অসমাপ্ত বাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।
ভূমিহীন দরিদ্র পরিবারকে বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার জন্যই রয়েছে ‘নিজ গৃহ নিজ ভূমি প্রকল্প’। কিন্তু সেই প্রকল্পে উপভোক্তাদের জমি দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা অধরাই রয়ে গিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরে। গত আর্থিক বছরে যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তার বেশিরভাগটাই পূরণ হলেও ৭২৫ জনকে এখনও জমি দেওয়া যায়নি। তাঁদের কী ভাবে জমি দেওয়া যাবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় প্রশাসনও। কারণ, এই সমস্ত উপভোক্তারা বেশিরভাগই রয়েছেন নদীবাঁধের উপর। সংশ্লিষ্ট এলাকায় সরকারি জমি তো নেই-ই, এমনকী সরকার জমি কিনতে চাইলেও মিলছে না। জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক অরিন্দম দত্তের কথায়, “বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাফল্য মিললেও কিছু ক্ষেত্রে জমির অভাবে উপভোক্তাদের দেওয়া যায়নি। তাঁদের অন্যত্র জমি দিতে গেলে বর্তমান এলাকা থেকে দূরত্ব বেশি হওয়ায় তাঁরা স্থান পরিবর্তন করতেও রাজি হচ্ছেন না। কী ভাবে সমস্যা মেটানো যায় ভাবনাচিন্তা চলছে।”
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় গত আর্থিক বছরে এই প্রকল্পে জমি দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২২৪৮ জনকে। ইন্দিরা আবাস যোজনা হোক বা অধিকার, গীতাঞ্জলি হোক বা আমার বাড়ি-প্রতিটি ক্ষেত্রেই উপভোক্তার নিজস্ব জমি থাকা প্রয়োজন। তবেই মিলবে এই প্রকল্পের সুবিধা। কিন্তু যাঁরা ভূমিহীন তাঁরা কি মাথার উপর ছাদ পাবেন না? ভূমিহীনদের জমি দিয়ে বাড়ি তৈরি করার লক্ষ্যেই ‘নিজ গৃহ নিজ ভূমি প্রকল্প’ শুরু হয়। যে প্রকল্পে সরকার প্রয়োজনে জমি কিনে দেবে। তারপর সেই সব উপভোক্তাকে বাড়ি তৈরির বিভিন্ন প্রকল্পের মধ্যে এনে তৈরি করে দেবে বাড়িও। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় এই প্রকল্প চলছিল খুবই ঢিমেতালে। ফলে সাধারণ গরিব মানুষ সমস্যায় পড়ছিলেন। বিষয়টি নজরে আসার পরই মুখ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে দ্রুত গতিতে পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেন। জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরও তড়িঘড়ি উপভোক্তাদের তালিকা তৈরি করে জমি দেওয়ার কাজে নামে। নতুন সরকারের বিগত চার বছরে ১৬৯১৫ জনকে এই প্রকল্পে জমি দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে ২০১৩-১৪ অর্থ বর্ষে জমি দেওয়া হয়েছে ৮২১০ জন ও গত আর্থিক বছরে জমি দেওয়া হয়েছে ৩৩১৩ জনকে। সব মিলিয়ে চার বছরে এই প্রকল্পে জমি পাট্টা দেওয়ার পরিমাণ ৫৫৯ একর। তবে ৭২৫ জনকে এখনও জমি দেওয়া যায়নি। তাঁদের মধ্যে ২২১ জন রয়েছেন সরকারি বিভিন্ন দফতরের জমিতে। যাঁরা বংশপরম্পরা ওই জমি দখল করে রয়েছেন বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। আর ৫০৪ জন রয়েছেন বিভিন্ন বাঁধে। নদীবাঁধ বা জমিদারি বাঁধে থাকা মানুষের সংখ্যা সব থেকে বেশি সবংয়ে। সরকারি তালিকায় থাকা সংখ্যাটা ১১৮ জন। এ ছাড়াও দাঁতন-১, ২, গড়বেতা-১,২, মেদিনীপুর সদর, মোহনপুর, দাসপুর ব্লকেও বাঁধে থাকা মানুষের সংখ্যা বেশি।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাঁধে বসবাস করেন এই সব মানুষ। এলাকায় খাস জমি নেই। জমি কিনে দিতে চাইলেও জমি মিলছে না। চাষযোগ্য জমি কেউ বিক্রি করতে রাজি নন। কোনও এলাকায় আবার জমি মিললেও সেখানে তাঁরা যেতে রাজি হচ্ছেন না। এক সঙ্গে ১০-১৫টি পরিবারকে বসানো যাবে এমন জমি যেখানে মিলছে সেই স্থানটির সঙ্গে সংশিষ্ট উপভোক্তার বর্তমান ঠিকানা থেকে অনেক দূরে। এক জায়গায় বংশপরম্পরা বসবাস স্থাপন করায় সেখানে রুটি-রুজির একটা নিশ্চিন্ত আশ্বাস রয়েছে। তাই হঠাত্ অন্যত্র চলে গেলে, যদি তা না মেলে? এই আশঙ্কাতেই সহজে কেউ যেতে রাজি হচ্ছেন না।
এই পরিস্থিতিতে কী ভাবে তাঁদের জমির ব্যবস্থা করা যাবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় প্রশাসন। জমি তো দেওয়া হয়েছে, কিন্তু প্রশ্ন হল, বাড়ি তৈরি হচ্ছে কী? প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কিছু বাড়ি তৈরি হয়েছে। গত দু’বছরে যে সব উপভোক্তাকে জমি দেওয়া গিয়েছে, এবার তাঁদেরও বিভিন্ন আবাসন প্রকল্পের মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। ধীরে ধীরে তাঁদেরও বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে বলে প্রশাসন জানিয়েছে। সব মিলিয়ে এই প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা এখনও অধরাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy