কলেজগুলোয় স্নাতক ও পাসকোর্সে আসন রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অবশ্য বক্তব্য, কলেজে ভর্তি নিয়ে তেমন কোনও সমস্যা হবে না। কারণ, উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ সকলে স্নাতকে ভর্তি হয় না। অন্য শাখায় পড়াশোনা করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তী আরও বলেন, “জেলায় নতুন কিছু কলেজ চালু হয়েছে। আশা করি, ভর্তি প্রক্রিয়া নির্বিঘ্নেই সম্পন্ন হবে।’’
তবে পরিসংখ্যান বলছে, কলেজগুলোয় যা আসন তার তুলনায় অনেক বেশি আবেদন জমা পড়েছে। এটা ঠিক যে একই পড়ুয়া একাধিক কলেজে আবেদন করে। কিন্তু তাতেও আসন সংখ্যা ও আবেদনের সংখ্যায় যা ফারাক তাতে সঙ্কট অনিবার্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিকও মানছেন, “উচ্চ মাধ্যমিকে পাশের হার বেড়েছে। ফলে, এ বার প্রতিযোগিতা অনেক বাড়বে।’’
জেলার প্রায় সব কলেজেই আসন সংখ্যার তুলনায় অনেক বেশি আবেদন জমা পড়েছে। যেমন মেদিনীপুর কলেজে (স্বশাসিত) প্রথম বর্ষের আসন সংখ্যা প্রায় ১,৯৭০। ভর্তির আবেদন এসেছে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার। মেদিনীপুর কমার্স কলেজে প্রথম বর্ষের আসন সংখ্যা যেখানে ৯৪৫, সেখানে আবেদন জমা পড়েছে প্রায় ৩,১০০। রাজা নরেন্দ্রলাল খান মহিলা মহাবিদ্যালয়েও প্রথম বর্ষের আসন যেখানে ১,২৬০, সেখানে আবেদন এসেছে প্রায় ৫,৬৭০।
এ বার বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত কলেজগুলোয় ভর্তি চলছে অনলাইনে। এতে স্বচ্ছতা থাকবে বলেই আশা। উচ্চশিক্ষা বিভাগও বিজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, অর্থের বিনিময়ে ভর্তির প্রলোভনে কেউ যাতে পা না দেয়। ভর্তির জন্য চালু হয়েছে টোল ফ্রি হেল্পলাইন নম্বর।
আগে পশ্চিম মেদিনীপুরে ২৩টি কলেজ ছিল। এখন কলেজের সংখ্যা ৩২টি। গত পাঁচ বছরে ৯টি কলেজ চালু হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শালবনি কলেজ, নয়াগ্রাম, লালগড়, মোহনপুর, কেশিয়াড়ি কলেজ। জেলায় কলেজের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে ২০০৫ থেকে। ওই বছর কেশপুর, গোয়ালতোড়ে কলেজ চালু হয়। ২০০৬-এ ডেবরায়, ২০০৭-এ চাঁইপাট, সাঁকরাইলে, ২০০৮-এ চন্দ্রকোনা রোডে কলেজ চালু হয়। এত কলেজ হওয়ার পরেও কিন্তু ভর্তির সমস্যা মেটেনি। এর কারণ, প্রতি বছরই জেলায় উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণের সংখ্যা বাড়ছে। শিক্ষকদের একাংশও মানছেন, পরিস্থিতি যা তাতে ভাল নম্বর পেয়েও ভাল কলেজ এবং পছন্দের বিষয় জুটবে না অনেকের কপালে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিকও বলেন, ‘‘জেলায় যতক কলেজ রয়েছে তাতে ভর্তিতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে এমন হতে পারে যে পছন্দের কলেজে ও বিষয় অনার্স পাবেন না অনেকে।’’
এই আশঙ্কায় ভুগছে ছাত্রছাত্রীরাও। কেশপুরের স্বাগতা কোল্যা যেমন উচ্চমাধ্যমিকে ৪০৯ পেয়েছেন। তাঁর ইচ্ছে মেদিনীপুরের কলেজে অঙ্ক অনার্স পড়ার। শালবনির দুর্যোধন মাহাতো উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৪৩ পেয়েছে। তাঁর আবার ইচ্ছে মেদিনীপুরের কলেজে ইংরাজি অনার্স পড়ার। কিন্তু দু’জনের কপালেই ভাঁজ। তারা বলছেন, “মেদিনীপুরের কলেজে পড়তে চাই। জানি না কী হবে!”
কলেজে আবার আসন সংখ্যা বাড়ানোর ক্ষেত্রেও সমস্যা রয়েছে। মেদিনীপুর কলেজের অধ্যক্ষ গোপালচন্দ্র বেরা, মেদিনীপুর কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ দুলালচন্দ্র দাসের মতে, “আসন সংখ্যা বাড়ানোর আগে পরিকাঠামো গড়ে তোলা জরুরি। না হলে সমস্যা হবেই।’’ একই মত রাজা নরেন্দ্রলাল খান মহিলা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষা জয়শ্রী লাহার।
সব মিলিয়ে কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে সঙ্কটের মেঘ কিন্তু কাটছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy