কর্মচারীদের আন্দোলনে মঙ্গলবার মেদিনীপুর আদালতে স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হল। বিচারপ্রার্থীদের অনেকেই ফিরে গিয়েছেন। নানা দাবিতে কর্মচারীদের আন্দোলন চলছিলই। আন্দোলন চলাকালীন সোমবার আচমকা মদনমোহন সিংহ নামে এক সেরেস্তাদারকে মেদিনীপুর থেকে দাঁতন আদালতে বদলি করে দেওয়া হয়। মদনমোহনবাবু আগামী মাসেই অবসর নেবেন। বদলির কথা জানাজানি হতেই অসন্তোষ ছড়ায়। বদলির নির্দেশ প্রত্যাহারের দাবিতে সকাল থেকে শুরু হয় বিক্ষোভ। আদালত চত্বরে মিছিলও হয়।
কর্মচারীদের তরফে বিকাশ মজুমদার বলেন, “আমাদের সুনির্দিষ্ট কয়েকটি দাবি রয়েছে। অথচ, কর্তৃপক্ষ উদাসীন।” তিনি আরও বলেন, “আগামী মাসে যিনি অবসর নেবেন, তাঁকে আচমকা দাঁতনে বদলি করা হল কেন, তাই বুঝতে পারছি না। উনি আমাদের আন্দোলনে ছিলেন। জানি না, আমাদের কোনও বার্তা দেওয়ার জন্যই এই বদলির নির্দেশ কিনা।”
মেদিনীপুরের জেলা ও দায়রা বিচারক রাই চট্টোপাধ্যায়ের এজলাসের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি করেন কর্মচারীরা। কোনও রাজনৈতিক দলের প্রভাবিত সংগঠন নয়, যৌথ মঞ্চ গড়েই আন্দোলন শুরু করেছেন আদালত কর্মচারীরা। কয়েকদিন আগে থেকেই আদালত চত্বরে মিছিল হচ্ছিল। প্রতীকী কর্মবিরতিও করা হয়। মঙ্গলবার প্রায় সব এজলাসেই স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়েছে।
মৃত কর্মীদের পরিবারের এক জনকে চাকরি দেওয়া, অবসরপ্রাপ্ত যে সব কর্মী দীর্ঘদিন পেনশন পাচ্ছেন না, তাঁদের পেনশনের ব্যবস্থা করা, পদোন্নতি-সহ নির্দিষ্ট কয়েকটি দাবিতে এই আন্দোলন চলছিল। বদলির সিদ্ধান্তের পরে শুরু হয় বিক্ষোভ। কর্মীদের তরফে বিকাশবাবু বলেন, “আদালতের স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত হোক, এটা আমরাও চাই না। তাই দিন কয়েক ধরেই টিফিন আওয়ারে মিছিল হচ্ছিল। কিন্তু কোনও কর্মচারীর সঙ্গে এই অন্যায় আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। প্রতিবাদ হবেই।”
আদালতে এমনিতেই বহু মামলা জমছে। বিচারে বিলম্ব হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে সময়ের মধ্যে বিচারের ভার বিচার ব্যবস্থা বইতে পারে না বলেও মত একাংশ আইনজীবীর। এই পরিস্থিতিতে কাজের দিনে আদালতের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হওয়ার ফলে সমস্যা বেড়েছে। আইনজীবী মৃণাল চৌধুরী বলেন, “এ দিন মক্কেলদের অনেকেই আদালতে এসে ফিরে গিয়েছেন।” একই কথা জানাচ্ছেন আইনজীবী শান্তি দত্ত। তাঁর কথায়, “কর্মচারীরা আন্দোলনে ছিলেন। তাই এ দিন আদালতে স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়নি।” অন্য এক আইনজীবীর কথায়, “দাবি সঙ্গত না অসঙ্গত, সেই বিতর্কে যাচ্ছি না। তবে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানসূত্র বের করা উচিত। সমস্যা আছে। সমস্যা থাকবে। কিন্তু, বিচারপ্রার্থীরা দূর থেকে এসে ফিরে যাবেন, এটা হতে পারে না।”