বছর ছয়েকের ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন রামনগরের জিনন্দপুর গ্রামের দেবেন্দ্রনাথ হাজরা। ছেলের দাঁতে ব্যথা। কেন ব্যথা জানতে চিকিৎসক বলেছিলেন এক্স-রে করতে হবে। তারপরেই হাসপাতালে বসে থাকা এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মী আঙুল তুলে বলে দিলেন, হাসপাতালের বাইরে কোন ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে এক্স-রে করতে হবে।
‘‘দাঁতের এক্স-রে করতে বেসরকারি সেন্টারে যেতে হবে কেন?’’ চেপে ধরতেই ওই কর্মী বললেন, ‘‘হাসপাতালের মেশিন খারাপ। তাই কাছাকাছি যে কোনও এক্স-রে সেন্টারে যাওয়ার কথা বলছি। নির্দিষ্ট সেন্টারের নাম বলিনি।’’
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, গত এক বছর ধরে দাঁতের এক্স-রে মেশিন খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে। তাই দন্ত চিকিৎসক রোগী দেখে এক্স-রে করার পরামর্শ দিলে রোগীদের দেখিয়ে দেওয়া হয় বেসরকারি সেন্টার। বিষয়টি জানেন হাসপাতালের সুপার সব্যসাচী চক্রবর্তীও। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এক্স-রে মেশিনটি যে কোম্পানির থেকে কেনা হয়েছিল তারা জানিয়েছে মেশিনটি আর সারানো যাবে না। নতুন মেশিনের জন্য অনুমোদন এলে তবে সমস্যার সমাধান হবে।’’ তবে চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরা যদি নির্দিষ্ট কোনও বেসরকারি সেন্টারে যাওয়ার জন্য রোগীর পরিবারকে প্ররোচিত করেন, তবে শাস্তির আশ্বাস দেন তিনি।
তবে রোগীর পরিবার অভিযোগ তুলেছেন হাসপাতালের দন্ত চিকিৎসকের চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়েও। তাঁদের অভিযোগ, চিকিৎসক শর্মিষ্ঠা চক্রবর্তী হাসপাতালের টিকিটে নিজের নাম লেখেন রাবার স্ট্যাম্পের ছাপ দিয়ে। ওষুধের নাম, এক্স-রে পরামর্শ— সবই স্ট্যাম্পে তৈরি করে রেখেছেন তিনি।
দেবেন্দ্রবাবুর সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটেছে। তাঁর কথায়, ‘‘সব রোগীর চিকিৎসা নিশ্চয়ই এক হয় না। ওই চিকিৎসক কত রকমের রাবার স্ট্যাম্প বানিয়ে রেখেছেন? এ ভাবে কি চিকিৎসা হয়?’’
এ ভাবে সরকারি হাসপাতালের টিকিটে স্ট্যাম্প লাগানো বেআইনি। সে কথা বলছেন খোদ রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী। তিনি বলেন, ‘‘এ ভাবে রোগীদের সরকারি টিকিটের উপর স্ট্যাম্প লাগানো ঠিক নয়। সম্প্রতি হাওড়াতে প্রায় একই রকম ঘটনা ঘটেছে। সে ক্ষেত্রে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ও অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ যদিও ঘটনায় তেমন কোনও অনিয়ম দেখছেন না জেলা উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সমুদ্র সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘এ ভাবে চিকিৎসা করার মধ্যে কোন ভুল নেই। চিকিৎসকদের হাতের লেখা রোগীরা বুঝতে পারেন না। তাই স্ট্যাম্প লাগিয়ে চিকিৎসা করা যেতে পারে।’’ শর্মিষ্ঠাদেবীর সাফাই, ‘‘এই পদ্ধতি বেআইনি কিনা আমার জানা নেই। তবে এতে তাড়াতাড়ি রোগী দেখা যায়।’’ তাঁর দাবি, তিনি যখন কলকাতার হাসপাতালে শিক্ষানবিশি করতেন এ ভাবেই চিকিৎসা করতেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy