Advertisement
১৮ মে ২০২৪

কংক্রিটে ঢাকছে ঐতিহ্য, নালিশ

শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের রাজবাড়ির ভগ্নপ্রায় প্রকাণ্ড দরজার পাশেই প্রশাসনিক কংক্রিটের থাবা! নীল সাদা রঙের পিলারের মাঝে বসেছে লোহার দরজা।

প্রাচীন স্থাপত্যের পাশেই হচ্ছে প্রশাসনিক ভবন। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

প্রাচীন স্থাপত্যের পাশেই হচ্ছে প্রশাসনিক ভবন। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

কিংশুক গুপ্ত
শিলদা শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:৪২
Share: Save:

শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের রাজবাড়ির ভগ্নপ্রায় প্রকাণ্ড দরজার পাশেই প্রশাসনিক কংক্রিটের থাবা!

নীল সাদা রঙের পিলারের মাঝে বসেছে লোহার দরজা। রাজবাড়ি চত্বরের ভিতরে রয়েছে কয়েক শো বছরের পুরনো দুর্গা মন্দির ও কিশোর-কিশোরীর মন্দির। সেখানেই পেল্লায় দোতলা নীল সাদা বাড়ি মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। বেলপাহাড়ি ব্লকের শিলদা এলাকায় রানি কিশোরমণির প্রাসাদ চত্বরের মধ্যেই তৈরি হয়ে গিয়েছে ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার কার্যালয়। প্রশাসনের যুক্তি, দেড় দশক আগে ওই জমিটি বেনামি সম্পত্তি হিসেবে খাস ঘোষণা করা হয়। এতদিন শিলদা এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে বিএলআরও অফিসটি ছিল। তাই সরকারি জমিতে নতুন অফিস ভবন তৈরি করা হয়েছে। তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঐতিহ্যপ্রাচীন স্থাপত্যকে নষ্ট করে দিয়ে দফতরের প্রবেশপথ তৈরি করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, রানি শিরোমণির আমলের প্রাচীন একটি মন্দিরকে ঘিরে দফতরের পাঁচিল তোলা হচ্ছে। প্রতিবাদ জানিয়েছেন একাংশ বাসিন্দা। বিডিও’র কাছে অভিযোগপত্রও দেওয়া হয়েছে।

১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ বিরোধী চুয়াড় বিদ্রোহের আগুন জ্বলে উঠেছিল মেদিনীপুরে। ওই সময় শিলদা এলাকায় ওই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন স্থানীয় রাজা মানগোবিন্দ রায় ও তাঁর পাটরানি কিশোরমণি। ১৮০৬ সালে রাজা মানগোবিন্দের মৃত্যুর পরে শিলদার অধীশ্বরী হন রানি কিশোরমণি। ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি শিলদায় রাজত্ব করেন। কয়েকটি মন্দিরের লিপিতে তাঁকে ‘রাজা কিশোরমণি’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিশোরমণির মৃত্যুর পরে শিলদায় তাঁর প্রাসাদ চত্বরটি ‘মেদিনীপুর জমিদারি কোম্পানি’র দখলে চলে যায়। ১৯৪৭ সালে তৈরি হয় শিলদা তরুণ সঙ্ঘ। ১৯৫৮ সালে পুরো প্রাসাদ চত্বরটি কিনে নেন স্থানীয় শুকজোড়া গ্রামের এক সম্পন্ন মহিলা। পরে আশির দশকে ওই মহিলার উত্তরসূরিরা জমিটি তরুণ সঙ্ঘকে বিক্রি করে দেন।

এখন রাজবাড়ির অস্ত্বিত্ব নেই। তবে মন্দির দু’টি রয়েছে। সংস্কারের অভাবে প্রধান দরজাটির বেহাল অবস্থা। সঙ্ঘের সভাপতি আশিস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ওই জমিতে একটু অন্য ভাবেও তো সরকারি অফিস করা যেত। এ ভাবে কয়েক শতাব্দী প্রাচীন স্থাপত্যকে নষ্ট না করলেই কী চলছিল না!” বেলপাহাড়ির বিডিও সন্তু তরফদার অসুস্থতার জন্য ছুটিতে আছেন। বেলপাহাড়ির ব্লকের বিএলআরও তরুণকুমার মাইতি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বংশীবদন মাহাতো বলেন, “সরকারি জায়গায় সরকার অফিস হয়েছে। একটি মন্দির অফিস চত্বরের ভিতরে থেকে গিয়েছে। সকলের ঢোকার জন্য একটি ছোট গেট করা হবে। হাতিদুয়ারটি সংস্কারের জন্য রাজ্যের প্রত্নতত্ত্ব দফতরের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Traditional sculpture new construction
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE