Advertisement
E-Paper

বাধ সাধল আগুন, পরীক্ষা দেওয়া হল না সুজাতার

ঝলসে যাওয়া ডান হাতের আঙুলে পেন ধরে নিজের নাম লেখার আপ্রাণ চেষ্টা করছিল বছর ষোলোর সুজাতা দাস। আধপোড়া বাঁ হাতে স্যালাইনের নল।

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:৩৩
বার্ন ইউনিটের বাইরে সুজাতার মা চন্দনা দাস। নিজস্ব চিত্র।

বার্ন ইউনিটের বাইরে সুজাতার মা চন্দনা দাস। নিজস্ব চিত্র।

ঝলসে যাওয়া ডান হাতের আঙুলে পেন ধরে নিজের নাম লেখার আপ্রাণ চেষ্টা করছিল বছর ষোলোর সুজাতা দাস। আধপোড়া বাঁ হাতে স্যালাইনের নল। গলা থেকে পেট পর্যন্ত দগদগে পোড়ার ক্ষতচিহ্ন। ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের বিছানায় উঠে বসার চেষ্টা করছিল সে। মা চন্দনাদেবী মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন, “এভাবে কষ্ট করিস না। থাক আর দরকার নেই।” নার্সরা বারণ করেন শরীরে ধকল নিতে। কিন্তু জড়ানো গলায় ঝাঁঝিয়ে ওঠে সুজাতা, “নাহ্‌ , আমি পরীক্ষা দেবই।”

কে বলবে মাত্র পনেরো ঘন্টা আগে এই মেয়ের সারা শরীর পুড়িয়ে দিয়েছে আগুন। প্রায় সত্তর শতাংশ দগ্ধ দেহ নিয়ে বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে সুজাতা। শরীর পুড়লেও মনের জোর টাল খায়নি। তবে শেষ পর্যন্ত সুজাতা মাধ্যমিকের ইংরেজি পরীক্ষা দিতে পারেনি। কিন্তু মনের জোরকে কুর্নিশ জানালেন পরীক্ষা কেন্দ্রের আধিকারিক ও পুলিশ কর্মীরা।

বেলিয়াবেড়া ব্লকের আশুই গ্রামে সুজাতার বাড়ি। বাবা মুম্বইয়ে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। সুজাতা শারীরিক প্রতিবন্ধী। হাতের আঙুলগুলো ঠিকমতো নাড়াতে পারে না। দু’বার কটকের হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করার পরে সে লিখতে পারে। চোখেরও সমস্যা রয়েছে। এই অবস্থার মধ্যেও বেলিয়াবেড়া কেসিএম হাইস্কুলের ছাত্রী সুজাতা গোপীবল্লভপুরের নয়াবসান জনকল্যাণ বিদ্যাপীঠ পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে মাধ্যমিক দিচ্ছিল। বুধবার বাংলা পরীক্ষা ভালই দিয়েছিল। রাতে বাড়িতে ইংরেজি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিল সে। আর মশা মারায় ধূপ জ্বালাতে গিয়ে এই অঘটন। দেশলাই কাঠি জ্বালানোর সময় চুড়িদারের সিন্থেটিক ওড়নায় আগুন লেগে যায়।

সুজাতার মা চন্দনাদেবীর কথায়, ‘‘ঘরে গিয়ে দেখি দাউ দাউ করে জ্বলছে মেয়ে। কোনও মতে কম্বল চাপা দিয়ে আগুন নেভাই।’’ রাত এগারোটা নাগাদ সুজাতার ঠাঁই হয় ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। রাত থেকেই সুজাতা বৃহস্পতিবারের ইংরেজি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য কাকুতি মিনতি করতে থাকে। তাকে বারণ করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পরিজনরা। কিন্তু সুজাতা জানিয়ে দেয়, সে পরীক্ষা দেবেই। সিল করা প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র নিয়ে ঝাড়গ্রাম (দক্ষিণ) পরীক্ষাকেন্দ্রের অফিসার ইনচার্জ তথা জেলার সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) শুভাশিস মিত্র এবং ওই পরীক্ষা কেন্দ্রের সম্পাদক অপর্ণেশ মিশ্র আসেন হাসপাতালে। প্রশ্নপত্র-উত্তরপত্রের সিল খোলার আগে সাদা কাগজ দেওয়া হয় সুজাতাকে। পৌনে বারোটা থেকে সাড়ে বারোটা পর্যন্ত প্রায় ৪৫ মিনিট চেষ্টা করেও নিজের নাম লিখতে ব্যর্থ হয় সুজাতা।

পরীক্ষা দিতে না পারার দুঃখে সুজাতার দু’চোখ বেয়ে তখন জলের ধারা । হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়ে থমথমে মুখে শুভাশিস মিত্র বলেন, “শারীরিক প্রতিবন্ধী মেয়েটি আগুনে পুড়ে গিয়েও এতটুকু মনোবল হারায়নি। ও পরীক্ষা দিতে পারলে আমাদের ভাল লাগত।” ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের সুপার মলয় আদক বলেন, “যা শারীরিক অবস্থা, তাতে ওর পক্ষে পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব ছিল না। মেয়েটিকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।”

Fire Exam
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy