ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটিতে রেবতী চালক। নিজস্ব চিত্র
নেকড়ের পরে এবার হায়না! জঙ্গলে ছাগল চরাতে গিয়ে হায়নার হামলায় জখম হলেন এক মহিলা। ওই বন্যপ্রাণীটি মহিলার দু’টি ছাগলকে কামড়ে মেরে ফেলেছে। মহিলাকেও আঁচড়ে-কামড়ে দিয়েছে। লাঠি হাতে বাকি ৯টি ছাগলকে বাঁচিয়েছেন ঝাড়গ্রামের লোধাশুলি গ্রামের বছর পঁয়তাল্লিশের মহিলা রেবতী চালক। কোন প্রাণী আক্রমণ করেছে সেটি তিনি বুঝতে পারেননি। বন দফতরের লোধাশুলি রেঞ্জ অফিসার সুমিত ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা ওই মহিলাকে নেকড়ে-সহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর ছবি দেখাই। উনি হায়নার ছবি দেখে হামলাকারী প্রাণিটিকে চিহ্নিত করেছেন। নিশ্চিত হওয়ার জন্য জঙ্গলে গিয়ে আমরা পায়ের ছাপ সংগ্রহ করেছি।’’
রেবতী জানিয়েছেন, তিনি পেশায় দিনমজুর। গত রবিবার ১১টি ছাগল নিয়ে গ্রামের অদূরের দহতমূলের শাল জঙ্গলে গিয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন সরলা মাহাতো নামে এক পড়শি বৃদ্ধা। রেবতী জানান, রবিবার দুপুর ১টা নাগাদ আচমকা ওই হায়না গভীর শালবন থেকে ছুটে এসে একটি ছাগলের টুঁটি টিপে ধরে। হাতের লাঠি দিয়ে হায়নাটিকে মারেন রেবতী। এবার প্রাণিটি ছাগলকে ছেড়ে রেবতীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাঁর ডান পায়ে কামড়ে দেয়। রেবতী হায়নাটিকে লাঠিপেটা করতে গেলে সে আবার তাঁকে কামড়ে দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সরলা বলেন, ‘‘আমি বয়সের ভারে অশক্ত। তাই ভয়ে সিঁটিয়ে ছিলাম। রেবতী একাই লাঠি দিয়ে প্রাণিটাকে আটকানোর চেষ্টা করছিল। আশে পাশে আরও কয়েকজন ভিন গাঁয়ের মহিলা ছাগল চরাচ্ছিলেন। ভয়ে কেউই রেবতীকে বাঁচানোর সাহস দেখাননি। শেষ পর্যন্ত রেবতী লাঠিপেটা করে তাকে তাড়িয়ে দেয়।’’ রেবতী বন দফতরের লোধাশুলি রেঞ্জ অফিসে গিয়ে ঘটনাটি জানান। তাঁকে হাসপাতালে যেতে বলা হলেও তিনি প্রথমে যাননি। শেষ পর্যন্ত রবিরার রাত সাড়ে ১১ টা নাগাদ রেবতীকে বন দফতরের গাড়িতে করে ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অ্যান্টি রেবিস ভ্যাকসিন (এআরভি) মজুত ছিল না। তাই প্রাথমিক চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় ইনজেকশন দিয়ে তাঁকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সোমবার হাসপাতালের এআরভি ক্লিনিক চালু হয়। সোমবার সেখানে এসে প্রতিষেধক নিয়েছেন ওই মহিলা। তাঁকে নিয়মিত হাসপাতালের বর্হিবিভাগে দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
হাসপাতাল সুপার মলয় আদকের সঙ্গে দেখা করে কীভাবে বন্যপ্রাণিটার সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন তা শোনান রেবতী। সুপার জানান, রবিবার হাসপাতালে প্রতিষেধক না থাকায় দেওয়া যায়নি। সোমবার খোলা বাজার থেকে এআরভি প্রতিষেধক কেনা হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর থেকেও প্রতিষেধক এসেছে। এআরভি ক্লিনিক সোমবার থেকে চালু হয়ে গিয়েছে।
ডিএফও (ঝাড়গ্রাম) বাসবরাজ হোলাইচ্চি বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে প্রাণিটি হায়না বলে মনে হচ্ছে। জঙ্গলের ভিতরেই ওই মহিলা আক্রান্ত হন। এলাকাবাসীকে জঙ্গলের গভীরে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy