বক্তা: খড়্গপুরে অনুষ্ঠান মঞ্চে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। নিজস্ব চিত্র
তৃণমূল পুরবোর্ডের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে ঘটা করে উদ্বোধন হল রেলশহরের বহু প্রতীক্ষিত দ্বিতীয় জল প্রকল্পের। আর সে দিনই জলসঙ্কটে জেরবার হলেন শহরের একটা বড় অংশের মানুষ।
খড়্গপুর পুরসভার চলতি তৃণমূল বোর্ডের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠান ছিল শনিবার। সেই মঞ্চেই ২০১০ সালে প্রস্তাবিত প্রায় ৮৬ কোটি টাকার দ্বিতীয় জল প্রকল্পের সূচনা করেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। মন্ত্রী বলেন, “এই জলপ্রকল্প গড়তে অনেকটা সময় লাগল। তবে প্রকল্প শেষ করে উদ্বোধনের জন্য পুর-কারিগরি দফতরকে ধন্যবাদ জানাই। আমাদের অনুমান খড়্গপুরে আর জলের অভাব থাকবে না। এর থেকে পাওয়া যাবে ১৮ মিলিয়ন গ্যালন জল।”
শহরবাসীর এ দিনের অভিজ্ঞতা অবশ্য অন্য কথা বলছে। সকাল থেকেই শহরের কোথাও জল আসেনি আবার কোথাও পর্যাপ্ত জল পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ। যেমন পুরাতনবাজার সংলগ্ন ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সঞ্জিত কুণ্ডু বলেন, “আমাদের এলাকায় তো সকাল থেকে জলই পাইনি।” ৭ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রীকৃষ্ণপুরের গৃহবধূ মৌসুমী জানা, কাজল সিংহরা আবার বলছিলেন, “কয়েকদিন ধরে ঘোলা জল আসছে। আর শনিবার সকালে পর্যাপ্ত জল পাইনি।”
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, জলপ্রকল্পের উদ্বোধন হয়ে গেলেও আদতে তার কাজ শেষ হয়নি। বহু এলাকায় সংযুক্ত হয়নি নতুন প্রকল্পের পাইপ লাইন। কংসাবতী নদীর তীরবর্তী কেশপাল থেকে শহরে নতুন প্রকল্পের জল আনতে ঝরিয়া পর্যন্ত নতুন পাইপ লাইন বসানোর কাজই করতে পারেনি পুরসভা। তাই এখন পুরনো পাইপ লাইনে বেশ কিছুক্ষণ জল সরবরাহ বন্ধ করে পরীক্ষামূলকভাবে নতুন প্রকল্পের জল ছাড়া হচ্ছে। এখনও দু’মাস এ ভাবেই পরীক্ষামূলক পদ্ধতি চলবে।
কাজ শেষের আগেই জলপ্রকল্পের উদ্বোধনের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে তাই প্রশ্ন উঠছে। শহরের বিরোধী দলনেত্রী কংগ্রেসের রীতা শর্মা বলেন, “সবই লোক দেখানো ব্যাপার। কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না।” একই মত খড়্গপুরের সিপিএম কাউন্সিলর স্মৃতিকনা দেবনাথের। সমস্যা স্বীকার করেছেন জল বিষয়ক পুর-পারিষদ তৃণমূলের তৈমুর আলি খানও। তিনি বলেন, “আসলে কেশপাল থেকে ঝরিয়া পর্যন্ত নতুন পাইপ লাইন আমরা এখনও বসাতে পারিনি। ট্রায়ালের জন্য পুরনো পাইপ লাইনে নোংরা জল ছাড়া হচ্ছে। তাই ভাল্ব বন্ধ রাখা হচ্ছে। এতে একটু জলের সমস্যা হচ্ছে।” কিন্তু পরীক্ষা চলাকালীন প্রকল্পের উদ্বোধন হল কীভাবে? এর সদুত্তর অবশ্য দিতে পারেননি তৈমুর।
প্রশ্ন দেখা দিয়েছে অন্য কয়েকটি বিষয় নিয়েও। এ দিন পুরসভার দু’বছরের কাজের খতিয়ান দিয়ে যে বই প্রকাশিত হয়েছে, তাতে ইন্দা-চৌরঙ্গি, মীরপুর-কৌশল্যা, খরিদা-সেনচক পর্যন্ত রাস্তার ম্যাস্টিক সারফেস রোড গড়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে পুরসভার উদ্যোগে চৌরঙ্গী-ইন্দার রাস্তার প্রশস্তিকরন, সৌন্দার্যায়ন, কলেজ পর্যন্ত ফুটপাথ গড়া হয়েছে বলেও লেখা রয়েছে। যদিও এই সমস্ত রাস্তা পূর্ত দফতর গড়েছে। পূর্ত বিভাগের পুর-পারিষদ তুষার চৌধুরীও মানছেন, “আমরা ওই রাস্তার কাজ করিনি। ওগুলি পূর্ত দফতরের। আর আমি তো ওই বই ছাপিনি। পুরপ্রধান বলতে পারবেন।”
যদিও খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারের দাবি, ‘‘পরীক্ষামূলক ভাবে নয়, এ দিন থেকেই নতুন প্রকল্পে জল পেয়েছেন শহরের একাংশের বাসিন্দারা। অন্য এলাকাতেও ধীরে ধীরে জল সরবরাহ করা হবে।’’ আর পূর্ত দফতরের রাস্তা পুরসভার খতিয়ানে ঠাঁই পাওয়াকে ‘ছাপার ভুল’ বলে জানিয়েছেন তিনি।
এ দিনের অনুষ্ঠানে তৃণমূল কাউন্সিলরেরা উপস্থিত থাকলেও বিরোধী কাউন্সিলরদের দেখা যায়নি। এমনকী সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিজেপি-র বিধায়ককে ডাকা হয়নি বলেও অভিযোগ। বিরোধী দলনেত্রী রীতা শর্মা বলেন, “আমাদের বোর্ড মিটিংয়ে এই অনুষ্ঠান হবে বলে বলেছিল। কিন্তু কোনও আমন্ত্রণপত্র দেওয়া হয়নি। প্রাক্তন বিধায়ককে ডাকা হয়নি।” শহরের বিধায়ক তথা বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের কটাক্ষ, “ওরা উন্নয়ন পর্ষদের বৈঠকেও আমাকে ডাকে না। আসলে তৃণমূল দলের কেউ সৌজন্যই
জানে না।”
খড়্গপুর শহরে একটি জলশোধন প্রকল্প এবং একটি প্রেক্ষাগৃহ গড়া হবে হবে বলে এ দিন ঘোষণা করেছেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy