প্রতীকী চিত্র।
অঙ্কে ভাল ফল হলেই একটা স্মার্টফোন চাই— বয়না আগেই সেরে রেখেছিল অষ্টম শ্রেণির সদ্য কিশোরী। বাবাকে দেওয়া কথা মতো ৯০ শতাংশের উপর নম্বরও এনেছিল সে। ফলে নবম শ্রেণির আগেই হাতে এসেছে স্মার্টফোন। খুব দামি না-হলেও দেখতে চকচকে। সস্তার মোবাইল সার্ভিস প্রোভাইডার সিম দিতেও দেরি করেনি। কিন্তু নবম শ্রেণির প্রথম পরীক্ষায় একেবারে মুখ থুবড়ে পড়ল মেধাবী মেয়ের ফল।
শুধু এইটুকুর উপর দিয়ে গিয়েছিল বলেই সে যাত্রা রক্ষা পেয়েছিল মেয়েটি। তেমনটা যে সব সময় হয় না দেখিয়ে দিয়েছে চন্দ্রকোনার ঘটনা। ভুল নম্বরে আসা ফোন থেকে প্রেম, আর তার পরিণতিতে যে চরম লা়ঞ্ছনা সহ্য করতে হয়েছে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী কিশোরীকে তাতে পরিবার বা পরিজনের অবহেলা রয়েছে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বুধবারের ওই ঘটনার কথা শুনেই সচেতনতার একাধিক পদক্ষেপের কথা জানিয়েছে চাইল্ড লাইন ও পুলিশ। তারা চাইছে এ বিষয়ে এগিয়ে আসুন স্কুলের শিক্ষকেরাও। কোনও ছাত্র-ছাত্রীকে মনমরা হয়ে থাকতে দেখলে কিম্বা অসংযত আচরণ লক্ষ করলে বন্ধুর মতো মিশে ঠিক কী হয়েছে বোঝা জরুরি। বাড়িতেও একই চেষ্টা করতে হবে অভিভাবকদেরও।
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের মনো-চিকিৎসক অরিত্র মাঝি জানান, “মোবাইলের ভাল এবং খারাপ দু’টি বিষয়েই সহজভাবে আলোচনা করতে হবে। গান শোনা, খেলাধূলার চর্চা-সহ হারিয়ে যাওয়া অভ্যাসগুলি ফিরিয়ে আনা জরুরি। ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশতে হবে। তবেই কমবে মোবাইল নির্ভরতা।”
অভিযোগ, মোবাইল নির্ভরতা অবশ্য একেবারে শুরু থেকেই ধরিয়ে দিচ্ছেন অভিভাবকদের একাংশ। ফলে স্কুলে বসেও সে মোবাইল হাতছাড়া করতে পারছে না ছোটরা। তাতে পড়াশোনায় ব্যাঘাত তো ঘটছেই, তৈরি হচ্ছে আরও নানা সমস্যা। ভুক্তভোগী এক শিক্ষকের কথায়, “ক্লাসে গিয়ে দেখলাম কোনও ছাত্র মোবাইল ঘাঁটছে। তাতে পাশের পড়ুয়াদেরও মনসংযোগ নষ্ট হয়। অথচ শাস্তি দেব সেই উপায়ও নেই।”
অনেক পড়ুয়াও জানিয়েছে, নিজের মোবাইল না থাকলেও বন্ধুর মোবাইল তাদের আকৃষ্ট করে। দশম শ্রেণির এক ছাত্রের কথায়, ‘‘স্কুলে মোবাইল আনা বন্ধ করলে ভালই হয়। বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা দরকার হলেও স্কুলের ফোন থেকেই করা যায়।’’
শিক্ষকদের অনেকেও মনে করছেন, স্কুলে মোবাইল আনা রোখা গেলে তার সামাজিক একটা প্রভাব পড়বে। মোবাইল-সহ কাউকে ধরা গেলে বকাবকি না করে অভিভাবকদের ডাকা যেতে পারে।
আবার একাংশ শিক্ষক বলছেন, এমনিতেই এখন ক্লাস কম হয়। বেড়েছে ছুটিও। সিলেবাস শেষ করাই বড় কথা। সেখানে এ সব ঝামেলা মেটাতে গিয়েই অনেক সময় নষ্ট হয়। ক্ষতি হচ্ছে পড়াশোনায়।
এমনই ঘটেছে চন্দ্রকোনার ছাত্রীটির ক্ষেত্রেও। পুলিশ ছাত্রীটির সঙ্গে কথা বলে জেনেছে, ওই ঘটনার পর থেকেই স্কুলে যাওয়া থেকে স্বাভাবিক কাজকর্মে প্রভাব পড়ছিল। নানা ভয়ে পড়াশোনায়ও মন ছিল না। অথচ সামনেই মাধ্যমিক।
স্কুলে কি মোবাইল নিষিদ্ধ হবে?
জেলা স্কুল পরিদর্শক অমর কুমার শীল বললেন, “ছাত্র এবং অভিভাবক দু’পক্ষকে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।”
ঘাটাল শহরের বসন্ত কুমারী বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা বীণা মান্নার কথায়, “ক্লাসে কেউ মোবাইল নিয়ে এলেই আমরা নিয়ে নিই। অভিভাবকদের নিয়ে বৈঠকও করা হয়েছে।’’ বীণাদেবীর দাবি, তাঁর স্কুলে যে সব মোবাইল বাজেয়াপ্ত হয়েছে, তার অনেকগুলিই নিয়ে যাননি অভিভাবকরা। একই বক্তব্য চন্দ্রকোনার ধান্যগাছি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবীপ্রসাদ চক্রবর্তীরও।
দাসপুরের বরুণা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ও তৃণমূল প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠনের সদস্য সুজিত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “স্কুল কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে কঠোর হতে হবে। অভিভাবকদেরও বিষয়টি বুঝতে হবে। প্রতিটি স্কুলেকে উদ্যোগী হওয়ার আর্জি জানিয়েছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy