মেধাবী ছাত্র ও গুণী শিক্ষকের এমন অন্তর্ধান চিন্তায় রেখেছে পরিজনদের।
স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও চাকরি না পাওয়ায় গত ২৫ দিন ধরে কলকাতার মেয়ো রোডে অনশন শুরু করেছেন অন্তত ৪০০ জন হবু শিক্ষক। এসএসসি-নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে রাজ্য সরকারের প্রতি ‘ক্ষোভ’ উগরে দিয়েছেন তাঁরা। অন্য দিকে, শিক্ষা সংক্রান্ত রাজ্য সরকারের আর এক নির্দেশিকা ঘিরে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির পূর্ব মেদিনীপুর শাখা।
প্রশিক্ষণবিহীন প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দূরশিক্ষা পদ্ধতিতে ডিএলএড প্রশিক্ষণ দেওয়ার কর্মসূচি বন্ধ করার সম্প্রতি নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন পর্ষদ। তাতেই ‘আপত্তি’ করছেন শিক্ষকদের একাংশ।
পর্ষদ সূত্রের খবর, ২০০৫ সালের পরবর্তী ক্ষেত্রের নিয়োগ হওয়া যে সব শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ডিএলএড প্রশিক্ষণ ছিল না, তাঁদের জন্য দূরশিক্ষা পদ্ধতিতে দুই বছরের ওই প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন পর্ষদ। গত কয়েকবছর ধরে ধাপে ধাপে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ওই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ‘ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশনে’র (এনসিটিই) নির্দেশিকা মেনে দূরশিক্ষা পদ্ধতিতে ওই প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন রাজ্য তথা জেলার বিভিন্ন স্কুলে কর্মরত বহু শিক্ষক-শিক্ষিকা। সম্প্রতি প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ নির্দেশ দিয়েছে, আগামী ৩১ মার্চ প্রশিক্ষণবিহীন কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ওই পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর্ব শেষ হচ্ছে। এ নিয়ে গত ১৮ মার্চ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন পর্ষদের সচিব আর সি বাগচী ।
পর্ষদের তরফে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এনসিটিই’র নির্দেশিকা মতো স্কুল শিক্ষা দফতরের অনুমোদন ক্রমে কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ডিএলএড বা সমতুল্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। স্কুল শিক্ষা দফতরের শর্ত মেনে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন পর্ষদ প্রশিক্ষণ দেওয়ার কর্মসূচি পালন করেছে। কিন্তু এ বছরই সেই প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত কার্যক্রম শেষ হবে।
এতেই ‘আপত্তি’ করছে পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি। তাদের বক্তব্য, জেলায় এখনও বহু প্রশিক্ষণবিহীন কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছে। পর্ষদের নির্দেশিকার ফলে তাঁদের পড়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে যাবে বলে তাদের অভিযোগ। এর ফলে ওই শিক্ষকেরা পরবর্তী ক্ষেত্রে অনেক সমস্যায় পড়বেন বলে দাবি। সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, ডিএলএড প্রশিক্ষণ না থাকলে ভবিষ্যতে ওই সব শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষক হতে বা বেতন বৃদ্ধি সংক্রান্ত সমস্যায় পড়তে হতে পারে।
সমিতির পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক অরূপকুমার ভৌমিক বলেন, ‘‘পর্ষদের তরফে দূরশিক্ষা পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলেও জেলার বেশ কিছু শিক্ষক ওই সুযোগ পাননি। এখন তা বন্ধ করে হচ্ছে। এতে ওঁরা অসুবিধায় পড়বেন। আমরা চাই যেসব কর্মরত শিক্ষক ও শিক্ষিকা এখনও প্রশিক্ষণের সুযোগ পাননি, তাঁদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।’’ যদিও জেলায় ঠিক কত সংখ্যক এমন শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন, তার সংখ্যা এখনও জানা যায়নি।
এ ব্যাপারে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের সভাপতি মানস দাস বলেন, ‘‘এনসিটিইর নির্দেশিকা মেনেই ওই প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। সময়সীমা শেষ হওয়ায় পর্ষদের তরফে ওই বিজ্ঞপ্তি এসেছে। জেলায় প্রায় সব প্রশিক্ষণহীন শিক্ষক-শিক্ষিকা এই প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বলেই জানি। যদি প্রশিক্ষণহীন কেউ থাকেন তা হলে, তা পর্ষদকে তা নিয়ে রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy