মাছ ধরতে সমুদ্রে নামছে ট্রলার। তারই মধ্যে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
রাজ্য মৎস্য দফতরের নিয়ম মেনে দু’ধরনের জাল ব্যবহার করতে পারেন মৎস্যজীবীরা। ইলিশ ধারার ক্ষেত্রে ৯০ মিলিমিটারের চেয়ে বড় ফাঁসের জাল ব্যবহার করা নিয়ম। অন্য মাছের ক্ষেত্রে ৪০-৪৫ মিলিমিটার ফাঁসের জাল ব্যবহার করা যায়। ট্রলারগুলি রাজ্য মৎস্য দফতরের থেকে অনুমোদন নিয়েই সমুদ্রে যাচ্ছে। কিন্তু তারা কেমন জাল নিয়ে সমুদ্রে নামছে— তা পরীক্ষা করে দেখাই হল না এই পেটুয়াঘাট, শঙ্করপুর বা শৌলায়। মৎস্য দফতরের সহ-মৎস্য অধিকর্তা (মেরিন) রামকৃষ্ণ সর্দারের সাফ কথা, “এতো পরিকাঠামো এই দফতরে নেই যে সব ট্রলার পরীক্ষা করে দেখা হবে।’’ এমনকী মাছ ধরে ফেরার সময় জাল পরীক্ষা হবে কিনা, তাও তিনি জানাতে পারেননি।
সাধারণত ৪০ মিলিমিটারের জাল ব্যবহার হয় ‘গ্রিলনেট ফিশিং’-এর ক্ষেত্রে। এই পদ্ধতি হল, সমুদ্রে জাল ফেলে দেওয়া হয়। মাছ এসে সেই জালে জড়িয়ে পড়ে। আর ৯০ মিলি মিটারের ফাঁসের জাল ব্যবহার হয় ‘ট্রল ফিশিং’-এ। এ ক্ষেত্রে ট্রলারে বাঁধা জাল নীচের দিকে ছড়ানো থাকে। মৎস্যজীবীদের দাবি, ৪০ মিলিমিটারের ‘গ্রিল নেট ফিশিং’-এর সময়ই ছোট ইলিশ ধরা পড়ে বেশি। সে ক্ষেত্রে মৎস্যজীবীদের কিছু করার থাকে না।
আবার জলসীমা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন মৎস্যজীবীরা। সমুদ্র সৈকত থেকে জলপথে ১২ নটিক্যাল মাইল (প্রায় ২২ কিলোমিটার) পর্যন্ত এলাকা রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন। তারপর ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত ‘এক্সক্লুসিভ ইকোনোমিক জোন’ কেন্দ্র সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন। তারপর আন্তর্জাতিক জলসীমা। ‘ওয়েস্টবেঙ্গল ইউনাইটেড ফিশারমেন অ্যাসোসিয়েশন’-এর রাজ্য সহ-সভাপতি ও ‘দিঘা ফিশারমেন অ্যান্ড ফিশ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক শ্যামসুন্দর দাসের অভিযোগ, “রাজ্য জল সীমায় নিয়ম খুব কড়া। কিন্তু বাকি এলাকা গুলোতে ট্রলারগুলো তেমন নিয়ম মানে না। সেখানেই সব থেকে বেশি ছোট ইলিশ ধরা হয়। তা হলে তাদের ধরবে কে?’’
দক্ষিণবঙ্গ মৎস্যজীবী ফোরামের কর্মকর্তা দেবাশিস শ্যামলের দাবি, “সমুদ্রের জলসীমার মধ্যে ‘মনিটরিং’ হয় না। তাই ছোট ইলিশ ধরা হয় অবাধে। শুধু তাই নয় অনেক সামুদ্রিক জিনিসই জালে তোলা হয় বেআইনি ভাবে ধরা হয়।’’ তাঁর আশঙ্কা এ ভাবে দিনের পর দিন চলতে থাকলে অনেক মাছ লুপ্ত হয়ে যাবে। নষ্ট হবে সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র।’’
এ সব বিষয়ে মৎস্যদফতরের সহ-মৎস্য অধিকর্তা (মেরিন) অবশ্য বলেন, “শুধু ইলিশ ধরা নয়, বাজারে বিক্রি কিংবা কেনা বা বহনকরাও বেআইনি। আর মাছ ধরলে বাজার ছাড়া আর কোথায় যাবে? কাজেই বাজারগুলোতেই কড়া নজরদারি চালাবে মৎস্যদফতর।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy