পুরসভার বকেয়া কর আদায় করতে এ বার কড়া পদক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নিল তমলুক পুরসভা। পুরসভা এলাকায় যে সব বাড়ির বকেয়া পুর কর (হোল্ডিং ট্যাক্স)-এর পরিমণ পাঁচ হাজার টাকার বেশি, সেই সব পরিবারের জলের সংযোগ কেটে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরসভা। সোমবার পুরসভার কর মূল্যায়ন দফতরের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তমলুকের উপ-পুরপ্রধান দীপেন্দ্রনারায়ণ রায় বলেন, ‘‘পুর এলাকার বাসিন্দা অধিকাংশ পরিবার সময়মতো পুর-কর জমা দেয়। তবে একাংশ পরিবার দীর্ঘদিন ধরে পুরসভার কর বাকি রেখেছে। এরফলে পুরসভার প্রাপ্য বকেয়া করের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮৪ লক্ষ টাকা। এর ফলে পুরসভা এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নের কাজ ব্যাহত হচ্ছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘যে সব বাড়ির বকেয়া পুরকরের পরিমাণ পাঁচ হাজার টাকার বেশি, সেই সব বাড়ির জল সংযোগ বিছিন্ন করার বিষয়ে পুরসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জলের সংযোগ ছিন্ন করার আগে ওইসব বাড়ির মালিকদের বকেয়া কর মেটানোর জন্য সতর্ক করে তিনবার নোটিস দেওয়া হবে। ওই নোটিস পাওয়ার পরেও যারা পুরকর জমা দেবেনা তাঁদের বাড়ির পানীয় জলের সংযোগ ছিন্ন করা হবে। আগামী জুলাই মাস থেকে পুরসভার এই সিদ্ধান্ত কার্যকরী হবে।’’
পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০টি ওয়ার্ড বিশিষ্ট তমলুক পুরসভা এলাকায় বাড়ি, দোকান ঘর, সরকারি-বেসরকারি অফিস মিলিয়ে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার বাড়ি (হোল্ডিং) রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই বসতবাড়ি। পুর আইন অনুযায়ী, এইসব পরিবারের কাছ থেকে পুর-কর (হোল্ডিং ট্যাক্স) আদায় করে থাকে পুরসভা। পুরসভার অধিকাংশ পরিবারই নিয়মিত পুর-কর জমা দেন। তবে পুরসভার একাংশ বাসিন্দা দীর্ঘদিন ধরে কর জমা দিচ্ছে না বলে অভিযোগ।
ফলে শহরের অনেক বাড়ির বকেয়া হোল্ডিং ট্যাক্স কয়েক হাজার টাকা থেকে তিন-চার লক্ষ টাকা পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে। ওইসব পরিবারের বকেয়া পুর-করের পরিমাণ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বকেয়া পুর-করের উপর নির্দিষ্ট হারে সুদ দিতে হয়। সব মিলিয়ে বর্তমানে তমলুক পুরসভার এই বকেয়া পুর-করের পরিমাণ প্রায় দেড় কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছেছে বলে জানা গিয়েছে। অর্থ সঙ্কটের দরুন শহরের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের ক্ষেত্রেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে পুর কতৃপক্ষকে। পুরসভার পক্ষ থেকে বকেয়া কর জমা দেওয়ার জন্য বার বার নোটিস দেওয়া হলেও অনেক পরিবারই এখনও তা জমা দেননি বলে পুরসভা সূত্রে খবর। উপ-পুরপ্রধান জানান, বকেয়া পুর-কর জমা দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা দিয়ে পুরসভার তরফে নোটিস পাঠানো হবে। ওই সময়সীমার মধ্যে বকেয়া পুর-কর জমা না দিলে ওই সব বাড়িতে পুরসভার জলের সংযোগ কেটে দেওয়া হবে।
উপ-পুরপ্রধান আরও জানান, নোটিস পেয়ে অনেকেই পুরসভায় এসে তাঁদের বকেয়া পুরকরের উপর সুদ মকুবের আর্জি জানিয়েছেন বা বকেয়া কর মেটানোর জন্য কিস্তিতে তা মেটানোর সুযোগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছেন। পুর-আইন মেনে এ বিষয়ে বিবেচনা করে বকেয়া পুর কর মেটানোর জন্য সুযোগ দেওয়া হবে। কিন্তু এরপরও যদি বকেয়া কর না মেটায় তাহলে ওইসব বাড়ির পানীয় জলের সংযোগ ছিন্ন করা হবে।
তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার এই সিদ্ধান্ত নিয়ে পুরসভায় বিরোধী দল বিজেপি’র কাউন্সিলর বিশ্বজিৎ দত্ত বলেন, ‘‘বকেয়া পুরকর আদায় নিয়ে পুরবোর্ডে আলোচনার সময় পুরসভার এই পদক্ষেপকে সমর্থন জানিয়েছি। কারণ শহরের অনেক বাসিন্দা বা বাড়ি মালিক নিয়ম মেনে পুরকর জমা দিচ্ছেন। অথচ কিছু সংখ্যক বাড়ি মালিক দীর্ঘদিন ধরে পুরকর বাকি রাখার ফলে বকেয়া পুরকরের পরিমান অনেকটাই দাঁড়িয়েছে। পুরসভার উন্নয়নের স্বার্থে এই কর আদায় প্রয়োজন। তবে বাড়িতে পানীয় জলের সংযোগ ছিন্ন করার আগে বকেয়া পুরকর মেটানোর জন্য যতটা সম্ভব সুযোগ দেওয়া উচিত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy