Advertisement
০৪ মে ২০২৪

চড়া রোদে কেন বয়স্কদের প্রশিক্ষণ, ক্ষুব্ধ কারাকর্মীরা

চড়া রোদে কেন বয়স্কদের প্রশিক্ষণ, এক হেড ওয়ার্ডারের মৃত্যুর পর এই প্রশ্নেই তোলপাড় কারারক্ষী মহল। শুক্রবার দুপুরে মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার লাগোয়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে শিবির চলাকালীন আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েন কালিম্পং থেকে মেদিনীপুরে আসা ৫৯ বছরের সিলভাস্তার রাই। রাতে মেদিনীপুর মেডিক্যালে তাঁর মৃত্যু হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৫ ০১:০৬
Share: Save:

চড়া রোদে কেন বয়স্কদের প্রশিক্ষণ, এক হেড ওয়ার্ডারের মৃত্যুর পর এই প্রশ্নেই তোলপাড় কারারক্ষী মহল। শুক্রবার দুপুরে মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার লাগোয়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে শিবির চলাকালীন আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েন কালিম্পং থেকে মেদিনীপুরে আসা ৫৯ বছরের সিলভাস্তার রাই। রাতে মেদিনীপুর মেডিক্যালে তাঁর মৃত্যু হয়। সে খবর ছড়িয়ে পড়তেই অসন্তোষ দানা বাঁধে কারারক্ষীদের মধ্যে। সূত্রের খবর, প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ দেবাশিস মুখোপাধ্যায়ের কাছেও একাংশ রক্ষী তাঁদের অসন্তোষের কথা জানান।

গত ১৮ মে থেকে মেদিনীপুরের কারারক্ষী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে হেড ওয়ার্ডারদের একটি ব্যাচের প্রশিক্ষণ শিবির শুরু হয়। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সব মিলিয়ে প্রায় ৪০ জন হেড ওয়ার্ডার এতে যোগ দেন। ৩০ মে পর্যন্ত প্রশিক্ষণ চলার কথা। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ফাঁকা জায়গাতেই শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। কারারক্ষীদের বক্তব্য, চড়া রোদে বয়স্কদের প্রশিক্ষণ দেওয়া ঠিক হচ্ছে না। সিপিএম প্রভাবিত সংগঠন ‘কারারক্ষী সমিতি পশ্চিমবঙ্গ’-এর নেতা রূপককুমার সাহস রায় বলেন, “যাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে তাঁদের কারও কারও বয়স ৫৮-৫৯। আর কিছু দিন পরই অবসর নেবেন। প্রচণ্ড গরমে এঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কোনও যুক্তি আছে?” এডিজি (কারা)-র কাছে প্রতিবাদপত্র পাঠাচ্ছেন বলেও জানান রূপকবাবু। তৃণমূল প্রভাবিত সংগঠন ‘বঙ্গীয় কারারক্ষী সমিতি’র নেতা কার্তিক সাহুও মানছেন, “এত গরমের মধ্যে বয়স্কদের প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত নয়।”

কর্তৃপক্ষ অবশ্য বিষয়টি এ ভাবে দেখতে নারাজ। তাঁদের মতে, কিছু দিন ধরেই প্রশিক্ষণ চলছে। তার মধ্যে একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটে গিয়েছে। কারা দফতরের ডিআইজি (মেদিনীপুর) বিপ্লব দাস বলেন, “এটা পদোন্নতির প্রশিক্ষণ, যাতে শূন্যপদগুলো তাড়াতাড়ি পূরণ করা যায়। পরপর কয়েকটি ব্যাচের প্রশিক্ষণ হয়েছে। এমন ঘটনা এই প্রথম।’’

শুক্রবার মেদিনীপুরের তাপমাত্রা ছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বেলা একটু গড়াতেই তাপমাত্রার পারদ তরতর করে চড়ছিল। প্রবল আর্দ্রতায় ঘেমেনেয়ে সকলে অস্থির। রাস্তায় বেরোলেই যেখানে চোখ জ্বলছে, কারও মাথা ঘুরছে, সেখানে কেন চড়া রোদে হেড ওয়ার্ডারদের প্রশিক্ষণ হবে, বিশেষ করে বয়স্কদের, কারারক্ষী মহল এখন সেই প্রশ্নে তোলপাড়। সিপিএম প্রভাবিত কারারক্ষী সংগঠনের নেতা রূপকবাবুর যুক্তি, “পদোন্নতির প্রশিক্ষণ তো এই গরমের সময় ইন্ডোর হতে পারে। সেখানে জেল-কোড পড়ানো যেতে পারে, প্রয়োজনীয় আরও কিছু বোঝানো যেতে পারে। কিন্তু এই চড়া রোদে বয়স্কদের প্রশিক্ষণ মেনে নেওয়া যায় না।’’

সংশোধনাগারের পরিকাঠামোগত সমস্যা নিয়ে অসন্তোষের শেষ নেই কারারক্ষী মহলে। মাস খানেক আগে মেদিনীপুরের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এসে এডিজি (কারা) অধীর শর্মা মেনেছিলেন, ‘যে পরিকাঠামো থাকা উচিত, সেটা নেই।” জেল-কর্মীদের যে কখনও সখনও চাপের মধ্যে কাজ করতে হয়, তাও মেনেছিলেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে গরমে প্রশিক্ষণ চলাকালীন অসুস্থ হয়ে পড়া এক হেড ওয়ার্ডারের মৃত্যুর ঘটনায় কারারক্ষী মহলের অসন্তোষ আরও বাড়ল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Medinipur Training Trinamool adhir sharma
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE