প্রয়াগরাজে স্ত্রী-পরিবারকে নিয়ে মহাকুম্ভে গিয়েছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালের ব্লক তৃণমূলের সভাপতি দিলীপ মাজি। মৌনী অমাবস্যায় ত্রিবেণী সঙ্গমে ডুব দেওয়ার বাসনা ছিল। কিন্তু পদপিষ্টের ঘটনার মুখোমুখি হন তিনিও। ত্রিবেণী সঙ্গমে স্নান না-করেই কোনওক্রমে ভিড়ের মধ্যে থেকে প্রাণ বাঁচিয়ে পরিবার নিয়ে বাড়ি ফেরেন দিলীপ। তবে ভিড়ের মাঝে খোয়া যায় তাঁর স্ত্রীর গলার সোনার হার!
ঘাটাল থেকে গাড়ি ভাড়া করে প্রয়াগরাজ গিয়েছিলেন দিলীপ। সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী, পুত্র-সহ পরিবারের আরও কয়েক জন। শুক্রবার বাড়ি ফেরেন তিনি। কিন্তু এখনও বুধবারের আতঙ্ক কাটেনি দিলীপের। তিনি বলেন, ‘‘আমরা এলাকা থেকে ৫২ জন গিয়েছিলাম। কিন্তু ভিড়ের মধ্যে সবাই আলাদা হয়ে যায়। তবে আমি আমার পরিবারকে চোখে চোখে রেখেছিলাম। মঙ্গলবার রাত আড়াইটে নাগাদ সঙ্গমের দিকে হাঁটা শুরু করতেই ভিড়ের মধ্যে পড়ে যাই। হাঁটতে হাঁটতে যখন প্রায় সঙ্গমের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি, সেই সময় হঠাৎ হুড়োহুড়ি, ঠেলাঠেলি শুরু হয়। ব্যারিকেড ভেঙে লক্ষ লক্ষ মানুষ এগোতে থাকেন। তাতেই পড়ে যাচ্ছিলাম। হাত ধরে নেয় ছেলে।’’
ফোনে আনন্দবাজার অনলাইনকে নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে গলা কেঁপে ওঠে। তাঁর কথায়, ‘‘ভিড় ঠেলে আরও কিছুটা এগোনোর চেষ্টা করি। দেখি সামনে সাদা চাদরে মোড়া কয়েক জন শুয়ে আছেন! প্রথমে বুঝতে পারিনি। পরে জানলাম সেগুলি মৃতদেহ। গুনে দেখি ১১টি। কপালে হাত ঠেকালাম। বুঝলাম আর এগোনো ঠিক হবে না। পরিবার নিয়ে পিছনে হাঁটা শুরু করলাম।’’
আরও পড়ুন:
কুম্ভমেলার ভিড় ঠেলে প্রাণ বাঁচিয়ে ফিরলেন ঠিকই। কিন্তু খোয়া গেল দিলীপের স্ত্রীর গলার চেন। তিনি বলেন, ‘‘পরের অভিজ্ঞতা আরও নিদারুণ। প্রথমত, ঠেলাঠেলির মাঝে এক সুন্দরী তরুণী আমার স্ত্রীকে পড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে গিয়ে কখন যে গলায় থাকা ৮-১০ গ্রামের সোনার চেন চুরি করে নেন, তা আমরা কেউই বুঝতে পারিনি।’’ সঙ্গমে স্নান করতে না পারলেও অন্য গঙ্গাঘাটে পরিবারকে নিয়ে ডুব দেন দিলীপ। স্নানের পরের অভিজ্ঞতা তাঁর ভয়ানক। দিলীপের কথায়, ‘‘স্নান তো হল। কিন্তু বিপদে পড়লাম ফেরার পথে। সেখানেও লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড়, ঠেলাঠেলি আর হুড়োহুড়ি। এ দিকে আমার হাতে ব্যাগ, গঙ্গাজল। ঠেলাঠেলির চাপে পড়েই গেলাম। কোনও মতে আমার ছেলে আমাকে টেনে তুলল। পড়ে গিয়ে হাতে, পায়ে চোট পাই।’’
দিলীপের অভিযোগ, ‘‘কুম্ভে কোথাও কোনও সুব্যবস্থা নেই। সব শুধু সাধু-সন্তদের নিয়ে। ওঁদের জন্যই যত পুলিশ, নিরাপত্তা, সমস্ত ব্যবস্থা। সাধারণ মানুষের জন্য কিচ্ছু নেই।’’ দিলীপের কথায়, ‘‘এ বার মহাকুম্ভে যাওয়ার জন্য মন টেনেছিল। যে রাজনীতিই করি না কেন, নিজের ধর্ম তো হিন্দু! তবে, এমন অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরছি।’’ তার পরই ঘাটালের তৃণমূল নেতা টানলেন গঙ্গাসাগর প্রসঙ্গ। তাঁর কথায়, ‘‘যে যাই বলুক, দিদি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) কিন্তু নির্বিঘ্নে গঙ্গাসাগরের আয়োজন করে দেখিয়ে দিয়েছেন। যোগী (আদিত্যনাথ) পারলেন না।’’