Advertisement
E-Paper

ভরাট রুখতে পুকুর পাহারায় মহিলারা

প্রাচীন পুকুর ও সংলগ্ন জলাভূমি ভরাটের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেন মহিলারা। ঝাড়গ্রাম শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের গাইঘাটা এলাকায় পুকুরটি দিব্যি ছিল দিন কয়েক আগেও।

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:০৬
জমি ছাড়তে নারাজ মহিলারা ঠায় দাঁড়িয়ে পাহারায়। — নিজস্ব চিত্র

জমি ছাড়তে নারাজ মহিলারা ঠায় দাঁড়িয়ে পাহারায়। — নিজস্ব চিত্র

প্রাচীন পুকুর ও সংলগ্ন জলাভূমি ভরাটের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেন মহিলারা। ঝাড়গ্রাম শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের গাইঘাটা এলাকায় পুকুরটি দিব্যি ছিল দিন কয়েক আগেও। হঠাৎই দেখা যায় একদল লোক মাটি ফেলতে শুরু করেছে। শুরুতেই প্রতিবাদ করেন স্থানীয়রা কাজ হয়নি। তারপরেই রুখে দাঁড়ান মহিলারা। অভিযোগ, সেই প্রতিবাদের ফলে নিয়মিত হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁদের।

জমি কারবারিদের যে সব লোকজন হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ, তাঁদের বেশির ভাগই এলাকায় কুখ্যাত সমাজ বিরোধী হিসেবে পরিচিত। পুকুর ও জলাভূমি বাঁচাতে এবং নিজেদের নিরাপত্তা চেয়ে মহকুমাশাসকের দ্বারস্থ হয়েছেন এলাকার মহিলারা। ভরাট হওয়ার থেকে পুকুর বাঁচাতে মহিলারা পালা করে পাহারা দিচ্ছেন। স্থানীয় কাউন্সিলরের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বাসিন্দারা।

বাছুরডোবা থেকে রাধানগর যাওয়ার পিচ রাস্তার ধারে গাইঘাটা দিকে গেলেই চোখে পড়বে রায়তি জমির উপর ওই পুকুরটি। সংলগ্ন জমিটি কলকাতার এক বাসিন্দার। স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই পুকুর ও জমিটি নিয়ে আইনি জটিলতা রয়েছে। মহকুমাশাসককে দেওয়া অভিযোগপত্রে স্থানীয় মহিলারা জানিয়েছেন, পুকুরটি প্রায় একশো বছরের পুরনো। সেখানে স্থানীয়দের একাংশ মাছ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। গবাদি পশুরা ওই পুকুরের জল খায়, গৃহপালিত হাঁস চরে। ওই এলাকায় প্রায় ৫০ ঘর দরিদ্র দিনমজুর পরিবার সেখানে বাস। ফলে ঘরের নিত্যকাজে পুকুরের জলই ব্যবহার করেন তাঁরা।

সম্প্রতি জমি মাফিয়া ও কিছু সমাজবিরোধীরা মিলে পুকুর ও সংলগ্ন জমি দখল করতে চাইছে বলে অভিযোগ। দরিদ্র বাসিন্দাদের উচ্ছেদের ফতোয়াও দিচ্ছে তারা। এ ব্যাপারে গত ১৩ নভেম্বর ঝাড়গ্রাম থানায় অভিযোগ জানান স্থানীয়রা। কিন্তু ২৭ নভেম্বর জমি মাফিয়াদের লোকজন স্থানীয় এক দল দুষ্কৃতীকে নিয়ে পুকুরটির এক দিকের পাড়ের মাটি কেটে জলাভূমি ভরাট করতে থাকে বলে অভিযোগ। মহিলাদের প্রতিরোধে অবশ্য তারা সাময়িক পিছু হটে। কিন্তু তারপরেই শুরু হয় হুমকি। অভিযোগ দিনরাত হুমকি দিচ্ছে ওই সমাজবিরোধীরা।

ঝাড়গ্রাম থানার পক্ষ থেকে এলাকায় সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন করা হয়েছে। ঝাড়গ্রাম থানার এক আধিকারিক জানান, “পুকুর ভরাটকারীদের দাবি, ওটি বাস্তুজমি। তবে প্রশাসনের নির্দেশে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ওখানে সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন করা হয়েছে। ভূমি দফতর তদন্ত শুরু করেছে। রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত ওখানে কোনও রকম কাজ করা যাবে না।”

কিন্তু বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশের নজরদারি নেই। ফলে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। রাস্তার ধারে একটি খড়ের ছাউনি করে বসে থাকছে ওই সমাজ বিরোধীরা। আসতে যেতে চোখ রাঙাচ্ছে। এলাকায় গিয়ে দেখা গেল স্থানীয় মহিলারা পুকুরের চারপাশে নজরদারি চালাচ্ছেন। তাঁরা জানালেন, “প্রাচীন পুকুর তাঁরা কিছুতেই ভরাট করতে দেবেন না।” স্থানীয় কাউন্সিলরের ভূমিকা নিয়েও চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেন মহিলারা। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর মহাদেব মাহাতোর অবশ্য বলেছেন, “পুকুর সংলগ্ন বাস্তু জমি সমতল করছিলেন জমির মালিক। অভিযোগের ভিত্তিতে কাজটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পুকুর ভরাট করতে দেওয়া হবে না।”

ঝাড়গ্রাম পুরসভার উপ পুরপ্রধান শিউলি সিংহ বিষয়টি স্বীকার করেছেন, “পুরনো পুকুরটি ভরাটের বিরুদ্ধে মহিলারা সোচ্চার হয়েছেন। এ জন্য মহিলাদের নানা ভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পেয়েছি। ওখানে পুলিশের পক্ষ থেকে সিভিক মোতায়েন করা হয়েছে।” ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসক নকুলচন্দ্র মাহাতো বলেন, “ভূমি দফতরের তদন্ত রিপোর্ট পেলে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।”

Women guarding Pond filling
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy