Advertisement
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩
midnapore

Lata Mangeshkar Death: ‘লতাজির গান শুনতে গিয়ে জুটেছিল বকুনি’

১৯৮৬ সালের ২ মার্চ। মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুল ময়দানে আসবেন লতা মঙ্গেশকর। তার দেড় মাস আগে থেকেই জেলা জুড়ে শুরু হয়ে গিয়েছিল অনুষ্ঠানের প্রচার।

প্রয়াত সুরসম্রাজ্ঞীকে শ্রদ্ধা। কোলাঘাটে।

প্রয়াত সুরসম্রাজ্ঞীকে শ্রদ্ধা। কোলাঘাটে। নিজস্ব চিত্র।

দিগন্ত মান্না
কোলাঘাট শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৬:৪৭
Share: Save:

বাড়ি থেকে লুকিয়ে লতা মঙ্গেশকরের অনুষ্ঠান দেখায় কপালে জুটেছিল বকুনি। মঞ্চের একশো ফুট দূরত্ব থেকে সুরসম্রাজ্ঞীকে দেখার অনাবিল স্মৃতি নিয়ে আজও গর্ব করেন কোলাঘাটের তিন বন্ধু অসীম দাস, নন্দকিশোর বাজাজ, আলতাফ আলি ভুঁইয়া। এ দিন সকালে ভারত কোকিলার মৃত্যুর খবর পেয়ে তাই কোলাঘাটে রূপনারায়ণের পাড়ে জড় হয়েছিলেন সেদিনের তিন কিশোর। নিজেদের উদ্যোগে প্রয়াত সুরসম্রাজ্ঞীকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে গিয়ে চোখ ভিজে যাচ্ছিল তিনজনেরই।

১৯৮৬ সালের ২ মার্চ। মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুল ময়দানে আসবেন লতা মঙ্গেশকর। তার দেড় মাস আগে থেকেই জেলা জুড়ে শুরু হয়ে গিয়েছিল অনুষ্ঠানের প্রচার। অগ্রিম টিকিটের দাম ছিল ৫০ টাকা। কোলাঘাটের বাড়বড়িশা গ্রামের গানপাগল কিশোর অসীম দাস ও তাঁর চার বন্ধু আগে থেকে টাকা জমিয়েছিলেন অনুষ্ঠানের টিকিট কেনার জন্য। অসীমের কথায়, ‘‘তখন দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ি। প্রচার গাড়ি থেকে টিকিট কিনেও নিয়েছিলাম সবাই।’’ কিন্তু বাড়ি থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে জলসা দেখতে যাওয়ার অনুমতি মেলেনি কারও বাড়িতেই। অগত্যা বাড়ি থেকে লুকিয়ে লতাজির অনুষ্ঠান দেখতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন অসীম ও তাঁর বন্ধুরা। নির্ধারিত দিনে বাড়ির লোকজনকে না জানিয়েই ভোর ৫টায় বাড়ি থেকে রওনা হয়েছিলেন অসীমরা। সঙ্গে ছিল জল আর মুড়ি। প্যান্ডেলে ঢোকার মুখে এতই ভিড় ছিল যে পুলিশের সঙ্গে দর্শকদের রীতিমত ধ্বস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়। ভিড়ের চাপে অসীমদের মুড়ির প্যাকেট ও জল পড়ে যায় হাত থেকে। রাত ৮ টায় শুরু হয় অনুষ্ঠান। মঞ্চ থেকে ১০০ ফুট দূরে সেদিন বসেছিলেন অসীম ও তাঁর বন্ধুরা। অসীমের কথায়, ‘‘সেদিন লতাজি মঞ্চে উঠেই শহিদ ক্ষুদিরাম বসুর স্মৃতির উদ্দেশ্যে ‘একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি’ গানটি গেয়ে অনুষ্ঠান শুরু করেছিলেন। সেদিন প্রায় দেড় ঘণ্টা মঞ্চে ছিলেন লতাজি। লতাজির পর মঞ্চে গান গেয়েছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়।’’

কার্যত খালিপেটে রাতভর অনুষ্ঠান দেখে পরের দিন সকাল ১০টায় কোলাঘাটে বাড়িতে ফেরেন অসীমরা। না বলে বাড়ি থেকে পালিয়ে অনুষ্ঠান দেখতে যাওয়ার জন্য কপালে জুটেছিল বকুনি। অসীম বর্তমানে একটি ভ্রমণ সংস্থার মালিক। পাশাপাশি একটি স্বেছাসেবী সংস্থা চালান তিনি। অসীমের বন্ধু নন্দকিশোর বাজাজ, আলতাফ আলি ভুঁইয়া ব্যবসায়ী। রবিবার সকালে লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যুর খবর শোনার পর সেদিনের পাঁচ বন্ধুর মধ্যে তিনজন এক জায়গায় সমবেত হন। তাঁদের উদ্যোগে কোলাঘাটের গৌরাঙ্গ ঘাটে লতা মঙ্গেশকরের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের একটি অনুষ্ঠান হয়। অসীম বলেন, ‘‘লতাজির কথা উঠলেই অন্য বন্ধুদের কাছে গর্ব করে বলতাম আমি লতাজিকে সামনাসামনি দেখেছি। আমার জীবনে এটা একটা বড় প্রাপ্তি। আজ সরস্বতীর বিসর্জনের দিন ওঁর মৃত্যুর খবর শোনার পর কোনও কাজে মন বসছে না। মনে হল সরস্বতীই চলে গেলেন।’’ সে দিন অসীমের সঙ্গী নন্দকিশোর বাজাজ বলেন,‘‘লতাজির অনুষ্ঠান দেখা আমার জীবনের স্মরণীয় মুহূর্ত। যতদিন বাঁচব এই গর্ব নিয়েই বাঁচব। আজ যেন শুধুই শূন্যতা।’’

এদিন কোলাঘাটের গৌরাঙ্গ ঘাটে পিকনিক করতে আসা পর্যটকদের সাউন্ড বক্সে শুধুই বাজছিল নাইটিঙ্গলের গান। নদের বাতাসে ভেসে আসছিল ‘না যেও না, রজনী এখনও বাকি......’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE