Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Kurmi Community

কুড়মি আন্দোলন, ঘোষণাতেই ফাটল

চলতি বছরের ৪ এপ্রিল খেমাশুলিতে রাজেশের নেতৃত্বে জাতীয় সড়ক অবরোধ শুরু করেছিল ঘাঘর ঘেরা কমিটি।

Ajit Prasad mahato, Kurmi Community

আদিবাসী কুড়মি সমাজের বিশেষ অধিবেশনে সংগঠনের মুখ্য উপদেষ্টা অজিতপ্রসাদ মাহাতো। রবিবার ঝাড়গ্রামের এক অতিথিশালায়। নিজস্ব চিত্র kingshuk.gupta@abp.in

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২৩ ০৮:৪০
Share: Save:

এক কুড়মি নেতার আহ্বান এড়িয়ে গেলেন মামলা-বিদ্ধ ১১ কুড়মি নেতা-কর্মী।

কুড়মি সামাজিক সংগঠনগুলি একযোগে জাতিসত্তার দাবিতে আন্দোলনে নামুক। এমনটাই চেয়েছিলেন আদিবাসী কুড়মি সমাজের মুখ্য উপদেষ্টা অজিতপ্রসাদ মাহাতো। সেই লক্ষ্যে রবিবার ঝাড়গ্রাম শহরের আদিবাসী কুড়মি সমাজের বিশেষ অধিবেশনও ডাকা হয়েছিল। ঘাঘর ঘেরা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কুড়মি সংগঠনগুলিকেও অধিবেশনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন অজিতপ্রসাদ। ব্যক্তিগত ভাবে কুড়মি সমাজের (পশ্চিমবঙ্গ) নেতা রাজেশ মাহাতো, আদিবাসী জনজাতি কুড়মি সমাজের নেতা শিবাজী মাহাতো, আদিবাসী নেগাচারী কুড়মি সমাজের নেতা অনুপ মাহাতোকে ফোনও করেছিলেন অজিতপ্রসাদ। মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদার গাড়িতে হামলায় অভিযুক্ত রাজেশ, শিবাজী, অনুপ মাহাতোর মত জামিনে মুক্ত ১১ জনের কেউ এলেন না অজিতপ্রসাদের অধিবেশনে। দিনের শেষে ঐক্যবদ্ধ কুড়মি আন্দোলনের ভবিষ্যৎ নিয়েই কিছু প্রশ্নও উঠল। অজিতপ্রসাদ অবশ্য এ দিন বিকেলে ঘোষণা করলেন, কুড়মিদের আদিবাসী তালিকাভুক্তির দাবিতে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর থেকে খড়্গপুর গ্রামীণের খেমাশুলিতে অনির্দিষ্টকালীন ‘রেল টেকা’ (রেল অবরোধ) ও জাতীয় সড়কে ‘ডহর ছেঁকা’ (সড়ক অবরোধ) কর্মসূচি হবে। আদিবাসী কুড়মি সমাজের উদ্যোগেই হবে ওই অবরোধ কর্মসূচি। অবরোধ কর্মসূচি সফল করতে জেলা জুড়ে জোরদার প্রচার অভিযান হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্য উপদেষ্টা। অজিত জানিয়ে দেন, পঞ্চায়েত ভোটের আগে কুড়মি অধ্যুষিত গ্রাম গুলিতে ঝান্ডা গাড়া সহ যে সব কর্মসূচি চলছিল সেগুলি যথারীতি বহাল থাকছে। এছাড়াও জঙ্গলমহলে হাতির উপদ্রব বেড়ে চলায় বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগপ্রকাশ করেন আদিবাসী কুড়মি সমাজের মুখ্য উপদেষ্টা। হাতি সংক্রান্ত বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে জেলা প্রশাসন ও বন দফতরে ডেপুটেশন দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। পঞ্চায়েত ভোটে লড়া কুড়মি নির্দল প্রার্থীদের উপর পুলিশি জুলুমের অভিযোগ তুলে সরব হন অজিতপ্রসাদ।

চলতি বছরের ৪ এপ্রিল খেমাশুলিতে রাজেশের নেতৃত্বে জাতীয় সড়ক অবরোধ শুরু করেছিল ঘাঘর ঘেরা কমিটি। পরদিন অজিত প্রসাদের আদিবাসী কুড়মি সমাজ সেখানে রেল অবরোধও শুরু করেছিল। নাগাড়ে চলা অবরোধে নাকাল হন পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলার বাসিন্দারা। পরে ৮ এপ্রিল অজিতপ্রসাদ রেল অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন। দু’দিন পর ১০ এপ্রিল রাজেশও জাতীয় অবরোধ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন। পরে ঘাঘর ঘেরা কমিটির আন্দোলনের সুর চড়িয়ে গ্রামে গ্রামে রাজনৈতিক লোকজনের ঢোকা বন্ধ, কুড়মিদের দেওয়ালে রাজনৈতিক প্রচার লিখনে ফতোয়া দেওয়া হয়। ২৬ মে ঝাড়গ্রামের গড়শালবনিতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়েক কনভয়ে থাকা মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদার গাড়িতে হামলার ঘটনায় রাজেশ সহ ১১ জন গ্রেফতার হন। রাজেশদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে ঝাড়গ্রাম শহরে আদিবাসী কুড়মি সমাজের জাকে বিশাল জমায়েত করে সভা করেন অজিতপ্রসাদ। রাজেশরা জেলবন্দি থাকাকালীন ঘাঘর ঘেরা কেন্দ্রীয় কমিটি নির্দলে ভোটে লড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ভোটে দাঁড়ানো নিয়ে অজিতপ্রসাদের আপত্তি থাকলেও পরে তিনি ঘোষণা করেন, কুড়মিদের দাবি ও সামাজিক সংস্কৃতির (নেগাচারি) প্রতি যাঁদের সমর্থন ও সহমর্মিতা রয়েছে এমন নির্দল প্রার্থীদের সমর্থন করবেন কুড়মিরা। নির্দল প্রার্থীদের সমর্থনে ঝাড়গ্রামের নয়াগ্রামে সভাও করেন অজিতপ্রসাদ। পঞ্চায়েত ভোটের আগে ও পরে গাড়ি হামলার সব অভিযুক্ত জামিনে মুক্ত হন।

রাজেশরা অধিবেশনে না-আসায় ঊষ্মার সঙ্গে অজিতপ্রসাদ বলেন, ‘‘অনেকের মধ্যে প্রশ্ন উঠছে আমরা ঐক্যবদ্ধ লড়াই করতে পারছি না কেন? রাজেশ, শিবাজীদের ফোন করেছিলাম। অনুপ ফোন ধরেনি। আগে তো ওরা আমার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিল। পরে ওরা সরে গিয়েছে। এত তাড়াতাড়ি ফেরাটা সম্ভব নয়।’’ রাজেশের বিরুদ্ধে তোপ দেগে এদিন অজিত বলেন, বিগত লোকসভা ভোটে তৃণমূল প্রার্থী বিরবাহা সরেন টুডুর স্বামী রবিন টুডু কুড়মিদের জনজাতি তালিকাভুক্তির দাবির বিরোধিতা করেছিলেন। সেই কারণে বিরবাহা সরেন টুডুকে কোনওমতেই কুড়মিরা ভোট দেবেন না বলে অবস্থান নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই সময় রাজেশ সরাসরি বিরবাহা সরেন টুডুকে সমর্থন করেন। পরে আদিবাসী কুড়মি সমাজ থেকে সরে গিয়ে রাজেশ আলাদা সংগঠন তৈরি করেন। অনুপের বিরুদ্ধে অজিতপ্রসাদ বলেন, ‘‘অনুপ সামাজিক আন্দোলন করলেও রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। ফলে এরা আমার কাছে ফিরতে পারবে না।’’ অজিতের সাফ কথা, ‘‘আমি যেমন ছিলাম, তেমন আছি। আমার বিচ্যুতি ঘটেনি। আমৃত্যু সমাজের আন্দোলনে থাকব।’’ অজিত জানান, সবার সঙ্গে সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করা হবে। কুড়মি রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশ্যে অজিতের আবেদন, ‘‘আগামী দু’বছরের জন্য আপনারা রাজনীতি ছাড়ুন। সমাজের আন্দোলনে সামিল হোন। আমরা জনজাতি তালিকাভুক্তির দাবি আদায় করে নেব।’’

এদিন শিবাজীর বাবা ৮১ বছরের মনোরঞ্জন মাহাতো এসেছিলেন অজিতের সভায়। তিনি বলছেন, ‘‘সব কুড়মি সংগঠন ঐক্যবদ্ধ হয়ে একত্রিত হলে আন্দোলন সফল হবেই। মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদার গাড়িতে কোনও কুড়মি সংগঠন হামলা চালায়নি। জঙ্গলমহলকে মণিপুর করার চক্রান্ত হয়েছিল।’’ ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত থাকায় শিবাজী আসতে পারেননি বলে জানান মনোরঞ্জন। অন্যদিকে রাজেশ বলছেন, ‘‘আদালতের জামিনের আদেশনামায় কিছু শর্ত রয়েছে। সেই কারণে আমরা যেতে পারিনি। উনি (অজিতপ্রসাদ) সম্মানীয় ব্যক্তি। তাঁর বক্তব্যের পাল্টা মন্তব্য করব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kurmi Community Jhargram
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE