অভিজ্ঞতা: দুর্ভোগের কথা শোনাচ্ছেন বাসিন্দারা। নিজস্ব চিত্র।
দোকান-বাজারে যেতে মানা। মিলছে না সেচের জল। অসুস্থ হলে গ্রামীণ চিকিৎসকের কাছে যাওয়ারও জো নেই।
এই একবিংশ শতকেও এমনই সামাজিক বয়কটের শিকার ভূমিজ সম্প্রদায়ের গোটা কুড়ি পরিবার। অভিযোগ, তফসিলি উপজাতি তালিকাভুক্ত এই কুড়িটি পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বললে ৫০০ টাকা জরিমানা দিতে হবে বলেও ফরমান জারি করেছে গ্রামের মাতব্বরেরা। ঘটনাস্থল পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনি ব্লকের কাশীজোড়া এলাকার পাথরাজুড়ি গ্রাম। মেদিনীপুর শহর থেকে যার দূরত্ব মাত্র ২২ কিলোমিটার।
বয়কটের জেরে ভোগান্তিতে পড়া মানুষগুলো পুলিশ-প্রশাসনকে লিখিত ভাবে সব জানান। অভিযোগ জমা পড়েছে অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতরেও। কিন্তু তিন সপ্তাহ পরেও পরিস্থিতি যে কে সেই।
পাথরাজুড়ি গ্রামের অর্থনীতি কৃষি নির্ভর। নিজেদের সামান্য জমি চষেই দিন গুজরান করেন বাসিন্দারা। এমন আটপৌরে গ্রামে বিবাদ বেধেছে সিংহপাড়ার সঙ্গে দোলুইপাড়ার। সিংহপাড়ার ২০টি পরিবারই তিন সপ্তাহ ধরে বয়কটের মুখে পড়েছে। গোলমালের সূত্রপাত ৪ মাস আগে। গ্রামের পাশে গাছতলার বড়াম থানের পুজো ঘিরেই ওই দুই পাড়ার মধ্যে বিবাদ বাধে। ভূমিজ পরিবারগুলির অভিযোগ, এই থানে দীর্ঘদিন ধরে তারাই পুজো করছে। অথচ এ বার দোলুইপাড়ার ২০০টি পরিবার তাদের পুজো করতে বাধা দেয়। সাফ জানিয়ে দেয়, সিংহপাড়ার কেউ বড়াম থানে পুজো করতে পারবে না।
সিংহপাড়ার পুরোহিত ভুবন সিংহের কথায়, “এতদিন গ্রামের সকলেই এই থানে পুজো দিতেন। এ বারই প্রথম বাধার মুখে পড়তে হল।” সিংহপাড়ার দিলীপ সিংহ, বিশ্বজিৎ সিংহরাও বললেন, “আমরা নাকি নিচু জাত। তাই জল বন্ধ, সেচ বন্ধ, দোকান বন্ধ। বাজার করতে দু’কিলোমিটার দূরে গোয়াপিয়াশালে যেতে হচ্ছে।” পাথরজুড়িতে কাপড়ের দোকান রয়েছে গোপীনাথ দত্তের। তিনিও মানছেন, “সিংহপাড়ার লোকেদের জিনিস বেচা যাবে না বলে ফরমান জারি হয়েছে। এতে ব্যবসাও মার খাচ্ছে।”
বয়কটের অভিযোগ মানতে নারাজ দোলুইপাড়ার লোকজন। স্থানীয় শঙ্কর দোলুই, বিশ্বনাথ দোলুই, স্বপন দোলুইয়ের দাবি, “কোনও ফরমান জারি হয়নি। বড়াম থানের পুজোর সময় গ্রামের সকলের জন্য চাঁদা ধার্য হয়েছিল। কিন্তু সিংহপাড়ার লোকেরা চাঁদা দিতে রাজি হয়নি। তা নিয়েই কিছুটা সমস্যা হয়েছে।”
কিন্তু যে গ্রাম জেলার সদর শহর থেকে সামান্য দূরে, যে গ্রামে প্রাথমিক স্কুল রয়েছে, সেখানে কেন এখনও এই ভেদাভেদ?
শালবনি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নেপাল সিংহের জবাব, “মানুষের সব বিশ্বাস তো এক দিনে ভাঙা যায় না। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা চলছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy