এ ভাবেই দীর্ঘ পথ উজিয়ে রেশন আনতে যান আমতলিয়ার বাসিন্দারা।
এখনও ‘জয়ন্ত’র নামে কাঁপে গোটা এলাকা! অথচ সেই জয়ন্তর গ্রামের বাসিন্দাদের রেশন আনতে যেতে হয় সাত কিলোমিটার পথ উজিয়ে! বিষয়টি জানার পরে চোখ কপালে উঠেছে প্রশাসনের।
পশ্চিম মেদিনীপুরের জামবনি ব্লকের প্রত্যন্ত জঙ্গল ঘেরা এই গ্রামের নাম আমতলিয়া। ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সীমানা লাগোয়া এই গ্রামের যুবক সাহেবরাম মুর্মু বছর দশেক আগে মাওবাদীদের দলে যোগ দেন। মাওবাদী স্কোয়াডে এই সাহেবরাম এক সময় হয়ে ওঠেন ‘জয়ন্ত’। জঙ্গলমহলে মাওবাদী সন্ত্রাসপর্বে বহু খুন-অপহরণ-হামলা-নাশকতার মামলায় নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে জয়ন্তর বিরুদ্ধে। পুলিশের খাতায় তিনি এখনও ‘ফেরার’ মাওবাদী স্কোয়াড নেতা। ঝাড়খণ্ডের লাগালাগি এ তল্লাটে জয়ন্তর নাম শুনলে বিষম খান এলাকাবাসী। অথচ সেই মাওবাদী নেতার গ্রামের বাসিন্দারা মেঠো পথ ধরে প্রতি সপ্তাহে রেশন আনতে যান সাত কিলোমিটার দূরের বালিবাঁধ গ্রামে। গ্রামের ৯৫টি পরিবারের সিংহভাগ আদিবাসী ও অনগ্রসর সম্প্রদায়ের। রেশন গ্রাহক সংখ্যা প্রায় পাঁচশো। আমতলিয়ার বাসিন্দারা সাইকেলে অথবা হেঁটে বালিবাঁধের ডিলারের দোকানে রেশন সামগ্রী আনতে যান। কাছেপিঠে কোনও রেশন দোকান না থাকায় সত্তরের দশক ধরে এই ব্যবস্থা চলে আসছে। আমতলিয়ায় এখন বিদ্যুৎ সংযোগ এসেছে। গ্রামে পানীয় জলের ব্যবস্থা হয়েছে। কাঁচা রাস্তাটি পিচ করার তোড়জোড় হচ্ছে। কিন্তু রেশন-দুর্ভোগ মেটানোর জন্য গত সাড়ে চার দশকে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
আমতলিয়া গ্রামের প্রবীণা পার্বতী কিস্কু বলেন, “এতটা হেঁটে রেশন আনতে যাই। গ্রীষ্ম-বর্ষায় কী যে কষ্ট হয়!’’ মাওবাদী নেতা সাহেবরাম ওরফে জয়ন্ত ‘ফেরার’ থাকলেও তাঁর বৃদ্ধ বাবা-মা ও দাদা-বৌদিরা গ্রামে থাকেন। জয়ন্তর বাবা কালীচরণ মুর্মু বলেন, “গ্রামে গরিব মানুষের সংখ্যা বেশি। সকলের পেট ভরে রেশনের চাল-আটায়। সরকারি ভাবে গ্রামে রেশন পাওয়ার ব্যবস্থা করা হলে খুব ভাল হয়।” তিনি জানালেন, সম্প্রতি প্রশাসনের লোকেরা এসে এ ব্যাপারে আশ্বাস দিয়ে গিয়েছেন।
কিছু দিন আগে এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে আমতলিয়ার রেশন গ্রাহকদের সমস্যার বিষয়টি জানতে পারেন জামবনি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সমীর ধল। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদ সভাধিপতি উত্তরা সিংহকে বিষয়টি জানান সমীরবাবু। এরপরই উত্তরাদেবীর নির্দেশে খাদ্য দফতরের আধিকারিকরা এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখেন। ঝাড়গ্রাম মহকুমা খাদ্য নিয়ামক তরুণ কুমার মণ্ডল বলেন, “স্থির হয়েছে, বালিবাঁধের ডিলার সপ্তাহে এক দিন আমতলিয়া গ্রামে রেশন গ্রাহকদের হাতে তুলে দেবেন।” ডিলার রুদ্রকুমার মাহাতো বলেন, “এলাকাটি জঙ্গলে ঘেরা। প্রশাসন নিরাপত্তার আশ্বাস দিলে সপ্তাহে এক দিন আমতলিয়া গ্রামের গ্রাহকদের কাছে রেশন সামগ্রী পৌঁছে দেব।” সভাধিপতি উত্তরা সিংহ বলেন, “বাসিন্দাদের সমস্যা মেটাতে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy