Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

কাদায় হেঁটে চটের আসনে মন্ত্রী

এ দিন বিকেলে বলরামপুরের বিধায়ক তথা পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো গিয়েছিলেন ডিমডিহা গ্রামে (পুরুলিয়া ১ ব্লকের অধীনে)।

আলাপ: পুরুলিয়া ১ ব্লকের ডিমডিহা গ্রামে শান্তিরাম মাহাতো। ছবি: সুজিত মাহাতো

আলাপ: পুরুলিয়া ১ ব্লকের ডিমডিহা গ্রামে শান্তিরাম মাহাতো। ছবি: সুজিত মাহাতো

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৯ ০৪:৩২
Share: Save:

জনসংযোগে গিয়ে কাউকে শুনতে হল গোষ্ঠীকোন্দলের কথা। কেউ বা বাসিন্দাদের সমস্যা শুনে আশ্বাস দিয়ে এলেন। গ্রামে গিয়ে কেউ আবার রাত কাটালেন কর্মীর বাড়িতে। দিদিকে বলো কর্মসূচিতে রবিবার দুই জেলায় তৃণমূল বিধায়কদের এ ভাবেই দেখা গেল। তবে, অনেকে এখনও সে ভাবে জনসংযোগে বেরোননি।

এ দিন বিকেলে বলরামপুরের বিধায়ক তথা পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো গিয়েছিলেন ডিমডিহা গ্রামে (পুরুলিয়া ১ ব্লকের অধীনে)। ওই গ্রামে পঞ্চায়েতে তৃণমূল জিতলেও লোকসভা ভোটের নিরিখে সেখানে বিজেপি এগিয়ে গিয়েছে। রাজ্য নেতৃত্বের কাছ থেকে ওই গ্রামের নাম পেয়ে শান্তিবাবু সেখানে পৌঁছন। গাড়ি গ্রামের বাইরে রেখে বৃষ্টিতে কাদা থইথই গ্রামে হেঁটে হেঁটে বিভিন্ন পাড়ায় ঘোরেন শান্তিরামবাবু। দিদিকে বলোর ফোন নম্বর বিলি করতে করতে তিনি এগোতে থাকেন। রথী কুমার নামে এক প্রৌঢ়া মন্ত্রীর পথ আটকে বলেন, ‘‘বরাবর ভোট দিয়েছি তৃণমূলকে। কিন্তু কী পেয়েছি? ঘরের অবস্থা খারাপ। দেখুন।’’ পানীয় জলের জন্য প্রচণ্ড সমস্যার কথাও উঠে আসে। পেটের রোগও হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। বংশ পরাম্পরায় মুখোশ তৈরি করেও লোকশিল্পীর ভাতা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন বিশ্বজিৎ সূত্রধরেরা। মুখোশের গ্রাম বলে প্রচারও করা হয় না বলে তাঁর অভিযোগ। শান্তিরামবাবু তাঁদের আশ্বস্ত করেন। মন্ত্রীর সঙ্গীরা সমস্যায় পড়া মানুষজনের নাম লিখে নেন। চা দোকানে কর্মীরা চেয়ার এগিয়ে দিতে গেলে শান্তিরামবাবু তা সরিয়ে দাওয়ায় পাতা চটের বস্তার উপরে বসে পড়েন। চায়ের বারোয়ারি কাপে চুমুক দিতে দিতে লোকজনের সঙ্গে গল্প করেন।

বাসিন্দাদের অভাব-অভিযোগ শুনতে এ দিন বিকেলে পুনিশোলে যান ওন্দার বিধায়ক অরূপ খাঁ। সেখানে গোড়াতেই স্থানীয় কিছু তৃণমূল কর্মী এলাকার কয়েকজন তৃণমূল নেতার দিকে ইঙ্গিত করে সুর চড়ান। তাঁরা অভিযোগ করেন, এমন কিছু লোক রয়েছেন, যাঁরা এখানে বিজেপি করছেন, আর বাঁকুড়া শহরে গিয়ে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে ওঠাবসা করছেন। তাঁদের গুরুত্বও দেওয়া হচ্ছে। এতে গ্রামের তৃণমূল কর্মীরা বিভ্রান্ত। আখেরে দলেরই ক্ষতি হচ্ছে।

অস্বস্তিতে পড়ে যান তৃণমূল নেতারা। অরূপবাবু তাঁদের থামিয়ে বলেন, ‘‘এখানে মানুষের সমস্যার কথা শুনতে এসেছি। দলের সমস্যার কথা দলীয় বৈঠকে শুনব।’’ তারপরেও অবশ্য অনেকে দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে চেষ্টা করেন। অরূপবাবু তাঁদের থামিয়ে দেন। সওকত আলি মণ্ডল নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, ‘‘পরিবারের এক জনেরও রেশন কার্ড নেই। বহু বছর ধরে ঘুরেও লাভ হয়নি। আমরা কি নাগরিক নই? অথচ ভোটের সময় নেতারা এসে ফাঁকা আশ্বাস দিয়ে যান।’’

শনিবার বান্দোয়ানের সুপুডি গ্রামে জনসংযোগে গিয়ে রাত কাটালেন বিধায়ক রাজীবলোচন সোরেন। বিকেল থেকে আশ্রমপাড়া, দাসপাড়া, কচাপাড়া, সর্দারপাড়া ঘুরে বাসিন্দাদের সমস্যার কথা শোনেন। বিধায়ককে কাছে পেয়ে বয়স্ক ভাতার জন্য আর্জি জানান মাঝপাড়ার বাসিন্দা গেন্ধু মাহাতো। তিনি বলেন, ‘‘বয়স হয়েছে। কাজ করতে পারিনি। খাবার জোগাড় করতে খুব কষ্ট হয়।’’ শরৎ দাস অভিযোগ করেন, ‘‘আবেদন করেও বাড়ি পাননি। কয়েক বছর ধরে ভাঙা বাড়িতেই তাঁরা থাকছেন।’’ তাঁদের আশ্বস্ত করেন রাজীব।

রাতে চায়ের আসরে খাটিয়ায় বসে বিধায়ক গ্রামবাসীর সঙ্গে গল্পগুজবও করেন। খোঁজ নেন গ্রামের আর কী সমস্যা রয়েছে। রাতে এক কর্মীর বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। সেখানেই দলের কয়েকজন কর্মীকে নিয়ে খাওয়াদাওয়া সারেন তিনি। রবিবার সকালে ফের গ্রামের আরও কয়েকটি এলাকায় যান বিধায়ক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC BJP Shantiram Mahato Didike Bolo
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE