মুখ্যমন্ত্রী বারবার জেলায় ছুটে এসে মানুষের হাতে পরিষেবা তুলে দিয়েছেন। সে সবের পরেও অবশ্য এ বারের পঞ্চায়েত ভোটে পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলে শাসক দলের ফল আশানুরূপ হয়নি। ফলের ময়নাতদন্তে তৃণমূল নেতাদের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ, কিছু ক্ষেত্রে মানুষের কাছে সময়ে পরিষেবা পৌঁছয়নি। দলের জনপ্রতিনিধিরাই গড়িমসি করেছেন। কিছু ক্ষেত্রে আবার প্রকৃত গরিব মানুষ পরিষেবা পাননি। উল্টে তৃণমূল নেতাদের ‘কাছের লোকেরা’ উপকৃত হয়েছেন।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারি প্রকল্পের পরিষেবা প্রদানে আর গড়িমসি চাইছে না জেলা প্রশাসনও। সব দিক খতিয়ে দেখেই পশ্চিম মেদিনীপুরে ‘পরিষেবা প্রদান সপ্তাহ’ উদ্যাপনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। আগামী ৬ জুন থেকে এই ‘পরিষেবা প্রদান সপ্তাহ’ শুরু হবে। চলবে ১২ জুন পর্যন্ত। এক-একদিন এক-একটি ব্লকে কর্মসূচি হবে। জেলায় মোট ২১টি ব্লক। প্রতি ব্লকে ন্যূনতম পাঁচ হাজার মানুষকে কোনও না কোনও পরিষেবা প্রদানের লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “আমরা নিশ্চিত, এই সময়ের মধ্যে জেলায় ন্যূনতম এক লক্ষ মানুষ কোনও না কোনও সরকারি পরিষেবা পাবেন।”
এই এক সপ্তাহে সবুজসাথী, কন্যাশ্রী, সবুজশ্রী, সমব্যথী, সমর্থন, রূপশ্রী প্রকল্পের সুবিধে প্রদান করা হবে। বিভিন্ন স্কলারশিপ, পেনশন, কিসান ক্রেডিট কার্ড, খেলাধুলোর সরঞ্জাম, ত্রাণের সরঞ্জাম দেওয়া হবে। জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, দিন কয়েক আগে মেদিনীপুরে এক প্রশাসনিক বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ছিলেন জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা-সহ জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসকেরা। ছিলেন বিডিওরা, বিভিন্ন দফতরের জেলা আধিকারিকেরা। সেখানেই এই পরিকল্পনার রূপায়ণ নিয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন জেলাশাসক। বিভিন্ন প্রকল্পের উপভোক্তা তালিকা চূড়ান্ত করার কথা জানানো হয়। ইতিমধ্যে জেলা থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ পৌঁছে গিয়েছে ব্লকে ব্লকে। ব্লকে তোড়জোড়ও শুরু হয়েছে।
ভোটের জন্য কমবেশি সব প্রকল্পের কাজই ব্যাহত হয়েছে। ভোট মিটতে এ বার প্রকল্পগুলোর কাজে গতি আনার তৎপরতা শুরু হয়েছে। প্রশাসন মনে করছে, এই সপ্তাহ উদ্যাপনের মধ্য দিয়ে সব প্রকল্পের কাজেই গতি আনা যাবে। ভোটে জেলার জঙ্গলমহলের কিছু এলাকায় শাসক দলের ফল ভাল হয়নি। শাসক দলের একাংশ মানছে, স্থানীয়দের সকলের কাছে হয়তো উন্নয়নের সমান সুফল পৌঁছে দেওয়া যায়নি। ভোটের পরেও কাজ শেষ না হলে ক্ষুব্ধ হবেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলা প্রশাসনের এক সূত্র মনে করিয়ে দিচ্ছে, গত বিধানসভা ভোটের পরে পশ্চিম মেদিনীপুরে এসে কাজের অগ্রগতি দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাফ বলেছিলেন, ‘‘নির্বাচনের জন্য তিন মাস অনেক কাজ হয়নি। পরে পড়ে থাকা কাজগুলো তোলাও হয়নি। আবারও বলছি, কাজ ফেলে রাখা যাবে না।”
জেলায় সরকারি পরিষেবার লক্ষ্যমাত্রা নির্দিষ্ট সময়ে পূরণ করতেই সপ্তাহ উদ্যাপনের পরিকল্পনা বলে প্রশাসনেরই এক সূত্রে খবর।